আসাদুজ্জামান সম্রাট, কুয়ালালামপুর, SwadeshNews24.com : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী বলতে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়া কিংবা ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করা শ্রমিকদের মুখ। কিন্তু বিশ্বের অন্যতম আধুনিক শহর কুয়ালালামপুরেই ‘গর্ব’ করার মতো অনেক বাংলাদেশী রয়েছেন। প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম খোকন তাদেরই একজন। মালয়েশিয়ার মূলধারার কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি ‘সিল কনসাল্ট’-এর কর্ণধার। যিনি এই মুহুর্তে বিশ্বের অন্যতম বড়ো এক্সিবিশন সেন্টার নির্মাণে কাজ করছেন।
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অভিজাত এলাকা মন্টকিয়ারা। এখানেই নির্মিত হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম এক্সিবিশন সেন্টার। যা নির্মাণ করছে মালয়েশিয়ার এক্সটারনাল ট্রেড মিনিস্ট্রি। ১৫ লক্ষ বর্গফুট এলাকার মধ্যে ১০ লক্ষ বর্গফুট এলাকাতেই নির্মিত হচ্ছে মূল স্থাপনা। এ ভবনের বৈশিষ্ট হচ্ছে এর প্রতিটি ফ্লোরের স্পেস হচ্ছে ৪০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ ফুট। অর্থাৎ এক একটি ফ্লোরের স্পেস একটি পাঁচ তলা ভবনের সমান। আর মূল হল ভবনের উচ্চতা হচ্ছে ৬৪ মিটার। এক্সিবিশন সেন্টারটি নির্মাণে খরচ হবে ৫শ’ ৫০ মিলিয়ন ডলার।
এই এক্সিবিশন সেন্টারের এক একটি কম্পোনেন্ট-এর কাজ এক একটি প্রতিষ্ঠান করছে। এর মধ্যে সিভিল ওয়ার্কসহ আরও কিছু কাজ করছে সিল কনসাল্ট। প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম খোকন জানিয়েছেন, এই প্রকল্পে কাজ করা ১ হাজার ৭০০ কর্মীর মধ্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশী রয়েছেন ১৫শ’ কর্মী। তারা সবাই তার প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ করছেন। বাকি কর্মীদের সবাই ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের। তিনি জানান, বাংলাদেশী কর্মীদের বেশিরভাগই দক্ষ। এখানে অনেক বাংলাদেশী প্রকৌশলী, সুপারভাইজার ও ফোরম্যান কাজ করছেন। যারা সর্বনিু ৪০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা আয় করছেন। তিনি জানান, ২০১৩ সালে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি ২০১৬ সালের মধ্যেই সমাপ্ত হবে।
তিনি জানান, কুয়ালালামপুরে এই এক্সিবিশন সেন্টারে সব-ধরনের পণ্যের প্রদর্শনী করার চিন্তা মাথায় রেখেই করা হয়েছে। এর জন্য এর প্রতিটি ফ্লোর স্পেস অনেক উচু। যাতে পিন থেকে শুরু করে ক্রেন পর্যন্ত প্রদর্শনী করা যায়। তিনি বলেন, প্রকল্পটি অনেক বেশি হাইটেক ও ক্রিটিক্যাল। এটি নির্মাণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যা আমাদের প্রকৌশলী ও কর্মীরা করছেন অনায়াসেই। তিনি জানান, এই প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকরা প্রতি বছর দেশে প্রায় ১শ’ কোটি টাকার রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। কর্মীদের বেশিরভাগই দক্ষ হওয়ায় এটা সম্ভব হয়েছে।
ঢাকার বুয়েট থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করা আমিরুল ইসলাম খোকন মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন কোরীয় বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান দাইয়ু’র প্রকৌশলী হিসেবে। সেখানে একাধিক প্রকল্প সফলভাবে সম্পন্ন করেন। পরে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন সিল কনসাল্ট। মালয়েশিয়ার স্থানীয় নিয়মকানুন অনুযায়ী আরও অংশীদার নিতে হলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মূলত: তিনি নিজেই। এ প্রকল্প ছাড়াও মালয়েশিয়ায় আরও ৭/৮টি বড়ো স্থাপনা নির্মাণে কাজ করছেন তার প্রতিষ্ঠান।
দু’দশকের বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়াকে অবস্থান করা আমিরুল ইসলাম খোকনের পরামর্শ হচ্ছে, অবৈধভাবে মালয়েশিয়াতে না যাওয়া। অবৈধ পথে মালয়েশিয়া গিয়ে শ্রমিকরা যেমনটি প্রতারিত হচ্ছেন তেমনি আয়ও বেশি করতে পারছেন না। আর প্রতিনিয়ত পুলিশী হয়রানির ঝুঁকির মুখে থাকতে হয়। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া আসার আগে দেশে দু’একটি ট্রেড কোর্স করে দক্ষ শ্রমিক হিসেবে আসতে পারলে তাদের চাহিদা রয়েছে এবং আয়েরও ভালো সুযোগ রয়েছে। আমিরুল ইসলাম খোকন জš§ভুমি বাংলাদেশের জন্য কিছু করতে চান। ইতিমধ্যে তিনি এসএমএস’এর মাধ্যমে রেলওয়ের অবস্থান সম্পর্কিত তথ্য জানার একটি প্রকল্প রেলওয়েতে বাস্তবায়ন করেছেন। যা বিগত লাগাতার হরতাল-অবরোধের সময়ে সাধারণ মানুষের ব্যাপক কাজে লেগেছে। আমিরুল ইসলাম খোকন, ঢাকা মহানগরীর যানজট দূর করতে টঙ্গী থেকে ট্রেনের আন্ডার গ্রাউন্ড লাইন নির্মাণের পরামর্শ দেন। এতে একদিকে যেমন, যানজট কমবে অন্যদিকে ট্রেনের এই বিশাল জায়গা কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন করা যাবে।