,আহসান রাজা। পাকিস্তানের আম্পায়ার। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের সিরিজে আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু অন্য আম্পায়ারদের চেয়ে তার কাছে এই সিরিজের আবেদন একেবারেই ভিন্ন। কারণ, ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার টিম বাসের ওপর সন্ত্রাসী হামলার দিনে আম্পায়ারদের গাড়িতেও গুলি চলে। গুলি লেগেছিল আহসান রাজার শরীরেও। লিভার ও লাংসে নানা ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই তিনিই জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ থেকে ঘুরে এলেও এখন আর ভয় পান না কিছুই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি টি টোয়েন্টি ও তৃতীয় ওয়ানডেতে অন-ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
অস্ত্রধারীরা রাজার অন-ফিল্ড আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হবার স্বপ্নটা ভেঙে দিয়েছিল প্রায়। ২০০৯ সালের সেই সিরিজে দ্বিতীয় টেস্টের রিজার্ভ আম্পায়ার ছিলেন রাজা। তৃতীয় দিনের খেলার জন্য আম্পায়ার সাইমন টোফেল, স্টিভ ডেভিস ও নাদিম ঘুরি এবং ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রডের সাথে স্টেডিয়ামের পথে ছিলেন রাজাও। তখনই সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। দুটি গুলি লাগে রাজার শরীরে। লাংস ও লিভার ড্যামেজ হয়। বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতে, আবার হাঁটতে ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে।
প্রচুর রক্ত দিতে হয়েছে রাজাকে। লিভার ও লাংসের অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। পেটে দিতে হয়েছিল প্রায় ৮০টি সেলাই। দুঃসহ স্মৃতি নিয়েই বেঁচে আছেন রাজা। তবে তিনি বলেছেন, তার মন থেকে সব ক্ষত মুছে যাবে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক আম্পায়ার হিসেবে দাঁড়ানোর পরই।
“সম্ভবত আমিই সবচেয়ে রোমাঞ্চিত মানুষ। কারণ দেশের মাটিতে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা ছাড়া আমার জীবন অপূর্ণ রয়ে যাবে।” রাজা বলেছেন, “কেমন লাগছে তা বুঝিয়ে বলতে পারবো না। ২০০৯ সালের ওই সিরিজ আম্পায়ার হিসেবে আমার ক্যারিয়ারের প্রথম ছিল। তারপর ঘটে দুঃখজনক ঘটনা। ও রকমটা যেকোনো সময় যেকোনো জায়গায় ঘটতে পারে। তা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। কিন্তু আমি প্রেরণা হারাইনি। ৬ বছর আগে আমি ছিলাম রিজার্ভ আম্পায়ার। এখন আমি আইসিসি প্যানেলের অন-ফিল্ড আম্পায়ার।”
৪০ বছরের রাজা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান ছিলেন খেলোয়াড়ী জীবনে। ২১টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলেছেন। আম্পায়ার হবার জন্য খেলা থেকে অবসর নেন তিনি। রাজা জানিয়েছেন, ২০০৫ সালে বেসিক টেস্টে ফেল করেছিলেন তিনি। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ২০০৯ সালে রিজার্ভ আম্পায়ার হন। আর এখন গেলো তিন বছর ধরেই পাকিস্তানের বর্ষসেরা আম্পায়ার আহসান রাজা।
অনেক ক্ষতির মধ্য দিয়ে গিয়েছেন রাজা। কিন্তু তার মনে কোনো ক্ষোভ নেই। নেই কোনো ভয়ও। “আমার কোনো রাগ বা হতাশা নেই। আমি সামনে এগিয়েছি। ভয় পাই না। যেখানে আমি এখন দাড়িয়ে সেখানেই ঘটনাটা ঘটেছিল। সুস্থ হবার পর এক শ-বারের বেশি এখান থেকে গেছি। কোনো ভয় লাগেনি মনে-” বলেছেন রাজা। জীবনের আনন্দে রাজার ঘোষণা, “আমি বেঁচে আছি, পরিবারের সাথে আছি। তাতেই আমি অসম্ভব খুশি।”