সিরিয়ার দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ অবসানে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে আলোচনা করা প্রয়োজন—এ কথা বলে তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), ফ্রান্স, তুরস্ক ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো কেরির মন্তব্যের সমালোচনায় সরব হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, সিরিয়া নিয়ে কোনো আলোচনায় বাশারের স্থান নেই। খবর এএফপি ও রয়টার্সের।
সিবিএস নিউজে গত রোববার সম্প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সিরিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে বাশারের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এরপর গুঞ্জন ওঠে, সিরিয়া প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি বদলাচ্ছে।
কেরির মন্তব্যে ব্যথিত কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স গত সোমবার বলেন, ‘অবশ্যই হয়েছি। (বাশার) হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। তিনি যত দিন ক্ষমতায় থাকবেন, তত দিন সিরিয়ায় কোনো রাজনৈতিক সমাধান হবে না। এটা কেরিও জানেন।’
একই মন্তব্য করেছে সিরিয়ার প্রতিবেশী দেশ তুরস্কও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু বলেন, ‘আসাদের সঙ্গে আলোচনার কী আছে? যে সরকার দুই লাখের বেশি মানুষ হত্যা করেছে, তাদের সঙ্গে আপনি আলোচনা করতে চাইছেন?’
পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোও কেরির মন্তব্যে হতাশ। উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিলের (জিসিসি) কুয়েতি উপদেষ্টা সামি আল-ফারাজ বলেন, আসাদ যে এখনো দৃশ্যপটে রয়েছেন, তাঁকে সবাই একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিয়েছে। কেরি যদি সেই অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে থাকেন, তাহলে ঠিক আছে। তবে তিনি সংলাপের পরও আসাদের থেকে যাওয়ার বিষয়টি বুঝিয়ে থাকলে তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জন কেরির মন্তব্যকে ভালো চোখে দেখছে না ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। তবে এটা সিরিয়া প্রশ্নে মার্কিন নীতি বদলের ইঙ্গিত বলে মানতে নারাজ তারা। ইইউর পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান ফেডারিকা মঘারিনি বলেছেন, সিরীয় সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধান অর্জন করা যাবে কেবল ‘সিরীয়দের নেতৃত্বাধীন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই’। তার অর্থ, বাশার সরকারের প্রধিনিধিরাও সংলাপে থাকবেন। ব্রাসেলসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে মঘারিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরি এই দৃষ্টিকোণ থেকেই কথাগুলো বলেছেন।…আমি মনে করি না যে তিনি বাশার আসাদের কথাই বলেছেন। মূলত কেরি বাশার সরকারের কথা বলেছেন।’
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরা ফ্যাবিয়াসের ভাষ্যও তাই। ফ্যাবিয়াস জানিয়েছেন, কেরি তাঁকে ফোন করে আশ্বস্ত করেছেন, সিরিয়া প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান বদলায়নি। সিরিয়া প্রশ্নে ফ্রান্সের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে জানিয়ে ফ্যাবিয়াস বলেন, রাজনৈতিক পালাবদলই সমাধান, যেখানে সরকার ও সরকারবিরোধী উভয়েরই অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তবে অবশ্যই বাশার সেখানে থাকতে পারবেন না।
সমালোচনার মুখে যুক্তরাষ্ট্রও এখন বলছে, শান্তি আলোচনায় বাশারের কোনো জায়গা নেই। কেরির মন্তব্যের ব্যাখ্যা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি, শান্তি-প্রক্রিয়ায় বাশার সরকারের প্রতিনিধিদের থাকার দরকার আছে। তবে আসাদ নিজেই থাকবেন, সেটা কখনোই হবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কেরিও তা বলতে চাননি।’