1. ccadminrafi@gmail.com : Writer Admin : Writer Admin
  2. 123junayedahmed@gmail.com : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর : জুনায়েদ আহমেদ, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর
  3. swadesh.tv24@gmail.com : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম : Newsdesk ,স্বদেশ নিউজ২৪.কম
  4. swadeshnews24@gmail.com : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর: : নিউজ ডেস্ক, স্বদেশ নিউজ২৪.কম, সম্পাদনায়-আরজে সাইমুর:
  5. hamim_ovi@gmail.com : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : Rj Rafi, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  6. skhshadi@gmail.com : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান: : শেখ সাদি, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান:
  7. srahmanbd@gmail.com : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান : এডমিন, সম্পাদনায়- সাইমুর রহমান
  8. sumaiyaislamtisha19@gmail.com : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান : তিশা, সম্পাদনায়-সাইমুর রহমান
নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও তিস্তার পানি - Swadeshnews24.com
শিরোনাম
সোনার দাম আরও কমল রাজধানীতে পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বিএনপির জায়েদ খানের এফডিসিতে ফেরা হবে কিনা, জানালেন ডিপজল কক্সবাজার জেলায় কত রোহিঙ্গা ভোটার, তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট সিনেমা হলে দেওয়া হচ্ছে টিকিটের সঙ্গে ফ্রি বিরিয়ানি ঢাকায় বড় জমায়েত করতে চায় বিএনপি ১৫ বছর পর নতুন গানে জেনস সুমন যশোরে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মিশা-ডিপজল প্যানেলের জয়লাভ গোবিন্দগঞ্জে অটোচালক দুলা হত্যার মূল আসামি আটক চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু পলাশবাড়ীতে উপজেলা নির্বাচনে অনলাইন মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিলেই বিএনপি বলে বিরোধীদল দমন’ এবার বুবলী-শাকিবের ‘কোয়ালিটি টাইম’ নিয়ে মুখ খুললেন অপু বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো: সিপিডির রেহমান সোবহান

নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফর ও তিস্তার পানি

  • Update Time : মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০১৫
  • ৫০৯ Time View

আমরা জানি উভয়বঙ্গের উত্তরাঞ্চলেরই এটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ইতোপূর্বেও এ নিয়ে ফয়সালা হয়েছিল। সেখানে জলপ্রবাহের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পাচ্ছে না। ফলে এই দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা তো অকারণে অযৌক্তিক আবদার করছি না। উভয় অংশের মানুষকেই বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে। তার জন্য আলোচনা করে অংশীদারিত্ব ঠিক করতে হবে। মনে রাখবেন, মানুষের মরণাশঙ্কা জেনেও আমরা যদি মমতার আবদারের কাছে নতি স্বীকার করি আর ‘মোদি কৌশলে’ স্বস্তি পেয়ে যাই, তবে তা কিন্তু দেশের ও দেশবাসীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাই করা হবে।