নড়াইলের ৯ লক্ষ জনগণের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতালে জনবল সংকটে চিকিৎসা সেবা ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সামান্য কিছু সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসলে রোগীদের ডাক্তার অভাবে পাঠানো হচ্ছে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর, খুলনা, মাগুরা অথবা রাজধানী ঢাকায়। এতে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
হাসপাতালের বিভিন রোগীদের মাঝে খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে মোট বেড রয়েছে ১০০টি। রোগীর ভিড়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১৫০ জন রোগী বেড অভাবে মেঝেতে অবস্থান করে। যারা মেঝেতে থাকে তারা কেউ নিয়মিত হাসপাতাল ে কে সরবরাহকৃত খাবার পায়না।
পুরুষ ওয়ার্ডের আলামিন নামে এক রোগী জানায়, আমি ৩ দিন আগে এখানে ভর্তি হয়েছি। আমাকে মাঝে মাঝে খেতে দিচ্ছে। তবে এখনও একটিও ঔষধ দেয়নি।
দূর থেকে আসা রহিমা নামের একজন রোগী জানান, তার কাছে কেউ নেই অথচ ৩ দিনেও তাকে খাবার দেয়া হয়নি, গতকাল সে অন্য রোগীর কাছ থেকে খাবার চেয়ে খেয়েছে।
সবার জন্য মৌলিক এই সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধ পরিকর হলে ও ৯ লক্ষাধিক লোকের জন্য নড়াইলে নেই স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চয়তা। ৫০ শয্যার জেলার একমাত্র আধুনিক সদর হাসপাতালটি ২০০৭ সালে ১০০ বেডে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়া হলে ও আজও তা চলছে ৫০ শয্যার ঘাটতি লোকবল দিয়ে। অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন হলেও অন্যদিকগুলোর কোন উন্নয়ন হয়নি। হাসপাতালের ভিতরে একটি চমৎকার শহিদ মিনার তৈরি হলে ও বাইরের লোকদের জন্য তৈরি করা বাথরুমটির খোঁজ নেয় না কেউ। ভিতরের বাথরুমের গন্ধে রোগীরা বেডে থাকতে না পেরে সবসময় ওয়ার্ডে জানালা দরজা বন্ধ করে রাখেন। হাসপাতালের ময়লা আর আবর্জনায় ভরা চারিদিকের ড্রেনগুলোতে মশার উৎপাত বেড়েই চলেছে আশংকাজনকহারে।
লোহাগড়া আর কালিয়ার স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেখানকার অবস্থা একই রকম বলে স্বীকার করলেন জেলার সিভিল সার্জন।
আবাসিক মেডিকেল অফিসার এর তথ্য অনুযায়ী ১’শ শয্যার হাসাপাতালে বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক থাকার কথা অন্তত ৩৯ জন। কিন্তু সেখানে আছেন মাত্র ১১ জন, তাও আবার নিয়মিত নন। কোন কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহে ২ দিন মাত্র রোগী দেখেন। এছাড়া ৭৮ জন নার্সের মধ্যে আছে ৫৫ জন, আর টেকনিশিয়ান এ্য্যাসিস্ট্যান্ট সহ ৪র্থ শ্রেণির অন্তত ২০৮ জন কর্মচারীর স্থলে আছে মাত্র ৯২ জন।
প্রতিদিন হাজার হাজার লোক জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসলে লাইনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয় হতভাগ্য রোগীদের। ৩/৪ ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে ও চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যা কম নয়। অধিকাংশ ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ থাকে বেশীরভাগ সময়ে। আবার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় বেশীরভাগ রোগীকে স্থানান্তর করে দেয়া হয় যশোর অথবা খুলনার হাসপাতালে।
হাসপাতালের প্যাথলজিতে কাজ করেন মাত্র ১ জন। পরিচিত রোগী ছাড়া কেউই সেবা পায়না হাসপাতালের প্যাথলজিতে। হাসপাতালে ভর্তি হয়েও বাইরে থেকে পরীক্ষা করে আসা রোগীর সংখ্যাই বেশী অথচ পরীক্ষা করার জন্য প্রযোজনীয় সকল যন্ত্রপাতি রয়েছে এ হাসপাতালে। প্যাথলজি আবার বেলা ১২ টার পরে বন্ধ করে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। অভিযোগ আছে এই হাসপাতালের টেকনিশিয়ানরাই বাইরের প্যাথলজি গুলোতে কাজ করেন ।
হাসপাতালের আধুনিক যন্ত্রপাতির প্যাথলজি বেলা ১২টার পরে বন্ধ হয়ে গেলেও ডাক্তার, রোগী আর হাসপালের টেকনিক্যাল কর্মচারীদের উপস্থিতিতে জমজমাট বিভিন্ন বেসরকারী প্যাথলজী সেন্টারগুলো। রোগীদের অর্থ বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের স্বার্থটাই কেবল দেখছেন এসব প্যাথলজীতে কাজ করা সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ানরা।
১০০ শয্যার মধ্যে কিছু বেড খালি রাখা হয় ,অসাধু কর্মচারীরা সুযোগ বুঝে দুর থেকে আসা রোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে বেডে জায়গা করে দেন তাদের। প্রতিদিন অন্তত ১০০ রোগীকে হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি হওয়া এ সকল রোগীদের যেন ভোগান্তির শেষ নেই ।
স্বাস্থ্য সেবার মান নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর হলে ও সরকারি দলের ছত্রছায়ায় কিছু ডাক্তার নিজেদের স্বার্থে নার্স ও কর্মচারীদের ব্যবহার করে নিজেদের গন্ডি তৈরি করে অসহায় রোগীদের ডাক্তাদের নিজস্ব ক্লিনিকে টেনে নিচ্ছেন আর জমি বিক্রি করে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। আর এভাবে সর্বশান্ত হচ্ছে গরীব মানুষেরা।
সচেতন মানুষ মনে করেন, ডাক্তারদের সেবা দেবার মানসিকতা গড়ে না উঠলে রাজনৈতিক স্বার্থে চিকিৎসকদের ব্যবহার বন্ধ না হলে কোনদিন ও সাধারণ মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবা সহজ হবে না।
নড়াইলের সচেতন মানুষের দাবি দ্রূত এই হাসপাতলের প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিয়ে নড়াইলের ৯ লক্ষ জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হোক ।