1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
দূর্ধষ সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ফাঁসির আদেশে সাধারণ মানুষের স্বস্তি - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যা বললেন নিপুণ তালিকা দিতে না পারলে ফখরুলকে ক্ষমা চাইতে বললেন ওবায়দুল কাদের প্রকাশিত হলো দিদারের ‘বৈশাখ এলো রে এলো বৈশাখ’ আ.লীগের মতো ককটেল পার্টিতে বিশ্বাসী নয় বিএনপি: রিজভী হৃদয় খানের সঙ্গে জুটি ন্যান্সিকন্যা রোদেলার শাকিব ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষকে ভাবতে পারি না: বুবলী শাকিবের এমন সময় আমাদেরও ছিল: ওমর সানী কত টাকা সালামি পেলেন জায়েদ খান, দিতে হলো কত লাখ?

দূর্ধষ সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর ফাঁসির আদেশে সাধারণ মানুষের স্বস্তি

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫
  • ৩২১ Time View
rosu kha

দুর্ধষ সিরিয়াল কিলার হিসেবে কুখ্যাত রসু

দুর্ধষ সিরিয়াল কিলার হিসেবে কুখ্যাত রসু খাঁকে গতকাল (২২ এপ্রিল ২০১৫) বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ অরুনাভ চক্রবর্তী একটি হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আদালত তার রায়ে মামলা তদন্তে অবহেলার জন্যে তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে জেলা পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মদনা গ্রামের ছিঁচকে চোর হিসেবে পরিচিত রসু খাঁ ফরিদগঞ্জ উপজেলার একটি মসজিদের ফ্যান চুরির ঘটনায় ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর ওই থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এই চুরির মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে জানায়, সে ইতিপূর্বে ১১ জন নারীকে ধর্ষণ করে হত্যা করেছে। সাধারণত ঢাকার সাভার ও গাজীপুরের টঙ্গি এলাকা থেকে মেয়েদের এনে ধর্ষণ করে শ্বাসরোধ করে তাদের হত্যা করে লাশ নদী বা খালে ফেলে দিতো। হত্যার শিকার ১১ জন নারীর মধ্যে পারভীন আক্তার ছিলেন ফরিদগঞ্জ এলাকার পালতালুক গ্রামের। রসু খাঁ তার নিজের জবানবন্দিতে স্বীকার করেছে, সে নারীদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে চাঁদপুর নিয়ে আসতো এবং অজপাড়াগাঁয়ে নিয়ে তাদের হত্যা করতো। টঙ্গিতে গার্মেন্টস্ কর্মী পেয়ারা বেগমের সাথে পরকীয়া করতে যেয়ে ধরা পড়ে মার খেলে সে শপথ নিয়েছিল, ১০১ জন নারীকে হত্যা করে তারপর মাজারে গিয়ে অবস্থান নেবে।
পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর রসু খাঁর বিরুদ্ধে মোট ১০ টি মামলা দায়ের করা হয়। এসব মামলা বিচারের জন্য চট্টগ্রামের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর পর সেখানে একটি মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে আদালত তাকে খালাস প্রদান করে। পরে বাদ বাকি সব মামলা বিচারের জন্য পুনরায় চাঁদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। সে সব মামলার মধ্যে বুধবার খুলনা জেলার দৌলতপুর উপজেলার কলমচর