কামাল লোহানী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করে গেলেন। তিনি তো এখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠতম সহযোগী প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী। গুজরাটের সাম্প্রদায়িকতার রক্ত মুছে ফেলতে চাইছেন। খুব ভালো কথা যেখানে তিনি এখন বসে আছেন, সে তো বিশাল ভারত বহু ধর্ম-বর্ণ দল ও মতের আসন। সে আসনে বসলে সবারই চেহারা-চরিত্র পাল্টে যায়। এর আগে এমন ঘোরতর সাম্প্রদায়িক মানসিকতার নেতৃত্ব দিলি্লর সিংহাসনে দেখিনি, যদিও অটলবিহারী রাজপেয়ী বিজেপিরই নেতা ছিলেন। তিনি ওই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে কিন্তু জনসংঘ-মত পরিবর্তন করে ফেলেছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে রাজনৈতিক অভিযান, রাষ্ট্র পরিচালনা, জনসংযোগ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ন রেখে। তিনি কিন্তু ‘কবি’ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন বেশ। বিজেপির নেতা হওয়া সত্ত্বেও এলকে আদভানির মতন সোচ্চার, আগ্রাসী মুসলিম বিদ্বেষী ছিলেন না। বাজপেয়ী কবি ও মানুষ হিসেবে বহু ভারতীয়ের কাছে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন, তাই বলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রত্যাখ্যাত হননি। নরেন্দ্র মোদিও কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি ও রক্তপিপাসু’ হিসেবেই দুর্নাম কামিয়েছিলেন। শুধু কি তাই ভারতীয় নির্বাচনের আগে সারা ভারতে ‘মোদি ঝড়’ সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেখানে আমরা সাম্প্রদায়িক মোদিকেই দেখেছিলাম তার বক্তৃতাতেও গর্জন ছিল উত্তপ্ত। বাংলাদেশ থেকে যারাই ভারতের গিয়েছেন, তাদের খেদিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ার যে ঘোষণা বার বার দিচ্ছিলেন, সেই নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি নেতা হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদ নরেন্দ্র মোদিকে আজ চেনা বড় দুষ্কর।
সত্যিকথা বলতে কি, আমরা বাংলাদেশের মানুষ, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্ষমতাসীন কি বিরোধী দল উভয়েই যেন খানিকটা সিটকে গিয়েছিলেন। কারণ এমন দুরন্ত সাম্প্রদায়িকতামনা মানুষ বিজয়ী হয়ে দিলি্লর সিংহাসনে বসলে, না পানি কী ‘নয়ছয়’ ঘটে যায়। বাস্তব যখন বিজয় এনেই দিল, নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুকুট শিরে ধারণ করলেন, তখন থেকে কেমন যেন পূর্বাভাসগুলো ফিকে হয়ে আসতে থাকল। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসকে গো-হারা হারিয়ে নরেন্দ্র মোদিকে একাই যেন দিলি্ল জয় করে ফেললেন। আশঙ্কা যখন মেঘে পরিণত হলো, তখন ভারতের জনসাধারণও প্রতিপক্ষ রাজনীতিক ঘরানাগুলোও শঙ্কিত হয়ে উঠল, মোদি না জানি কোনপথে নিয়ে যায় ভারতকে। