১৮ ঘণ্টা পরও নেভেনি গাজীপুরের পোশাক কারখানার আগুন। ইস্পাতের কাঠামোর ওপর নির্মিত সাততলা ভবনটির বেশির ভাগ অংশ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল রোববার বেলা সোয়া দুইটার দিকে শ্রীপুর উপজেলার বেতজুরী এলাকায় ডিগনিটি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে ওই পোশাক কারখানায় আগুন লাগে। আজ সোমবার সকাল সাড়ে আটটায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কারখানার ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি ইউনিট ঘটনাস্থলে রয়েছে। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
এত দীর্ঘ সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানতে চাইলে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আকতারুজ্জামান লিটন বলেন, কারখানার সাততলা ভবনটি ইস্পাতের তৈরি। এ কারণে কাছে গিয়ে আগুন নেভানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বাইরে থেকে পানি দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা ভবনটিতে রাখা হয়নি। আগুনে ভবনের দুইটি তলা অবশিষ্ট আছে। সেটিও ধসে পড়তে পারে। বাকি পাঁচতলার বেশির ভাগটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুনে ইস্পাতের কাঠামোগুলো দুর্বল হয়ে গলে পড়ছে। এখন পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টা থেকে মাইকিং করে আশপাশের লোকজনকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদেকুর রহমান।
কারখানায় প্রায় তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। ফায়ার সার্ভিসের আকতারুজ্জামান লিটনের ভাষ্য, আগুন লাগার সময় কারখানায় খাবারের বিরতি ছিল। প্রায় সব শ্রমিক ও কর্মকর্তা বাইরে ছিলেন। কারখানাটিতে সুতা থেকে টি-শার্ট তৈরি করা হয়। ভবনের তৃতীয় তলার গুদামে আগুনের সূত্রপাত হয়। মুহূর্তেই আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে। সাততলা ওই ভবনের দক্ষিণ পাশের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখে কারখানার শ্রমিকেরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। খবর পেয়ে শ্রীপুর, গাজীপুর, ময়মনসিংহের ভালুকাসহ ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ১৪ ইউনিট এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় ওপরের তলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের উত্তাপে ভবনের ইস্পাতের কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে।
কারখানার শ্রমিক আরাফাত হোসেন বলেন, দুপুরে খাওয়ার সময় আগুন লাগায় তিনিসহ সব শ্রমিক কারখানার বাইরে অবস্থান করছিলেন। আরেক শ্রমিক সুলতান মিয়া বলেন, ‘কারখানা পুড়ে নাই, আমাগো কপাল পুড়েছে। আবার কবে কারখানা চালু অইব, এর কোনো ঠিক নাই।’ একই রকম হতাশার সুর বেশির ভাগ শ্রমিকের কণ্ঠে।
গাজীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাদেকুর রহমানকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি আগামী পাঁচ কার্যদিবসে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
কারখানার ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নাজমুন্নাহারের ভাষ্য, ঘটনার সময় তৃতীয় তলায় বিরতি চলছিল। এ সময় ওই তলার গুদামঘরের দক্ষিণ পাশের জানালা দিয়ে ধোঁয়া বের হতে দেখে আগুনের বিষয়টি নজরে আসে। মুহূর্তের মধ্যে আগুন তৃতীয় তলার পুরো অংশে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে তৃতীয় তলার গার্মেন্টসসহ সব সরঞ্জাম পুড়ে গেছে।