কালবৈশাখীর তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। ১৫ থেকে ২০ মিনিটে রাজধানী ঢাকায় শ’খানেক বিলবোর্ড উড়ে গেছে। ঝড়ের কবলে পড়ে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে নৌকা ডুবে আবু হানিফ শেখ (৪৫) নামে এক মাঝির মৃত্যু হয়েছে। গাছ ভেঙে পড়েছে হাজার খানেক। ভারী বিলবোর্ডগুলো হঠাৎ যানবাহনের উপরে আছড়ে পড়ায় আটকা পড়েছে অনেক যানবাহন। কোথাও বিদ্যুতের খুঁটি উপরে পড়েছে। আবার কোথাও বিদ্যুতের ছিড়ে পড়ে গেলে অন্ধকার নেমে আসে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ঠ হওয়ায় আতঙ্কে পেয়ে বসে ঢাকাবাসীকে। বাসের ওপর সাইনবোর্ড ও বিলবোর্ড আছড়ে পড়ায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন যাত্রী।
কালবৈশাখীর কারণে শাহবাগ থেকে মতিঝিল পর্যন্ত লেগে যায় দীর্ঘ যানজট। বাস-ট্রাক দাঁড়িয়ে পড়ায় বন্ধ হয়ে যায় রাস্তা। দু:সহ যানজটে ও বাতাসের তাণ্ডবে আতঙ্ক দেখা দেয় যাত্রীদের মধ্যে। ভয়ে ও আতঙ্কে মহিলা ও শিশুদের চিৎকার করতে শোনা যায়।
আজ শনিবার সন্ধ্যার পর হঠাৎ কালো মেঘে ঢেকে যায় আকাশ। শুরু হয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। মুহূর্তেই ধুলাবালিতে ছেয়ে যায় রাজধানী ঢাকা। একই সাথে শুরু হয় বর্ষণ। ঝড়ো হাওয়া থেকে নিরাপদ থাকতে শুরু হয়ে যায় যানবাহনের দ্রুত চলাচল। সবাই দ্রুত বাসা-বাড়িতে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গেলে যানযটে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারসেকশনগুলো। এর মধ্যেই কালবৈশাখী উড়িয়ে নিতে যেতে থাকে বিলবোর্ড ও সাইনবোর্ডগুলো। একই সাথে গাছের ভাঙা ডাল ভেঙে পড়তে থাকে গাড়ির ওপর।
কালবৈশাখীর সাথে ভারী বর্ষণও হয় বিভিন্ন স্থানে। প্রস্তুতি না থাকায় রাস্তার নিচে যেসব বাড়ি রয়েছে এদের নিচতলা হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ে। এমনকি তীর্যকভাবে বৃষ্টি পড়ায় উপরের তলার বারান্দাতেও পানি জমে গেছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, এটা কালবৈশাখীর মাস। চলতি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী হতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। কালবৈশাখী ঠিক কখন হবে তা সঠিকভাবে প্রচার করা সম্ভব নয়। এজন্য বাতাসের গতিবিধি খেয়াল করে রাস্তায় চলাচল করতে হবে। ঝড় হলে বাইরে না বেরুনোই উত্তম। যেকোনো সময় গাছের ডাল ভেঙে মাথায় পড়তে পারে। রাজধানী ঢাকায় হাজার হাজার বিলবোর্ড রয়েছে। এখানে অনেক নড়বড়ে বিলবোর্ড থাকতেও পারে। এ কারণে ঢাকায় জোরে বাতাস প্রবাহিত হলে এটা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত পথচারী অথবা যানবাহনের চালকদের উচিৎ অপেক্ষা করা।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সুত্র জানায়, আজ শনিবার সন্ধ্যার পর কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ওই সময় হানিফ শেখ নৌকা নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীর কেরানীগঞ্জ এলাকার দিকে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ঝড়ের প্রচণ্ড বাতাস তার নৌকাটিকে পাশ দিয়ে যাওয়া একটি লঞ্চের উপর আচড়ে ফেলে। এতে নৌকাসহ হানিফ শেখ পানিতে ঢুবে যান। পরে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মিটফোর্ড হাসপাতাল ও পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাত সোয়া ৮টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। নিহত আবু হানিফ শেখ সদরঘাট এলাকার নৌকার মাঝি ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের নাজিরপুরে।
এদিকে সন্ধ্যার পর কালবৈশাখী ঝড়ের সময় শাহবাগ মোড়ে রিক্সার মধ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন বায়েজিদ (৫০) ও তারা মিয়া (৫০)। তাদের বহন করা রিক্সাটি রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে চালক একটি দোকানের সামনে ছিলেন। এসময় ঝড়োবাতাসে পাশের একটি বিলবোর্ড ভেঙে রিক্সার উপর পড়লে রিক্সার ভেতরে থাকা ওই দুজন আহত হন।
প্রায় একই সময় নিলক্ষেত ও ধোলাইপাড় এলাকায় বিলবোর্ড ও টিনের আঘাতে আহত হন জাকারিয়া (৩০) ও আবুল হোসেন (৩০) নামে অপর দুজন। আহতদেরকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে ঝড় চলাকালীন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে আহত হন রিক্সা চালক পলাশ (২০)। তিনি বলেন, ঝড় চলাকালীন তিনি শহীদ মিনারের সামনে আশ্রয় নেন। এমন সময় কিছু একটা বিস্ফোরিত হয়ে তার শরীরে লাগে। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পলাশের দাবি বিস্ফোরিত বস্তুটি ককটেল ছিলো।