গ্রামের কথিত গার্মেন্টস্ কর্মী শাহিদা আক্তার হত্যা ও ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। এ মামলায় মোট ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ মামলাটি প্রথম দায়ের করা হয়েছিল চাঁদপুর সদর মডেল থানায় ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর, যার ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়। রসু খাঁ ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করা হয়। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন চাঁদপুর সদর থানার তৎকালীন এসআই নজরুল ইসলাম। ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর চাঁদপুর সদর উপজেলার সোবহানপুর গ্রামের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে জনৈক আবিদ মালের বাড়ির পাশ থেকে শাহিদার মৃতদেহ হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। এ সময় আনুমানিক ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণীর পরনে লাল শাড়ি, লাল পেটিকোট ও লাল বস্নাউজ ছিল। তার হাত ও পা পেছনের দিক থেকে কালো বোরখা দিয়ে বাঁধা ছিল। ধরা পড়ার পর রসু খাঁ বিচার বিভাগীয় তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট আঃ রহমানের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে জানিয়েছিল, শাহিদা পেশায় পতিতা ছিল। তাকে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখিয়ে চাঁদপুরে আবিদ মালের বাড়ির কাছে এনে ধর্ষণের পর পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে। সে আরো জানায়, গভীর রাতে নদী পার করার কথা বলে সে শাহিদার হাত ও পা বেঁধেছিল।
রায় উপলক্ষে গতকাল বুধবার সকাল ৯ টায় রসু খাঁকে কড়া পুলিশ প্রহরায় জেলা ও দায়রা জজ কোর্টেও হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। বেলা ১১ টার দিকে তাকে আদালতে তোলা হয়। সাদা লুঙ্গি. প্রিন্টের সার্ট ও টুপি পরিহিত ক্লিন শেভড রসু খাঁকে এ সময় বেশ ফুরফুরে ও দুশ্চিন্তামুক্ত দেখা যায়। ১১ টা ৪৯ মিনিটে রসু খাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা শাহিদা হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু করেন। প্রায় ১ ঘন্টা রায়ের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে দুপুর ১২ টা ৪৯ মিনিটে তিনি রসু খাঁর বিরুদ্ধে মূল রায় ঘোষণা করেন। আদালত তার রায়ে খুন ও হত্যার ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রসু খাঁকে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩০২ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং দন্ডবিধির ২০১ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৭ বছরের সশ্রম কারাদন্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ১ বছরের কারাদন্ডের আদেশ দেন। আদালত তার দীর্ঘ রায়ে মামলা তদন্তে বিভিন্ন অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণের জন্য জেলা পুলিশকে নির্দেশ দেন। আদালত রায়ে রসু খাঁকে একজন বিকৃত যৌনাচারী, পেশাদার খুনি হিসেবে উল্লেখ করে তার যথোপযুক্ত শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করেন। রায় ঘোষণার পর পরই রসু খাঁকে জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
