বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে সুখের কারণটা সবার জানা, প্রথমবার বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্নপূরণ। আর দুঃখের কারণ হচ্ছে বিতর্কিত আম্পয়ারিংয়ে শেষ আট থেকে ছিটকে পড়া। সুখ-দুঃখের পর্ব সেখানেই শেষ হয়ে যায়নি। ফাইনালে এসে আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করছেন যে, ফাইনালেও থাকতে দেয়া হয়নি লাল-সবুজের দেশকে।
বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট।
বিশ্বকাপ ট্রফি বিজয়ী অধিনায়কের হাতে তারই তুলে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইসিসির গঠনতন্ত্র লংঘন করে মুস্তফা কামালের এই অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। আর এর পেছনে কলকাঠি নেড়েছেন দুর্নীতির দায়ে উচ্চ আদালতের রায়ে নিজ দেশের বোর্ড প্রধানের পদ থেকে বিতাড়িত হওয়া সেই শ্রীনিবাসন। ক্লার্কদের হাতে ট্রফি তুলে দেয়ার সময় মেলবোর্নের ৯৩ হাজার দর্শকের দয়োধ্বনি শুনতে হয় যাকে।
অপর দিকে সোমবার ভারতীয় মিডিয়ায় এই জল্পনা শুরু হয়েছে যে, এ ঘটনার জেরে আগামী জুনে ভারতীয় ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস অবশ্য সেরকম সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, দুদেশের বোর্ড এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়।
তাই এ ধরনের কিছু হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, ‘ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফর করার কথা জুনে। কিন্তু দু’দেশের প্রশাসনিক সম্পর্ক যেরকম তিক্ততার স্তরে পৌঁছেছে, তাতে সফরটা হবে কিনা, এই মুহূর্তে তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান এবং সাবেক সভাপতি মুস্তফা কামাল দু’জনই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছেন। জানা গেছে, আগামীকাল বুধবার তারা দেশে ফিরবেন বলে।
আর বিমানবন্দরে কামাল সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক ঘটনাবলী নিয়ে মিডিয়ার মুখোমুখি হবেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ মনে করেন, বিশ্বকাপ ফাইনালে আইসিসি প্রেসিডেন্টকে ট্রফি প্রদান করতে না দিয়ে শ্রীনি কার্যত লাল-সবুজের দেশকে অপমান করেছেন। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির এক পরিচালক বলেন, ‘কামাল ভাই ভুল করেছেন। তার উচিত ছিল পদত্যাগ করা।’
মুস্তফা কামালের অপরাধ হচ্ছে, তিনি বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালে প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিংয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়েছিলেন। যদিও সেসময় কামাল বলেছিলেন, তার এই ভাবাবেগ প্রকাশ একজন টাইগার সমর্থক হিসেবে। কিন্তু শ্রীনিবাসনের ভাষায় তা আইসিসির আচরণবিধির লংঘন।
গত রোববার মেলবোর্নে বিশ্বকাপ ফাইনালের দিন কামাল একা বসেছিলেন। আর শ্রীনি দলবল নিয়ে আইসিসির ভিআইপি গ্যালারিতে। শ্রীনিকে ট্রফি তুলে দিতে দেখে অপমানিত কামাল বেরিয়ে যান। লক্ষণীয় যে, মেলবোর্নের ৯৩ হাজার দর্শক শ্রীনির নাম ঘোষণা হতেই দুয়োধ্বনি দিতে শুরু করে। নিজ দেশে নিন্দিত শ্রীনি বিদেশেও ধিকৃত!
কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকার খবর, শ্রীনি আগের দিন আইসিসির কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে সভা করেন। আর সেখানেই মুস্তফা কামালকে বলা হয়, আইসিসির কোড অব কন্ডাক্ট ভাঙার অভিযোগে আপনাকে আমরা ট্রফিটা দিতে দেব না।
এসময় মুস্তফা কামাল প্রশ্ন করেন, মিস্টার শ্রীনিবাসন, আইসিসির প্রেসিডেন্ট কে? শ্রীনির উত্তর, আপনি। কাল আইসিসির প্রেসিডেন্ট কে থাকবেন? শ্রীনি এবারও বললেন, আপনি। কামালের পাল্টা প্রশ্ন, যদি তাই হয়, তাহলে আমি বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দেব না কেন? শ্রীনি তখন বলেন, উত্তরটা আপনাকে আগেই দেয়া হয়েছে।
মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘দেশে ফিরে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলব। আমার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব। তারপর দেখছি।’ আইসিসির বিরুদ্ধে তিনি মামলা করতে পারেন।
‘তিন মোড়লের’ ধারণা যার মস্তিষ্কপ্রসূত বলে মনে করা হয়, সেই শ্রীনি নিজ দেশের বোর্ড থেকে বিতর্কিত হয়ে এখন আইসিসিতে ‘দাদাগিরির’ ভূমিকায়।