ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবিত সার্ক স্যাটেলাইট নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। তবে এখনই এ বিষয়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক কিছু বলবে না বাংলাদেশ সরকার।
সার্ক অঞ্চলের জন্যে মোদির প্রস্তাবিত অভিন্ন এই স্যাটেলাইট বিনাবাক্য ব্যয়ে গিলে নেওয়া বাংলাদেশের জন্যে এক রকম চ্যালেঞ্জের। কারণ প্রস্তাবিত এই স্যাটেলাইটটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে থাকা বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে সরাসরি ওভারল্যাপ করছে। আর এ নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে ঢাকা।
এই স্যাটেলাইট ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে, আর সে কারণেই এই দোটানা অবস্থান-বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উড়বে মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায়। আর সার্ক স্যাটেলাইটের জন্যে প্রস্তাব ৪৮ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমা। কিন্তু সমস্যা অন্যখানে। দু’টি স্যাটেলাইটের ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ একই, ১২ দশমিক ৭৫ থেকে ১৩ দশমিক ২৫ গিগাহার্ডজ।
আর এ কারণে স্যাটেলাইট দু’টির মধ্যে কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তাছাড়া, প্রস্তাবিত সার্ক স্যাটেলাইট বিষয়ে বিস্তারিত কোনো কর্ম পরিকল্পনাও ভারত এখনও জানায়নি।
তবে সার্ক স্যাটেলাইটটি তৈরি, উৎক্ষেপণ এবং ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সকল কাজ ভারতীয়রাই করবে বলে জানিয়েছে। এর জন্যে তারা কেবল সার্কভূক্ত দেশগুলোর কাছ থেকে সমর্থন চেয়েছে।
গত বছর ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সার্ক স্যাটেলাইটের বিষয়টি তুলে ধরেন মোদি। পরে নভেম্বেরে কাঠমান্ডুতে সার্ক শীর্ষ সম্মেলনেও এই অঞ্চলের শীর্ষ নেতাদের সামনে বিষয়টি আবার তোলেন তিনি। এবার মোদির ঢাকা সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জোর সম্ভাবনা রয়েছে।
সে কারণেই বাংলাদেশকে বিষয়টিরও ওপর প্রস্তুতি রাখতে হচ্ছে। তবে সরকার বিষয়টিতে নীতিগত সম্মতি দিতে পারে কি না সে সম্পর্কে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) কেউই পরিষ্কারভাবে কিছু বলছেন না। তাছাড়া, পুরো বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই সার্ক স্যাটেলাইট প্রশ্নে সিদ্ধান্ত জানানো উচিত বলে মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব ফয়েজুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন, তবে কোনো সিদ্ধান্তে আসেননি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।
আর বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বলছেন, ‘আমাদের যদি কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে সে বিষয়ে সরকারের না এগোনোই যুক্তিযুক্ত। তবে লাভ ক্ষতির বিষয়টি আগে থেকে যাচাই করে নিতে হবে।’
বিটিআরসিই সরকারের হয়ে তিন হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
সার্ক স্যাটেলাইট বিষয়ে সরকারের কাছে চিঠি দিয়ে বিটিআরসি তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। বিটিআরসি বলছে, বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের কারিগরি ও বিনিয়োগ পরিকল্পনা সুরক্ষিত রেখে সার্ক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণে ভারতীয় প্রস্তাবে নীতিগত সম্মতি প্রদানের ব্যাপারে দুই দেশের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কারিগরি বিশ্লেষণ ও সমন্বয়ের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
তবে, এই অনুসিদ্ধান্তের আগে তারা আবার বেশ কিছু তথ্যও তুলে ধরেছে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নিয়ে। যেটি আসলে সার্ক স্যাটেলাইটে না যাওয়ার পক্ষেই মত দেয়।
মোদির প্রস্তাবের পর সার্ক স্যাটেলাইট বিষয়ে ভারতীয় হাইকমিশন বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয়। সার্কভূক্ত সবগুলো দেশকেই এই চিঠি দেয় নয়াদিল্লি। এর পর থেকেই বাংলাদেশ এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছে।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৮ মাসের মধ্যে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা যাবে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের পরিকল্পনা অনুসারে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হবে।
সমালোচনার আরও একটি পর্যায়ে বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত সার্ক স্যাটেলাইটের ক্ষমতা হবে মাত্র ১২ ট্রান্সপন্ডার (একেকটি ট্রান্সপন্ডার ৩৬ গিগাবাইটের সমান)। কিন্তু বঙ্গবন্ধু-১ এর ক্ষমতা হবে ৪০ ট্রান্সপন্ডার। আর বাংলাদেশের এখন চাহিদা ১৪ ট্রান্সপন্ডারের বেশি। ফলে সার্ক স্যাটেলাইট বাংলাদেশের জন্যে তেমন কার্যকর কিছু হবে না।
তবে, ছোট দেশ হিসেবে নেপাল-ভুটান-মালদ্বীপ সহজেই এখান থেকে সুবিধা পেতে পারে।
সূত্র জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে জুলাইয়ে বড় পরিসরে বৈঠক হতে পারে। তবে, এর আগে মার্চে একটি বৈঠক হলেও সেখানে ভারতের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছুই জানানো হয়নি।
ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া সরকারের এক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তানও ভারতের এই প্রস্তাবে অস্বস্তিতে রয়েছে। তবে, তারাও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
– See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/06/04/83049#sthash.9I77EAoL.dpuf