সরকার পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট সাইয়েদুল ইসলাম বাবু। তিনি মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। অপরদিকে রসু খাঁর পক্ষে রাষ্ট্র নিয়োজিত আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাঈমুল ইসলাম রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানান।
অপর দিকে সিরিয়াল কিলার রসু খাঁর একটি মামলার রায়ে ফাঁসির আদেশে ফরিদগঞ্জে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। বুধবার দুপুরে চাঁদপুরের আদালতে ফাঁসির রায় ঘোষণার পর রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, ছাত্র, রিক্সা চালকসহ প্রায় সব ধরনের মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, মানুষরূপী এই পিচাশের ফাঁসির সংবাদে আমরা আনন্দিত। তারা দ্রুত রসু খাঁর অন্য মামলা গুলোর বিচার সম্পন্ন করে ফাঁসির রায় কার্যকর করার দাবি জানান। তারা বলেন, সমাজ থেকে এসব নরপিচাশ একজনকে বিদায় করতে পারলে অন্যরা সাবধান হবে। একজন রাৈিজনতক নেতা বলেন, সিরিয়াল কিলার রসু খার মতো সমাজে আরো অনেক ঘৃণ্য ব্যক্তি লুকিয়ে রয়েছে। এদের স্বরূপ উন্মোচন করার মাধ্যমে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে হবে।

যেভাবে সিরিয়াল কিলার হলো রসু খাঁ
দরিদ্র কৃষক পরিবারে জন্ম নেয়া আত্মস্বীকৃত এ রশিদ খাঁ ওরফে রসু খাঁ (৪৪)। বাবা আবুল হোসেন ওরফে মনু খাঁ ছিলেন একজন দিনমজুর। ফরিদগঞ্জ থানার সীমানা এলাকায় অবস্থিত মদনা গ্রামের খাঁ বাড়ি তাদের। এ গ্রামটি চাঁদপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত। প্রায় ২০ বছর আগে তার বাবা মারা যান। এতে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে তার পরিবার। কিছুদিন পর বাবার রেখে যাওয়া ৩০/৩৫ শতক জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় প্রতিবেশীদের সাথে। সে দাবি করে, প্রতিপক্ষরা তাকে কারণে অকারণে ‘চোর-চোট্টা’ বলে গালাগাল দিতে থাকে । তবে এলাকাবাসী জানায়, টুকিটাকি চুরিতে সে নিজেও জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বাবার মৃত্যুর ২/৩ বছর পর তার মা কিছু জমি বিক্রি করে ঢাকার টঙ্গীতে বসবাসরত বড় মেয়ে হাফছা বেগমের কাছে চলে যায়। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে রসু খাঁ দ্বিতীয়। অপর ভাই বসু খাঁ নিরুদ্দেশ। ছোট বোন জান্নাত বেগম জর্ডান প্রবাসী। টঙ্গী চলে যাওয়ার পর ভবঘুরে দিন কাটে তার। এক পর্যায়ে ছোটখাটো চুরিদারিতে জড়িয়ে পড়ে সে। গত ২০ বছর আগে সে বিয়ে করে পার্শ্ববর্তী লাড়ুয়া গ্রামের বেপারী বাড়িতে। বিয়ের আগে ঘটক তাকে পাত্রী দেখতে দেয়নি। রসু খাঁ বলে, বাসর ঘরে ঢুকে দেখি বউয়ের ডান চোখ কানা। ২ বছর পর বউ গর্ভবতী হয়। এরপর ঐ বউকে শ্বশুর বাড়ি রেখে শ্যালিকা রীনা