রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করলেন ২১ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর নিজাম-উল আযীম।
মঙ্গলবার সকাল ৯টার পর আনুষ্ঠানিকভাবে রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী তাকে দায়িত্বভার প্রদান করেন। এর আগে সোমবার বিকেলে নিজাম-উল আযীমকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে একটি ফ্যাক্স বার্তা পাঠায় রাসিক বরাবর। প্যানেল মেয়র না হলেও নগর আওয়ামী লীগের সদস্য ওই কাউন্সিলরকে দায়িত্বভার প্রদানের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
এদিকে দায়িত্বভার গ্রহণকালে রাসিক মেয়রের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত মেয়র নিজাম-উল আযীম ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী, সচিব সৈয়দা জেবিন নেছা সুলতানা, প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হকসহ রসিকের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দায়িত্বভার নেয়ার পরেই নিজ চেয়ারে বসে অফিস করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র। তিনি রাসিকের বিভিন্ন বিষয়ে দিক-নির্দেশনাও দেন।
এদিকে, রাসিক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের সাময়িক বরখাস্তের আদেশ এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন সুপ্রীম কোর্ট। গত ২৮ মে সুপ্রীম কোর্টে বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও একেএম জহিরুল হক গঠিত একটি দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। ওই আদেশের উকিল সার্টিফিকেট গতকাল সোমবার রাসিকে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী।
তিনি বলেন, মেয়র বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশটি স্থগিত করা হয়েছে। এ মর্মে সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী আমিরুল করিম হেলাল স্বাক্ষরিত একটি ফ্যাক্স তার কাছে এসেছে। তবে সেটি উকিল সার্টিফিকেট কপি। ফলে এই কপিটি দাফতরিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই যতদিন না কোর্ট সার্টিফিকেট আসবে, ততদিন এই আদেশ কার্যকর হবে না।
প্যানেল মেয়রদের পাশ কাটিয়ে আওয়ামী লীগ পন্থী কাউন্সিলরকে দায়িত্বভার দেয়ায় নগরবাসীর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিষয়টিকে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের পরিপন্থী বলেও দাবি করেছেন অনেকেই।
সিটি করপোরেশন আইন অনুযায়ী, ভারপ্র্প্তা মেয়র হিসেবে রাসিকের প্যানেল মেয়র-১ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ারুল আমিন আযব দায়িত্বভার পেতেন। কিন্ত নগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা এ কাউন্সিলর দীর্ঘ দিন ধরে কারাবন্দি। এরপরে আসে প্যানেল মেয়র-২ প্যানেল ও ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টিটোর নাম।
কিন্তু গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে রয়েছেন নগর যুবদলের সদস্য এ কাউন্সিলর। এদের অবর্তমানে দায়িত্বভার পাবার কথা প্যানেল মেয়র-৩ নুরুন্নাহার বেগমেরই। দায়িত্বভার বুঝিয়ে দিতে গত ২৪ মে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে নিজ প্যাডে ফ্যাক্স ও ডাকযোগে এ চিঠি পাঠান নগর মহিলাদলের যুগ্ম আহবায়িকা হিসেবেও দায়িত্ব পালনকারী এ নারী কাউন্সিলর। তার বিরুদ্ধে কোন মামলাও নেয়। তবে এখনো ওই চিঠির জবাব দেয়নি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি স্বীকার করেছেন রাসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আজাহার আলী। তিনি বলেন, এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় এখনো কোন নির্দেশনা দেয়নি। প্যানেল মেয়রকে পাশ কাটিয়ে সাধারণ কাউন্সিলরকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বভার দেয়া আইনসিদ্ধ কি না জানতে চাইলে, বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ের ভুক্ত বলে জানান ওই কর্মকর্তা। তবে রাসিকের একটি সূত্র জানায়, নুরুন্নাহার বেগম ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেলে মেয়র মোসদ্দেক হোসেন বুলবুলের অবর্তমানে ফের মেয়রের চেয়ার চলে যেতো ।
উলেখ্য, পুলিশ কনস্টেবল সিদ্ধার্থ রায় হত্যা, নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনের ৪টি মামলা আদালত চার্জশীট গ্রহণ করায় রাসিকের মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ৭ মে ফ্যাক্সবার্তায় সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ আদেশ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি মামলার তদন্তের স্বার্থে পুলিশের দায়ের করা অন্তত: ১৬ মামলার আসামী মেয়র বুলবুলের বরখাস্তের আদেশ চেয়ে পুলিশ সদর দফতরে চিঠি পাঠিয়েছিলো আরএমপি। এসব মামলা থেকে গ্রেফতার এড়াতে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে আত্মগোপনে রয়েছেন রাসিক মেয়র।