ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারে ১২৫ বছরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশুরা ভেতরে ক্লাস করছে আর বাইরে বসেছে পশুর হাট। স্কুলের পিলারের সাথে বাঁধা আছে বিক্রির জন্য আনা মহিষের পাল। মহিষের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করতে স্কুল মাঠে তাড়া করা হয়। বারান্দা দখল করে ইজারাদাররা চালাচ্ছেন কারবার। মহিষের হাটের দিন বেলা ১২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত শিশুদের স্কুল মাঠে নামা নিষেধ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, শিশু আর পশু নিয়ে চলছেন তারা। এটা কোনো ভাবেই চলতে পারে না, তারপরও চলছে। আর স্থানিয়রা বলছেন এই হাট থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ টাকা নিচ্ছেন। যে কারনে বছরের পর বছর এভাবে চলে আসলেও কোনো প্রতিবাদ নেই। এলাকাবাসি জানায়, ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া মহাসড়কের সাথেই রয়েছে শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজার। এই বাজারে এক একর ৩৮ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত ১২৫ বছরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাঁকা আর সেমিপাঁকা মিলিয়ে তিনটি ভবনের স্কুলটিতে ক্লাস রুম রয়েছে ৭ টি। আর অফিস রুম আছে ১ টি। সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের ক্লাস রুমে তখনও ক্লাস চলছে। তৃতীয়, চতুর্থ ও প ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষকরা। স্কুলের মাঠে ছুটাছুটি করছে মহিষের দল। স্কুলের সামনের অংশের পিলারের সাথে বাঁধা আছে মহিষ। বারান্দার একপ্রান্ত দখল করে চেয়ার-টেবিল পেতে বসে আছেন ইজারাদারের লোকজন। হাটে আসা লোকজন দখল করে নিয়েছে গোটা বারান্দা। বাচ্চারা ক্লাসের ভেতরে পড়ালেখা করলেও বাইরে বের হতে দেওয়া হয় না। পানি খেতে বা বাথরুমে যেতে মাঝে মধ্যে ২/১টি শিশু বারান্দা থেকে নামলেও তাদের মধ্যে ভয় এবং আতংক। অনেক সময় মহিষের তাড়া খেয়ে ছুটে পালাচ্ছে শিশুরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি এক বছর হলো এই স্কুলে এসেছেন। এখানে এসেই দেখেন প্রতি রবিবার স্কুল মাঠে মহিষের হাট বসে। খোজ খবর নিয়ে দেখেছেন এটা অনেক পুরানো হাট। তিনি আরো জানান, এই হাটের কারণে রোববার স্কুল সকালে চলতো। কিন্তু সেই নিয়ম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন তাদের সমস্যা হচ্ছে। নাম প্রকাশে ানিচ্ছুক স্কুলের প ম শ্রেণীর ছাত্র জানায়, হাটের দিন বেলা ১২ টার পর থেকে তাদের মাঠে নামা নিশেধ। যে কারনে তারা নামে না। সে আরো জানায়, বাইরে হাটের কারনে চলে চিৎকার চেচাচেমি। এই অবস্থায় ভেতরে ক্লাস করা যায় না। তাছাড়া ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে তারা মাঠে ছুটাছুটি করে বেড়ায়, সেটাও বন্ধ রাখতে হয়। একজন অভিভাবক নাম প্রকাশ না করে জানান, শিশুদের ক্লাসের সাথে পশুর হাট কোনো ভাবেই পড়ালেখার পরিবেশ থাকে না। এটা খুবই দুঃখজনক এভাবে স্কুলের মাঠে হাট বসানো। তারপরও হাট বসিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে টাকা নিচ্ছেন। অবশ্য স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন বছরে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা দেন। যা দিয়ে স্কুলে অপ্যায়ন খরচটা চলে। তাও অনেক তদ্বিরের পর টাকাটা পাওয়া যায়। হাটের ইজারাদার জাহিদুর রহমান জানান, স্কুল মাঠে হাট বসে এটা ঠিক, তবে সেটা বিকালে বসে। যখন স্কুল প্রায় ছুটি হয়ে যায়। আর বারান্দায় মহিষ বাঁধা, তার লোকজন বসা এটা ঠিক হয়নি বলে জানান। শৈলকুপার দুধসর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাহেব আলী জোয়ার্দ্দার জানান, হাটটি দীর্ঘদিনের। স্কুলটি সকালে করলে ভালো হয়। বিষয়টি তারা দেখবেন বলে জানান। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতাউর রহমান জানান, এটা খুবই দুঃখজনক। তিনি বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান। একই কথা বলেন, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সরকার। তবে স্কুল মাঠে মহিষের হাট বন্ধের বিষয়ে কোন জোরালো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।