বেগমকে নিয়ে চলে যাই টঙ্গী। দ্বিতীয় বিয়ের পর স্ত্রী রীনাকে নিয়ে বসবাস শুরু করে টঙ্গীর নিরসপাড়ায়। সেখানকার বাবু কমিশনারের এলাকায় জনৈক বাবলু মিয়ার বাড়িতে ৫শ’ টাকায় বাসা ভাড়া নেয়। পরে স্ত্রী রীনাকে গার্মেন্টসে চাকুরি করতে দেয়। রসু খাঁ জড়িয়ে পড়ে অপরাধ জগতের সাথে। চুরিদারি করাই ছিল তার প্রধান পেশা। টঙ্গীর বিভিন্ন স্থানসহ মাঝে মধ্যে নিজ এলাকায় এসে চুরিদারি করে আবার টঙ্গী ফিরে যেত।
রসু খাঁ’র বর্ণনা মতে, স্ত্রীর গার্মেন্টস্ চাকুরির সুবাদে বিভিন্ন গার্মেন্টস্ কর্মী মেয়েদের সাথে তার পরিচয় ঘটে। এরই এক পর্যায়ে এক নারী কর্মীর সাথে প্রেম হয় তার। ঐ কর্মী তার সাথে প্রতারণা করে এলাকার অন্য এক ছেলের সাথে প্রেমে জড়ায়। এতে রসু খাঁ বাধ সাধলে ঐ কর্মী তার প্রেমিকের সহযোগিতায় ৫/৬ জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বারা ১টি পাঁচতলা ভবনের ছাদে তুলে বেদম মারধর করে তাকে। সেদিনই সে প্রতিজ্ঞা করে, ১০১ জন নারীকে ধর্ষণ শেষে খুন করবে। সে অনুযায়ী সে নারীদের সাথে প্রেমের ভাব গড়া শুরু করে। এদের মধ্যে গার্মেন্টস্ কর্মীই বেশি। এক পর্যায়ে সে টাকার বিনিময়ে ভাড়াটিয়া খুনি হিসেবেও কাজ করতে থাকে। তার এসব খুনের নিয়মিত কোনো সহযোগী ছিলো না বলে সে জানায়। তবে ২/৩ ঘটনার সাথে ইউনুছ (৩৬) ওরফে হক সাহেব নামের একজন জড়িত ছিলো। প্রত্যেকটি খুনের সময় কোনো না কোনো সহযোগী তার সাথে ছিল। খুনের আগে সে নিজে ধর্ষণ করতো। পরে সুযোগ দিতো সহযোগীদের। তবে তার দ্বারা ধর্ষণ ও খুনের শিকার প্রায় প্রত্যেকটি লাশেরই পরিচয় অজ্ঞাত থাকতো। ফরিদগঞ্জ, পার্শ্ববর্তী হাইমচর উপজেলা ও চাঁদপুর থানার ভেতরে তার হাতে খুন হওয়া লাশগুলোর ১০টিই অজ্ঞাত হিসেবে আঞ্জুমানে খাদেমুল ইনসানের মাধ্যমে দাফন হয়েছে। এসব খুনের ঘটনায় ফরিদগঞ্জ থানায় ৬টি, চাঁদপুর মডেল থানায় ৪টি এবং হাইমচর থানায় একটি খুনের মামলা দায়ের হয়। এর মধ্যে ৮টি মামলারই ফাইনাল রিপোর্ট দেয়া হয়। মাত্র ১টি মামলার চার্জশীট হয়।
রসু সেই মামলার আসামী। কিন্তু পুলিশের খাতায় রসুর মৃত্যু হয়েছে এমনটি উল্লেখ ছিল। ধরা পড়ার পর অনেক মামলাতেই রসু খাঁ আসামী হয়ে যায়। এমন একটি মামলায় গার্মেন্টস্ কর্মী শাহিদা হত্যার দায়ে ২২ ম বুধবার তার ফাঁসির আদেশ হয়।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রসু খাঁ বলে, খুন করা নারীদের কারো নামই সে জানে না। তার দ্বারা খুন-ধর্ষণের শিকার ১১টি লাশই উদ্ধার করা হয় নদী, খাল বা ডোবার পাশ অথবা পানি থেকে। বেশির ভাগ হত্যাকান্ডের আগে অথবা পরে সে ঐ নারীদের হাত ও পা বেঁধে পানিতে ফেলে দিতো। কখনো মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত সে তাদের পানিতে চেপে ধরে রাখতো। কখনো মুখে কাপড় গুঁজে গলা টিপে হত্যা করতো। কোনো গৃহবধূর পারিবারিক বিরোধের ফলে অথবা অন্য কোনো নারী/মেয়েকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে হবে এমনি প্রস্তাব বা সুযোগ পেলেই সে ঐ সুযোগ গ্রহণ করতো। খুনের বিনিময়ে সে টাকাও