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির হিংস্র-রক্তখেকো প্রতিনিধি এই উগ্রপন্থী ব্যক্তিটি যে সমালোচনার কারণ ছিলেন এবং প্রতিটি নির্বাচন পূর্ব জনসাভায় অবৈধ ভারত অভিভাসী বিশেষ করে বাংলাদেশিদের প্রতি মোদির যে হিংসাত্মক ও উগ্র মনোভাব ছিল, তা কেমন যেন ফিকে হয়ে আসতে থাকল। আমার মনে হয় নির্বাচন একটা ফ্যাক্টর ছিল, সেখানে জয়-পরাজয় আছে। কিন্তু বিজয়ী হলে রাষ্ট্রপতি চালনার সে রীতিসুদ্ধ পদ্ধতি থাকে, সহজে কেউ তার বাইরে যেতে পারে না। মোদিও সেই ছাঁচে পড়ে গেলেন। ক্ষমতায় বিজয়ী হয় রাজনীতি; কিন্তু রাষ্ট্রনীতি যা নির্ধারিত হয়, তার বাস্তবায়ন বা কার্যকর করতে আমলাতন্ত্রের একটা দারুণ অপরিহার্য ভূমিকা থাকে। প্রভাবও থাকে। কোনো রাজনৈতিক দল বা পক্ষই এই সময় থেকে ‘ছুটকারা’ বা রেহাই পায় না। তাছাড়া আমলাতন্ত্রের মোদি বা বিজয়ী রাজনীতির পক্ষের শক্তি ক্রমেই দানা বেঁধে ওঠে। পরে তারাই বিজয়ী দলের পক্ষে জোট বাঁধে এবং পরবর্তী রাজনীতি_ স্বদেশ পরিচালনা এবং বিদেশি সম্পর্ক নির্ধারণ করেন। এ ক্ষেত্রে দিলি্লর ‘সাউথ বস্নক’ প্রশাসনিক সব কর্মযজ্ঞের ‘ভাঁড়ার ঘরে’ পরিণত হয়।… তাই তো দেখছি, নরেন্দ্র মোদির মতন উগ্রস্বভাব রাজনীতিবিদ যে হিংসাত্মক মানসিকতার নিয়ে সর্ব ভারতীয় রাজনীতিতে ঝড়ের বেগে আবির্ভূত হলেন, তাতে মনে হয় জনগণ তাকে বিপুলভাবে ভোট দিয়ে যেমন কংগ্রেসের ওপর বিরক্তি ভাবটা প্রকাশ করলেন তেমনি মোদির ‘একরোখা হিন্দুত্ববাদ’ সত্ত্বেও ওই কংগ্রেস থেকে মুক্তি পেতে বিজেপিকেই আসনে বসালেন। কিন্তু সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ম্যাজিকের মতন ঘটে গেল। মোদি নিজেই পরিবর্তিত হতে থাকলেন। এবার তিনি ক্রমেই দিলি্লর মসনদ উপযোগী রাজনৈতিক চিন্তা ও মানসিকতায় পাল্টে যেতে থাকলেন। ১২৫ কোটি মানুষের দেশ ভারত। ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামের দেশ ভারত ভূমি, ধর্মীয় জনসংখ্যা ভিত্তিতে বিভক্ত ভারত এখন পরাশক্তির স্বপ্ন দেখছে। বিশ্বসভায় নিরাপত্তা পরিষদের এক কর্তা হওয়ার ইচ্ছাপোষণ করছে, হয়তো হয়েও যাবে। তাই ভারতের শাসক হিসেবে যে দলই আসুক, তাতে অবশ্যই ওই লক্ষ্যে পেঁৗছতে যা যা করতে হবে, তাই করতে হবে। সে ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমলাতান্ত্রিক রসায়নটা যোগ হতেই হবে। মোদি এখন সেই ‘ভাজাপোড়া’র পর্যায়ে রয়েছেন। তবে মোদি চটজলদি পাল্টে যাচ্ছেন, আমলাতন্ত্রের পরামর্শে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও সেই পথেই পরিচালিত হচ্ছে। ভারতের খুব ইচ্ছা এশিয়ার নেতা হবে।

এসব কারণে ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তাই মোদিকেও বেশ উত্তপ্ত করেছে এবং এমন সুযোগ ব্যবহার করে বরণীয় ও স্মরণীয় হওয়ার অদম্য বাসনার উদ্রেগ হয়েছে বলেই নির্বাচনের আগের নরেন্দ্র মোদি আর বর্তমান বা এক বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেশ খানিকটা ভিন্ন মনে হচ্ছে। তাই তাকে আশপাশের দেশ সফর করতে দেখছি।
