মানবতা বিরোধী অপরাধের অপরাধী ও জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কবে কার্যকর হবে জাতি তা দেখার অপেক্ষা করছেন। তার ফাঁসি কার্যকর করতে সব ধরণের আইনি প্রক্রিয়ার প্রস্তুতিই সম্পন্ন করা হয়েছে ইতিমধ্যে। ৬ জল্লাদও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এখন শুধু প্রাণ ভিক্ষা চাইবেন কিনা এর অপেক্ষা করা হচ্ছে।শুক্রবার সকালে কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্ত নিবেন কিনা জানতে কারাগারে যান দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট। তবে তারা কারাগার থেকে দেখা করে বের হবার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি। ম্যাজিস্ট্যাট কারাগারের ফটক দিয়ে বের হয়ে অপেক্ষমান একটি গাড়ীতে উঠে চলে যান।এদিকে, জেল কোডের ৯৯১ (এ) এবং ৬ ধারায় মৃত্যুপরোয়ানা শুনানোর পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত যে কেউ প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে ফাঁসিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার রিভিউয়ের রায়ে সুপ্রিমকোর্ট বলে দিয়েছে মানবতা বিরোধী অপরাধে দন্ডপ্রাপ্তদের দন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে জেল কোড প্রযোজ্য হবে না।অর্থাৎ পরোয়ানা শুনানোর ৭ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করার বিষয়টি কামারুজ্জামানের ক্ষেত্রে ধরা হচ্ছে না (এখানে শুধু সাত দিনের বিষয়টি নজরে রাখা দরকার)।এ সংক্রান্ত আপিল বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মৃত্যুদন্ডের রায়ের প্রেক্ষিতে মৃত্যুপরোয়ানা জারির আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছালে কারা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট দন্ডপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ দেবেন। একইসঙ্গে তাকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দিতে হবে। যদি কোন রিভিউ অথবা প্রাণ ভিক্ষার আবেদন দায়ের করা হয় ওই আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা যাবে না। অপরদিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের ২০ ধারায় বলা আছে, এই ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী অপরাধীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর কখন হবে তার সময় সরকার নির্ধারণ করবে।গত বুধবার কামারুজ্জানকে তার মৃত্যু পরোয়ানা জানিয়েছেন একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। এ সময় তিনি তার আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানিয়েছেন। পরে আইনজীবীরা দেখা করে জানান যে প্রাণভিক্ষার বিষয়ে কামারুজ্জামান নিজেই সিদ্ধান্ত দেবেন।আর বৃহস্পতিবার কামারুজ্জামান জানান যে যৌক্তিক সময়ে তিনি তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যৌক্তিক সময় মানে সাত দিন নয়।এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছেন, আপিল বিভাগের রায়ের নির্দেশনা ও জেলকোড মেনেই যথাযথ সময়ে ফাঁসি কার্যকর করা হবে।প্রশ্ন উঠেছে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় বাস্তবায়নে তো এত সময় নেয়া হয়নি। এখন কেনো সময় নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের নীতিনির্ধারক নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টের অধীনে মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার হলেও সংশ্লিষ্ট আসামি-কয়েদির থাকা-খাওয়া, পোশাক, সার্বিক কারাজীবন ভোগ করতে হচ্ছে বিদ্যমান কারা বিধি মেনেই। সে কারণে অঘোষিত হলেও সরকার বিতর্ক এড়াতেই একটু সময় নিতে চাইছে। বিদ্যমান জাতীয় রাজনৈতিক পরিবেশ পরিস্থিতিও মাথায় রাখছে সরকার। যেহেতু এই ফাঁসি কার্যকর করার ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় নেই, সেহেতু সরকারের ক্ষমতাই এক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ। তাই সরকার তার সুবিধাজনক সময়েই ফাঁসি কার্যকর করতে চায়।কারা সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে আইজি প্রিজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন, ডিআইজি প্রিজন গোলাম হায়দার, সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলীসহ কারা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কারাগারে আসেন। তারা কামারুজ্জামানের রায় কার্যকরের বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন।অন্যদিকে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার মঞ্চটিতে বৃহস্পতিবার রাতে আলো লাগানো হয়েছে। উপরে সাদা কাপড়ের সামিয়ানা এবং বৃষ্টি হলে ত্রিপল লাগানোরও ব্যব¯’া করেছে কারা কর্তৃপক্ষ। কারাগারের কর্মকর্তাগণ গতরাতে এই বিষয়গুলো তদারকি করেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন তিনজন জল্লাদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করবে তা নির্ধারণ করেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ৫ জনের একটি দলকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।