এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বুধবার শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুরু হয়েছে। প্রথমদিন এইচএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, আলিমে কুরআন মজিদ এবং কারিগরিতে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা ছিল। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা জানিয়েছে, বাংলার অবজেকটিভ প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন হয়েছে। এ কারণে অনেকেরই পরীক্ষা আশানুরূপ হয়নি।
পরীক্ষায় প্রথমদিনে ৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৪১ জনের অংশ নেয়ার কথা ছিল। তবে এদিন ১০ হাজার ১৯৬ জন অনুপস্থিত ছিল। এবার কেবল গাজীপুরেরই ৫ কারাগারে ২৪ বন্দি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
যুগান্তর প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন ও আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় সাবকমিটির তথ্য অনুযায়ী, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে সারা দেশে ২৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে। এতে সহায়তা ও দায়িত্বে অবহেলার দায়ে ৫ শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়। চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ভুয়া প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষা দিতে এলে এক পরীক্ষার্থীকে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
তবে পরীক্ষাকালে কোথাও কোনো অঘটনের ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন কেন্দ্রে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ ও বিজিবিসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল। এর বাইরে শিক্ষক, প্রশাসন ও বোর্ডের ভিজিলেন্স টিমও কাজ করে।
পরীক্ষাকে ঘিরে একশ্রেণীর কলেজের দুর্নীতি এবারও শুরু হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন এলাকার বেশক’টি বাণিজ্যিক কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রদের নকলে সহায়তা করছে। অবজেকটিভ প্রশ্নের উত্তর সেটওয়ারি চিরকুটে লিখে ছাত্রদের হাতে তুলে দেয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে বরগুনার হলতা ডৌয়াতলা সমবায় বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। ডৌয়াতলা ওয়াজেদ আলী খান মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওই কলেজের একাধিক প্রভাষক নকলে সহায়তা করেছেন। কেন্দ্রটির অভ্যন্তরে বহিরাগতদেরও আনাগোনা ছিল। যুগান্তরের বামনা প্রতিনিধি জানান, নকলের বিষয় অস্বীকার করলেও কেন্দ্রে বহিরাগতের প্রবেশের বিষয়টি স্বীকার করেছেন মহাবিদ্যালয়টির অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম টুকু।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়ও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এবারও এ ক্ষেত্রে ডেমরার তিনটি কলেজ এগিয়ে। এর মধ্যে দুটি কলেজের মালিক একই ব্যক্তি। গুলশান ঠিকানায় অবস্থিত কিন্তু ডজনখানেক অবৈধ ক্যাম্পাস নিয়ে পরিচালিত আরেকটি কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষকরা নকলে সহায়তা করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু এ বিষয়ে ওই কেন্দ্র এবং ঢাকা বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ রয়েছেন।
পরীক্ষাকালে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে কিছু সময়ের জন্য কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষা কেন্দ্রের বিদ্যুৎ চলে যায় এবং কিছু সময়ের জন্য অন্ধকার নেমে আসে। এতে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বিঘিœত হয়। কিন্তু এর জন্য শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা হয়নি বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর ড. শহীদুল্লাহ কলেজে। ওই কলেজে আসন পড়েছিল শেখ বোরহানুদ্দীন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজের ছাত্রছাত্রীদের। নামপ্রকাশ না করে কয়েকজন পরীক্ষার্থী অভিযোগ করে, প্রায় ৫০ মিনিট তারা অন্ধকারে ডুবেছিল। এর মধ্যে ৩০ মিনিটই তারা লিখতে পারেনি। কিন্তু এই সময়টা পরে দেয়া হয়নি। ফলে তাদের সবারই পরীক্ষা খারাপ হয়েছে। বোরহানুদ্দীন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুর রহমান বলেন, আমাদের ছাত্ররা সন্তানতুল্য। এদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ দুঃখজনক।
ঝিনাইদহ থেকে মিজানুর রহমান জানান, মাহতাবউদ্দিন ডিগ্রি কলেজে অন্তত ৩৫ পরীক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। এ কারণে তারা পরীক্ষাও দিতে পারেনি। অভিযোগ পাওয়া গেছে, কলেজ থেকে এসব ছাত্রছাত্রীর ছবি ছাড়াই কাগজপত্র পাঠিয়ে দেয়। এ কারণে প্রবেশপত্র নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। যশোর বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মজিদ এ ব্যাপারে বলেন, ২-৩শ’ ছাত্রছাত্রীর ছবি পাঠায়নি কলেজ। তারপরও স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের অনুরোধে পরে কাগজপত্র ঠিক করে প্রবেশপত্র দেয়া হয়। কিন্তু যারা পাননি, তার জন্য দায়ী কলেজ অধ্যক্ষ। এ ব্যাপারে অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো তথ্য জানাতে রাজি হননি। তবে কলেজের প্রধান সহকারী রজব আলী বলেন, ৫ জন ছাত্র পরীক্ষা দিতে পারেনি।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাবকমিটি জানিয়েছে, প্রথমদিন যে ২৬ শিক্ষার্থী বহিষ্কার হয়েছে তাদের মধ্যে রাজশাহী, কুমিল্লা, যশোর, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর ও সিলেট বোর্ডে ১ জন করে, বরিশালে ৩ জন, মাদ্রাসায় ৭ জন ও কারিগরিতে ১০ জন রয়েছে। বহিষ্কৃত শিক্ষকদের মধ্যে মাদ্রাসা বোর্ডে ২ জন ও বরিশালে ২ জন রয়েছে। ভোলা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এই সংখ্যা ৩। জেলার দৌলতখান কলেজে ২ জন ও বাংলাবাজার ফাতেমা খানম কলেজ কেন্দ্রে ১ জন রয়েছে।
কারাগারে পরীক্ষার্থী ২৪ : গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আমিনুল ইসলাম জানান, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ তে ১১ জন বন্দি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৮ জন আলিম ও ৩ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। পার্ট-১ কারাগার থেকে একজন পরীক্ষার্থী আলিম পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে ৬ জন আলিম এবং এইচএসসিতে ৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র সুপার মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, কারা কর্তৃপক্ষ ও আদালতের অনুমতি নিয়ে তার কারাগার থেকে এবার আটজন বন্দি আলিম এবং দু’জন এইচএসসি পরীক্ষায় বসেছেন। আর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে নয়জন এইচএসসি এবং দু’জন বন্দি আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে বলে জেলার মো. জান্নাতুল ফরহাদ জানান। গাজীপুর জেলা কারাগারের জেলার সুভাস ঘোষ জানান, তার কারাগারে একজন এইচএসসি এবং একজন ডিআইবিএস (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ) পরীক্ষা দিচ্ছে।
কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দি শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ কারাগারের ‘হলরুমে’ পরীক্ষায় বসেছে। তাদের জন্য নির্ধারিত কেন্দ্র থেকে কক্ষ পরিদর্শক, প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সরবরাহ করা হয়।