বাংলাদেশ সফর করে গেলেন মোদী বেশ দাপটের সঙ্গে। সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও এসেছিলেন। আমরা অনেক বেশি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ে আগ্রহী কারণ আমরা তিস্তার পানি সরবরাহও পূর্ণোদ্যমে চাই। তিস্তার পানি ভারত যেভাবে আটকেছে, তারই সুযোগ নিয়ে মমতা তার ভবিষ্যতের ‘ভোট ব্যাংক’ তৈরি করতে চাইছে। গত নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের মানুষকে মমতা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার কিছুই করেনি। তাহলে ওরা তো ভোট দেবে না। তাছাড়া তৃণমূলের সাংগঠনিক এবং ভোটকেন্দ্রিক অবস্থা ভালো নয়। সুতরাং তিস্তা নিয়ে মমতা মোদির সঙ্গে বারগেন করতে চাইছে। সে কারণেই কিন্তু নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফরে তিস্তাচুক্তি না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মনে রাখতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যে আচরণ করেন তাতে হিংসা-বিদ্বেষে মেশাল থাকে। প্রচলিত রাজনীতি থাকে না। স্বার্থের কলুষিত রাজনীতি দিয়ে মমতা এ বাংলাকে জিততে চায়। কিন্তু যার কারণে উত্তরবঙ্গের মানুষ তিস্তার জলাভাবে শুকিয়ে মরতে বসেছে, তার কেন্দ্রের সঙ্গে হিংসা অথবা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনীতি অনুপ্রবেশকে ঠেকানোর একটা সম্পর্ক আছে। সে কারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই বাঙালিয়ানা দেখান কিংবা একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে ঢাকা আসুন, তাতে বাংলাদেশের তাকে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। মনে রাখতে হবে, এই মমতাই কিন্তু তিস্তাচুক্তির খড়সাসহ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এসেছিলেন ঢাকা সফরে, তখন মমতা আসবেন এটাই নির্ধারিত ছিল, হঠাৎ করেই দুদিন আগে কী করে বা কারণে মনমোহনের সঙ্গে আসলেন না? তিস্তাচুক্তি সই হলো না। যদিও চুক্তি করা কেন্দ্রের বিষয় তবে প্রতিবেশী রাজ্যের সহমত প্রয়োজন। সেই সুযোগটা নিয়ে সংকটটাকে গভীর করতেও মমতা দ্বিধা করলেন না। তিনি তার উত্তরবঙ্গীয় ভোটারদের খুশি করলেন এভাবেই। এখন নতুন নির্বাচন ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে, তার আগে মমতা যদি বিজেপি সরকারের পাল্লায় পড়ে তিস্তাচুক্তি স্বাক্ষর করতে ঢাকা আসেন এবং করেই ফেলেন তাহলে উত্তরবঙ্গে নাকি তার ভরাডুবি হবে, এটা ভেবে তিনি এলেও ১৬ সাল পর্যন্ত স্বাক্ষর না করার বিষয়টিকে টেনে নির্বাচন পার করেই বোধহয় করতে চান মমতা। তাই তিস্তা চুক্তি হলো না। ওদিকে কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ আগে বলেই দিয়েছেন, তিস্তাচুক্তি হবে না। সুকৌশলে ভারতীয়রা এড়িয়ে যাবে। তবে এটা ঠিক, যত কৌশলই করুক না কেন, যদি আমরা সম্মত না হই তবে তো ভারতপক্ষ বিপদে পড়বে, সেটা যেন না হয়, তার যথেষ্ট চেষ্টা করছে, এতে কি আমাদের মন ভরবে? কী জানি? ওরা যেমন বলছে তেমনভাবে আমরা কি বলছি? জানি সদিচ্ছা আছে কিন্তু ঝেড়ে কাশতে যে হয়, তা তো করছি না। নাকি ভারতকে কোনোভাবে ‘ক্ষুব্ধ’ করা যাবে না? তিস্তার পানি পাই আর না পাই।
