,প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজে কাঁদলেন এবং হলভর্তি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও কাঁদালেন। গতকাল রবিবার ছিল প্রধানমন্ত্রীর ৩৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে সংবর্ধনা জানাতে গণভবনে ব্যাংকুয়েট হলে গতকাল সন্ধ্যায় মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী সমবেত হন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শুভেচ্ছায় স্নাত হন প্রধানমন্ত্রী। বক্তব্যের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট একরাতে বাবা-মা, ভাইসহ সব হারানোর বেদনার কথা এবং সবাইকে হারিয়ে দেশে ফেরার ক্ষণটির স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার আবেগে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এক পর্যায়ে দু’চোখ জলে ভরে উঠলে পুরো অনুষ্ঠানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে মাঝে মাঝে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতিচারণ শুনতে গিয়ে অনেক নেতাকর্মীই তাঁদের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তুলতে দেশবাসীর সহযোগিতা কামনার পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, জ্বালাও-পোড়াওকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই, হারাবারও ভয় নেই। বাংলাদেশের মানুষ আমাকে যে মর্যাদা ও ভালবাসা দিয়েছে, তাদের কল্যাণে যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতে আমি প্রস্তুত।
অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেই আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নীতি-আদর্শ নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। আল্লাহ কিছু কাজ করার জন্য মানুষকে পাঠান। সেই কাজ আমি করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ফেরার পর আমার ওপর বার বার আঘাত এসেছে, কিন্তু কখনো ঘাবড়াইনি, ভয় পাইনি। মানুষের কল্যাণে যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান থেকে সারাবিশ্বের কাছেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের দরবারে আমরা দেশকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে যেতে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক জীবনে অনেক বীভত্স ঘটনা দেখেছি, আমরা চাই না দেশে এ ধরনের ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটুক। দেশের মানুষ যে ভালবাসা ও মর্যাদা আমাকে দিয়েছে, সেটা কখনো ভোলার নয়। আমি দেশের মানুষের কল্যাণে আমৃত্যু কাজ করে যেতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের সবাইকে হত্যার কথা শুনেছিলাম। কিন্তু সেদিন দেশের মাটিতে পা রাখার আগে বুঝতে পারিনি আমার জন্য কতটা কষ্ট ও বেদনা জমা রয়েছে। স্বামীর কর্মস্থলে যাওয়ার আগে বাড়িতে বাবা, মা, রাসেল, জামাল, কামাল সবাইকে রেখে গিয়েছিলাম। কিন্তু ফিরে এসে কাউকে আর পাইনি। মানুষ একজন স্বজন হারানোর বেদনা ভুলতে পারে না, কিন্তু আমাদের দু’বোনকে সব হারানোর বেদনা সইয়েই চলতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখলকারীরা আমাকে ৬টি বছর দেশে আসতে দেয়নি। যখন দেশে এলাম, তখন বিমানবন্দরে লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এতো মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হলাম, কিন্তু আমার চোখ ঘুরে ফিরছিল পরিবারের সেই চেনা মুখগুলো খুঁজতে। কিন্তু কাউকে খুঁজে পাইনি। আমি যখন দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেই, তখন দলের নেতারা আমাকে সভানেত্রীর দায়িত্ব দেন। দেশে ফিরে অসহ্য বেদনার মধ্যেও প্রতিজ্ঞা নিয়েছিলাম- এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্ত যাতে বৃথা না যায় সেই কাজ করতে হবে। আমি সেই থেকে দেশের কল্যাণের জন্য রাজনীতি করে যাচ্ছি। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমি কাজ করে যাচ্ছি, এ জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকার করতেও আমি প্রস্তুত রয়েছি।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা ফুলের তোড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান। এরপর একে একে দলের সকল সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সতীশ চন্দ্র রায়, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।