এবার তাঁর মুখেই শুনুন ২০১৪ সালের জুনে সেই প্রথম ফ্লাইং বোটের কথা। আর তাঁর এগিয়ে চলার গল্প-
ভেতরে ভেতরে উত্তেজনা টের পাচ্ছি। ফ্লাইং বোটে উড়ব। প্রচণ্ড বাতাস বইছে, এই রোদ তো, এই মেঘলা আকাশ। সময় বড়জোর সকাল ১০টা। আমাদের হাজির থাকতে বলা হয়েছে মেঘনা নদীর পার্শ্ববর্তী বালুয়াকান্দি গ্রামের একটি ফাঁকা জায়গায়। চারপাশে খোলা প্রান্তর। কিন্তু পৌঁছেই বোটের দেখা পেলাম না। তবে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। কিছুক্ষণ পর দেখি, আকাশে চক্কর দিয়ে পানিতে ল্যান্ডিং করতে এগিয়ে আসছে ফ্লাইং বোট।
খুলনা থেকে আকাশে চড়তে এসেছিলেন মো. সাজ্জাদ। তিনি জানালেন, পানি থেকে আকাশে ওঠার সময় অনেক ভয় লেগেছিল। উপরে ওঠার পর ভয় কেটে যায়। বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকায় বোটের পাখা গুটিয়ে ফেলছেন দুই পাইলট শফিকুল ইসলাম হীরা ও পাভেল আহমেদ।
তারা জানালেন, বাতাসের বেগ না কমা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কি আর করা! বেলা ২টা পর্যন্ত অপেক্ষার পর প্রস্তুতি নিচ্ছি ওড়ার। আমাকে পরিয়ে দেয়া হলো ওড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। দুই আসনের বোটের সামনে পাইলট ও পেছনের সিটে আমি বসে পড়লাম। দ্রুতগতিতেই এগিয়ে চলছি আমরা, বিকট শব্দ আর প্রচণ্ড বেগে বাতাস চারপাশে। ১ মিনিট ১০ সেকেন্ড পর ফ্লাইং বোটটি পানি থেকে শূন্যে উঠে এল। দ্রুত বেগে শূন্যে ওঠার ঝাঁকুনি প্রথমবার যে কারো সহজেই ভয় লাগিয়ে দিতে পারে।
ভূমি থেকে হাজার ফুট উপরে বেশ ভালোই লাগছিল। পাইলট শফিকুল ইসলাম হীরা ভারী পাখা টেনে বোটটিকে নিয়ন্ত্রণের মাঝেও খোঁজ রাখছেন, কেমন লাগছে জানতে চাইছেন। সবুজ প্রকৃতি, মাঠ, নদীতে পাখির মতো যান্ত্রিক পাখায় ভর করে উড়ে বেড়ানো সত্যি রোমাঞ্চকর। দ্রুত নিচে নামার সময় আবারো ঝাঁকুনি দিয়ে পানিতে অবতরণ।
শরীফস এভিয়েশন বোট ফ্লাইং সেবায় পাইলটসহ দুই আসনের বোটটি ৭ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে। তবে নিরাপত্তার জন্য উচ্চতা ১ হাজার ৫০০ ফুটের মধ্যে রাখা হয়। আবহাওয়া ভালো থাকলে শুক্র ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আকাশে উড়ানো হয়। বাতাসের গতিবেগ ২৫ কিলোমিটারের নিচে উড্ডয়ন উপযোগী। অস্ট্রিয়ার তৈরি রোটেক্স এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনটি টু-স্টোক ও ৬৪ হর্স পাওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন।
বোটটি ইতালির পোলারিশ মোটর কোম্পানির। ইঞ্জিন বন্ধ করে দিয়েও পাখার সাহায্যে নিরাপদে অবতরণ করতে পারে বোটটি। ৪৫০ কেজির মোট ধারণক্ষমতার খালি বোটটির মূল ওজন ২১৬ কেজি। ৪৫ লিটার জ্বালানি নিয়ে উড়তে সক্ষম বোটে অকটেনের পাশাপাশি ২ শতাংশ মবিল ব্যবহূত হয়। এ জ্বালানি দিয়ে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা ২০ মিনিট উড়তে সক্ষম। আকাশে সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার এবং পানিতে ৭০ কিলোমিটার।
আরোহণের খরচ
১০ মিনিট ২ হাজার ২০০ টাকা, ১৫ মিনিট ৩ হাজার, ৩০ মিনিট ৫ হাজার এবং ১ ঘণ্টা ১০ হাজার টাকা। এছাড়া ছবি ও ভিডিওর জন্য আলাদা অর্থ পরিশোধ করতে হবে। যাওয়ার আগে আবহাওয়া অবস্থা জেনে ও যোগাযোগ করে যাওয়া ভালো।
আপনিও চাইলে এবার আকাশে উড়তে পারেন।