আমরা ভুলে যাচ্ছি কেন স্ট্রাটেজিক দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান এমনই যে, ভারতের মতন বিরাট দেশের বিশাল জনসংখ্যা নিয়েও এই ছোট্ট দেশের ১৬ কোটি মানুষের কাছে কূটনৈতিকভাবে নত হতেই হবে। অবশ্য এটাও ঠিক, এতবড় ও শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে বাগড়া দিয়েও লাভ নেই। সে তো ইতোমধ্যে স্থল ও জলসীমান্ত নির্ধারণ এবং অংশ বিজয়ে আমরা লাভবান হয়েছি। আরো অনেক ছোটখাটে সমস্যা থেকে যাচ্ছে। সব তো আর একসঙ্গে সমাধান হবে না! স্থল ও জলসীমানা সম্পর্কিত বিরোধ অল্প দিনে দুটোই সমাধান হয়ে গেছে। জয়-পরাজয় নয় আমরা আমাদের হিস্যা পেয়েছি। মুজিব-ইন্দ্রিরা চুক্তি ৪১ বছর পর হলেও মোদির আমলেই হাসিনা বাস্তবায়ন করলেন এটা বিশাল অর্জন। ১১১টি ছিটমহলের ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ অবস্থা থেকে ওই মানুষগুলো মানবেতর অবস্থান থেকে মুক্তি পেয়েছেন। ওইসব সমস্যার হাল হলো বটে কিন্তু গঙ্গার চুক্তি যেমন অপরিহার্য ছিল তেমনি তিস্তার জলচুক্তিও। উত্তরের জনপদের এত মানুষের জীবন তো এর ওপরই নির্ভর করে কিন্তু কতদিন হয়ে গেল এ নিয়ে ভারতীয় টালবাহানা চলছেই। মমতার আদিখ্যেতা দেখে আমরা মোহিত হতে পারি; কিন্তু মানুষগুলোর মরণ ঠেকানো যাবে না। যে পর্যায়ে এসে পেঁৗছেছি তিস্তাপাড়ের মানুষ তাদের বাঁচাতে হলে এ চুক্তি অপরিহার্য। তাই বলে বাংলাদেশ তো পশ্চিমকে উপেক্ষা করে নিজে বাঁচতে চায় না। প্রয়োজন বুঝে মেটানোর ইচ্ছা নিয়ে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষগুলোকে বাঁচাতে চেষ্টা যেমন আমরা করব, তেমনি ভাবতে চাই, এত বাংলাপ্রীতি মমতার, তিনি কি ওদেশের উত্তরবঙ্গের মানুষের সঙ্গে এ দেশের মানুষের কথা ভাবতে পারেন না?
মমতা শহীদ দিবসে যখন ঢাকা এসেছিলেন, তখন তিনি নাকি ইলিশ পেতে চেয়েছিলেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যথার্থই উত্তর দিয়েছিলেন_ ‘জল এলে ইলিশ যাবে’। যত আদিখ্যেতা কিংবা বাংলাদেশ ঐতিহ্যের ভড়ং দেখান না কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আসল তো সংকট নিরসনেই নিহিত, জল এলে তো ইলিশ যেতে পারবে।
ঢাকা সফরে এসে নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করছেন দফায় দফায়। কারণ তো সবাই বোঝেন, ভারত তার স্বার্থে বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদি তার আমলেই বিশ্বসভায় যে অবস্থান অর্জন করতে চান, সে কারণে যে বাংলাদেশকে দরকার। এছাড়া ট্রানজিট, অঙ্গরাজ্য পরিবহন ব্যবস্থা সহজীকরণে বাংলাদেশকে ব্যবহার, পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য-ব্যবসার জন্যও বাংলাদেশকে তারা যেমন নির্ভর করতে চাইছে, তেমনি বাংলাদেশেরও যে প্রয়োজন।
চীনের নানা স্বার্থ বাংলাদেশে ক্রমেই বাড়ছে, সেটাও বোধহয় ভারতের ‘চক্ষুশূল’। পারস্পরিক নির্ভরতা বেড়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। সেদিক থেকে ভারত কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে চীনের প্রভাবে ঈর্ষান্বিত। তাই ভারত প্রতিবেশীর সঙ্গে বন্ধুত্ব অক্ষুণ্ন ও উন্নয়নের লক্ষ্যেও কিন্তু কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। কিন্তু আপন স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। আর সে কারণেই এবারো তিস্তাচুক্তি হলো না। তিস্তা ছাড়াও আরো তো ৫০ নদীর জল ব্যবহার বা এর গতিপথ নিয়ে জটিলতা রয়েছে, বিশেষ করে ভারত যখন বাঁধ দিয়ে জলপ্রবাহ রুখে দিতে চায়। তখনই বন্ধুত্বে চিড় ধরার আশঙ্কা দেখা দেয়। দুই দেশেরই এ ব্যাপারে পারস্পরিক বোