নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণকে ‘স্বস্তিকর’ বললেও মাঝপথে তাদের সরে দাঁড়ানোকে মহাসচিব ‘দুঃখজনক’ হিসাবে উল্লেখ করে ‘উদ্বেগ জানিয়েছেন’ বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এ কে এম শামীম চৌধুরী জানান।
তিনি জানান, শুক্রবার বেলা ১টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তাদের মধ্যে প্রায় ১৪ মিনিট কথা হয়।
“বান কি মুন বলেছেন, নির্বাচনে কিছু অনিয়ম হয়েছে বলে তাকে জানানো হয়েছে।
“প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রাণহানি ছাড়া নির্বাচন হয়েছে।”
গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের এ নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থীরা ভোট চলাকালেই কারচুপির অভিযোগে বর্জনের ঘোষণা দেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাশাপাশি জাতিসংঘ মহাসচিবও ইতোমধ্যে সব অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রেস সচিব বলেন, “নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, ‘বিএনপি গত তিন মাসে আন্দোলন করে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। জনজীবন ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জনসম্পদ নষ্ট করেছে। মানুষ এসব চায় না। এ কারণে, মানুষ তাদের ভোট দেয়নি’।
“বিএনপি সেটি বুঝতে পেরে ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে’ ভোট শুরুর তিন ঘণ্টা পরই সরে দাঁড়িয়েছে বলে বান কি-মুনকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।”
প্রেস সচিব জানান, বিএনপি যাতে ‘নাশকতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ড পরিহার করে গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসে’- সে আহ্বান জানাতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী দৃঢ় ভূমিকা পালন করেছে।
“নির্বাচনে ৪৪ শতাংশ ভোট পড়েছে জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভোটের সংখ্যা অস্বাভাবিক ছিল না। এ কারণে ভোট নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই।”
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধান দুই দলকে সংলাপের তাগিদ দিতে ২০১৩ সালের অগাস্টে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন করেছিলেন বান কি-মুন।সে সময় সংলাপের চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং বিএনপির বর্জনের মধ্যেই ভোট করে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
এরপর প্রায় একবছর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন শান্ত থাকলেও নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপি আবারও আন্দোলনে যায় এবং চলতি বছরের শুরুতে তাদের টানা অবরোধ-হরতালে নাশকতায় নিহত হয় দেড় শতাধিক মানুষ।
এরপর অবরোধ-হরতালের অবসান ঘটিয়ে বিএনপি সিটি নির্বাচনে এলে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের স্বাগত জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিবও ‘নিরাপদ ও সুষ্ঠু’ পরিবেশে নির্বাচন দেখার আশা প্রকাশ করেন।
কিন্তু নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠলে ভোটের দিনই উদ্বেগ প্রকাশ করে তদন্তের আহ্বান জানান তিনি।
“প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছেন, তাদের (বিএনপি) আন্দোলনের ডাকে জনগণ আসেনি, নেতা-কর্মীরাও আন্দোলনে থাকেনি। একইভাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েও নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে পারেনি তারা। নেতা-কর্মীদের পোলিং এজেন্ট বানিয়ে নির্বাচন কেন্দ্রেও পাঠাতে পারেনি তারা, কারণ তারা জনগণকে হত্যা করে আন্দোলন করেছে”, বলেন প্রেস সচিব।
তিনি বলেন, ৩ ঘণ্টা পর বিএনপি নির্বাচন বর্জন করেও যে ভোট তাদের প্রার্থীরা পেয়েছেন, তাতে ‘প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই’ বলে জাতিসংঘ মহাসচিবকে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
“প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছেন, তার সরকার জনগণকে শান্তি ও নিরাপত্তা দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একই সঙ্গে গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।”
বান কি-মুন বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ‘প্রশংসা করেন’ বলে শামীম চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান।
তিনি বলেন, “গণতন্ত্র সুসংহত করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নিরলস কাজের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান বান কি-মুন। একইসঙ্গে তিনি স্পষ্টভাষায় সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানান।”
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী টেলিফোন করার জন্য জন্য বান কি-মুনকে ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার বিষয়ে মহাসচিবের আন্তরিকতার প্রশংসা করেন বলে প্রেস সচিব জানান।