জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সিনিয়রদের র্যাগিংয়ের (শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন) শিকার হয়ে প্রথম বর্ষের দুই শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে যায় এবং তাদের পরে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সোমবার ৩০ মার্চ এই ঘটনা ঘটে। একজনের নাম মো: ইশতিয়াক আহমেদ। তিনি ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আ ফ ম কামাল উদ্দিন হলের আবাসিক ছাত্র ইশতিয়াক। অপর শিক্ষার্থীর নাম মাসুদ রানা। তিনিও একই ব্যাচের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি থাকেন আল বেরুণী হলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীর জানায়, রোববার ২৯ মার্চ গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-বেরুনী (মূল ভবনে) হলে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের র্যাগ দেওয়া হয়। এতে অনেকেই রাতে ঘুমাতে পারেননি। এরপর ৩০ মার্চ সকালে ক্লাস করতে যান বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। বেলা ১১টার দিকে সেখানেও তাঁকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের কবলে পড়তে হয়। র্যাগিং চলাকালে একপর্যায়ে তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর পাঠানো হয় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
একইভাবে ৩০ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভূগোল ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের কারণে অচেতন হয়ে পড়েন প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক খান। বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকেও এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. শ্যামল কুমার শীল সাংবাদিকদের জানান, অতিরিক্ত মানসিক নির্যাতনের কারণে দুইজন শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েন। একাধিকবার বমিও করেছেন তারা। গুরুতর হওয়ায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়েছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এই বিষয়ে প্রোক্টরের সাথে কথা বলতে বলেন।
অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম SwadeshNews24.comকে বলেন, সব বিভাগে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, র্যাগিং-এর ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স দেখাবে। জাবি হল, বিভাগ অথবা ক্যাম্পাসে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটলে এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকলে আজীবন বহিষ্কারসহ কঠোর শাস্তির বিধান করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক ফারজানা।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোক্টর তপন কুমার সাহা জানান, ইশতিয়াক হাসান আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। তিনি এখন তার পরিবারের সাথে আছেন। মোবাইল নাম্বার বন্ধ থাকার কারণে কারণে ইশতিয়াকের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে, মাসুদ রানা থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুণী হলে। আল বেরুণী হলের প্রভোস্ট প্রফেসর জসিম SwadeshNews24.comকে জানান, তিনি মাসুদের সাথে আজকেও দেখা করেছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। ক্লাসের চাপ এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকার কারণেই তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ২০০৯ সালের পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং-এর মাত্রা কমে এসেছে। কিন্তু সব শিক্ষার্থীর মাঝে রয়ে গেছে সেই একই ভয়। র্যাগিং-কে তিনি মনে করেন বড় ভাইদের সাথে পরিচিত হবার একটি মাধ্যম। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে র্যাগিং-এর তো মাত্রা থাকে? তিনি তার উত্তরে জানিয়েছেন অনেকগুলো বড় ভাই-বোন একসাথে থাকে সবাই একসাথে প্রশ্ন করে আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই নতুন ভর্তি হওয়া ছোট ভাইয়েরা নার্ভাস হয়ে পরে।
তিনি দাবি করেন, ভয় থেকেই নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পরে। র্যাগিং-এর পরে বড় ভাইয়েরা মিষ্টি খাওয়ায় বলেও জানান তিনি।