নিয়েছে। তার এমনি খুনের হাত থেকে তার শালার বউও বাঁচতে পারেনি। গত প্রায় ৭ বছর আগে তার শালা আঃ মান্নান তাকে বলে যে, তার গার্মেন্টস্ কর্মী বউ অন্য ছেলেদের সাথে দৈহিক মেলামেশা করে। এদের মধ্যে একটি হিন্দু ছেলেও আছে। এজন্যে শালার রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। এরপর দুজনে মিলে ফরিদগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে আসার নাম করে ১৯ জুন ২০০৭ তারিখে শালার বউকে ফরিদগঞ্জের ৯নং ইউনিয়নের ভাটিয়ালপুর গ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে একটি হিন্দু বাড়ির কাছে নিয়ে যায়। তারপর দুজনে মিলে ফুসলিয়ে নদীর পাড়ে তাকে ধর্ষণ শেষে মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে হাত-পা বেঁধে নদীর পানিতে চুবিয়ে ও গলা টিপে হত্যা করে। হত্যা শেষে দুজনে ফিরে যায় ঢাকা।
আরেকটি ঘটনায় টঙ্গীর জনৈক বাড়িওয়ালা শাহীন ও সহযোগী ইউনুছের প্ররোচনায় ও সহযোগিতায় এক পতিতাকে টঙ্গী থেকে এনে ফরিদগঞ্জের হাঁসা গ্রামে একইভাবে ধর্ষণ শেষে দু’ পায়ের সাথে দু’ হাত বেঁধে গলা টিপে হত্যা করে খালের পানিতে ফেলে দেয়। ঘটনাটি ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ৯ তারিখ গভীর রাতের।
অপর আরেকটি ঘটনায় টঙ্গী নিরসপাড়ার মানিক নামে রসুর এক মুদি ব্যবসায়ী বন্ধুর বউ মিলে টঙ্গীর এক গার্মেন্টস্ কর্মীকে ফরিদগঞ্জের হাঁসা গ্রামের একটি বিলে এনে ধর্ষণ শেষে একইভাবে হত্যা করে পার্শ্ববর্তী ডোবায় লাশ ফেলে দেয়। এজন্যে বন্ধুর বউ তাকে নগদ ৫ হাজার টাকাও পুরস্কার দেয়। এ হত্যাকান্ডের পেছনে কারণ হিসেবে উল্লেখ করে, বন্ধু মানিক এ গার্মেন্টস্ কর্মীর সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। সে তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেয়। তাদের এ মেলামেশা বন্ধুর বউর কানে গিয়ে পৌঁছে। পরে বন্ধুর বউয়ের অনুরোধে বন্ধুকে রাজি করিয়ে এ কাজ করায় সে। এভাবে কখনো কোনো মেয়ের সাথে নিজে প্রেম করে চাপে পড়ে অথবা ভাড়ায় খেটে একের পর এক খুন করে ১১ নারীকে। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই সে থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলে সে হয়ে ওঠে এক দুর্ধষ কুখ্যাত খুনী। যা এরশাদ সিকদারের নৃশংসতাকেও হার মানায়। প্রবাদ আছে, পাপ তা বাপকেও ছাড়ে না। অথবা দশ দিন চোরের একদিন গোরস্তের। এমনিভাবে ৭ জুলাই ২০০৯ তারিখে তার সর্বশেষ খুনের শিকার তিন সন্তানের জননী পারভিন আক্তারের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই থেমে যেতে হলো তাকে। অবসান হলো এক লোমহর্ষক ও দুঃখজনক অধ্যায়ের।
