নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার কারণে পাশের একটি বটগাছের নিচে খোলা জায়গায় ক্লাসে বসার জন্য কেউ চটের বস্তা, কেউবা প্লাস্টিকের বস্তা, কেউবা মাদুর হাতে করে আসছে। তাদের অনেকেরই কাঁধে ঝোলানো রয়েছে স্কুল ব্যাগ। এরা সবাই নড়াইলের সদর উপজেলার রতডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার রতডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯২৮ সালে ৩৩ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে একটি পুরাতন ভবন ছিল। এ ভবনের উপর ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে দ্বিতল ভবন করা হয়। ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটলসহ পলেস্তার ভেঙ্গে ভেঙ্গে পড়ছে দীর্ঘদিন ধরেই। সম্প্রতি কয়েক দফায় ভূমিকম্পের কারণে ভবনের ফাটলগুলো আরো বেশি দেখা দিয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। এরপর থেকে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বাইরে বট গাছের নিচে পড়ালেখা চলছে।রতডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে গেছে চিত্রা নদী। নদীর তীরে একটি বটগাছের নিচে চটের বস্তা, মাদুর অথবা পলিথিনের বস্তার উপর খোলা আকাশের নিচে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা।বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অরণ্য, হাফসা, চন্দ্রা পাল, সেতুসহ আরো অনেকে জানায়,আমরা রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ক্লাস করতে পারি না। আশেপাশের কোলাহলের কারণে পড়াশুনায় মনোযোগ দেওয়া ও সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যালয়ে ভবন না থাকাায় খোলা জায়গায় পড়ালেখা করতে হচ্ছে। যে কোন সময় গছের ডালপালা ভেঙ্গে এবং ঝড়-বৃষ্টিতে বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলেও আশংকা করছে।সচেতন অভিভাবক হোসনেয়ারা জানান, আমাদের সন্তান স্কুলে পাঠাতে ভয় হয়। খোলা আকাশে গাছের নিচে ক্লাস হয়। ঝড়-বৃষ্টির সময় কখন গাছের ডালপালা ভেঙ্গে পড়ে যে কোন মুহুর্তে শিক্ষার্থীরা আহত হতে পারে। দ্রুত বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের দাবিও জানান তিনি।বিদ্যালয়ের শিক্ষক রেহেনা বেগম, শাকিলা জামান, শ্রাবণী নন্দী, জাহানারা খানম, তৃপ্তি রাণী ঘোষ, বিউটি বিশ্বাস, ফাতেমা খানম, নারগিস আক্তার জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান এবং ফলাফল অনেক ভাল। যার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। কোন অতিরিক্ত ভবন না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাদের ওই ভবনেই বসতে হচ্ছে। যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারেও বলে জানান এসব শিক্ষকবৃন্দ। তাঁরা আরো বলেন, দুর্ঘটনার ভয়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির সংখ্যা অনেক কমে গেছে।বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরুন কুমার মন্ডল বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার ফলে শিক্ষার্থীদের যাতে লেখাপড়ার ক্ষতি না হয় সেজন্য খোলাস্থানে ক্লাস নেয়া হচ্ছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও তিনি কামনা করেন।বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাতি রবিউল আলম রুনু এ ব্যাপারে বলেন,শিক্ষার্থীদের বসার জায়গা না থাকায় এবং দুর্ঘটনার আশংকায় স্কুলে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বিষয়টির সমাধানকল্পে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জেছের আলী জানান, জেলায় এ ধরনের ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে পাঠদান অব্যাহত রাখতে আপাতত টিনসেড নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।
নড়াইল প্রতিনিধিঃ হিমেল মোল্যা