রসু খাঁর বর্ণনায় জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের পালতালুক গ্রামের খাঁ বাড়ির মৃত কাজল খাঁর বিবাহিতা কন্যা পারভিন আক্তার (২৫)। তিনটি ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী পারভিনকে ফেলে নিখোঁজ হয়ে যায় পারভিনের স্বামী আবুল কালাম। এরপর ২০০৯ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় গাজীপুর বাজারে পারভিনের সাথে পরিচয় হয় কুখ্যাত খুনী রসু খাঁর। এতে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন হয়। রসু খাঁ তাকে বিয়ের আশ্বাস দিয়ে বিভিন্ন সময় মেলামেশা করে তার সাথে। এক পর্যায়ে গত ৭ জুলাই ২০০৯ তারিখে রাত ১০টায় পারভিনকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নং গোবিন্দপুর ইউনিয়নের হাঁসা গ্রামে। পথে দেখা হয় ঐ ইউনিয়নের সিংহেরগাঁ গ্রামের আপন ভাগ্নে জহির ও গোবিন্দপুর গ্রামের সঙ্গী ইউনুছের সাথে। তারা অজ্ঞাত পরিচয়ের মেয়ে দেখে রসু খাঁর পিছু নেয়। এরপর একটি নির্জন বিলের পাশে খাল পাড়ে যায় তারা। এরপর তারা তিনজনে মিলে পারভিনকে ধর্ষণ করে। পারভিন ঐ রাতে তাকে বিবাহ করতে হবে বলে চাপ দেয়। নচেৎ সে পুলিশকে জানিয়ে মামলার হুমকি দেয় এবং চেঁচামেচি শুরু করে। এতে ভাগ্নে জহির ও সঙ্গী ইউনুছ পারভিনের হাত ও পা চেপে ধরে মাটিতে শুইয়ে দেয়। রসু খাঁ পারভিনের মুখে পরনের কাপড় গুঁজে দিয়ে গলা টিপে হত্যা শেষে হাত-পা বেঁধে পার্শ্ববর্তী খালের পানিতে ফেলে দেয়। পরের দিন নিজেকে রিক্সাচালক পরিচয় দিয়ে নিজ বাড়িতে বিরোধ আছে এমন দুজনের নাম বলে পারভিনের খুনের সাথে তারা জড়িত বলে ফরিদগঞ্জ থানার ওসিকে জানায়। পরে মোবাইল থেকে সিম কার্ড খুলে ফেলে। পরে পুলিশ ঐ দুজনকে ধরলেও মামলার কোনো ক্লু উদ্ঘাটন করতে পারেনি। ঐ দু’ ব্যক্তিকে কোর্টেও চালান করা হয়। তারা ২/৩ মাস হাজত বাস করে জামিনে বেরিয়ে আসে।
এদিকে রসু খাঁ জুলাই ২০০৯ মাসে স্থানীয় গাজীপুর বাজারে রাতের বেলা একটি মসজিদের ১২টি ফ্যান চুরি করে পালিয়ে যাবার পথে এক আখের ব্যবসায়ীর হাতে ধরা খায়। লোকজন এসে গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দ করে। এতে সে চুরির মামলায় হাজত খেটে জামিনে বেরিয়ে যায়। ওদিকে ফ্যান চুরিতে ধরা খেলে আখের ব্যবসায়ী তার কাছ থেকে মোবাইল ও ঐ সিম কার্ডটি রেখে দেয়। পরে সেটি জনৈক যুবক ব্যবহার শুরু করলে পারভিনের মামলার তদন্তকারী এসআই মীর কাশেম ঐ সিম নম্বরে কল দিয়ে কথা বলতে শুরু করে। এরপর সিম কার্ডের সূত্র উদ্ঘাটন পূর্বক শনাক্ত হয় এ কুখ্যাত খুনি রসু খাঁ। পুলিশ সোর্সের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৮ অক্টোবর ঢাকা টঙ্গীর বাসা থেকে রসু খাঁকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে ফরিদগঞ্জ থানায়। এরপর কৌতূহলবশত ফরিদগঞ্জের অজ্ঞাতনামা অপর ৫টি খুনের সাথে তাকে দায়ী করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। সেও অবলীলায় ফরিদগঞ্জের ৬টি, হাইমচরের ৩টি ও চাঁদপুরের ২টি ঘটনার স্থান ও সময়ের বর্ণনা দেয়। এ বর্ণনার সাথে ৩টি থানার অজ্ঞাতনামা ১০টি লাশের রেকর্ড হুবহু মিলে যায়। তার বর্ণনায় হত্যাকান্ডের শিকার সব ক’টি মেয়ের নাম বলতে না পারলেও ২৩ অক্টোবর ২০০৮ তারিখে কোহিনূর ও ১৩ মার্চ ২০০৯ তারিখে মেহেদী নামের দুজনের নাম প্রকাশ করে। আর এভাবেই একের পর এক নারী হত্যা করে হয়ে যায় দুর্ধষ কিলার রসু খাঁ।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com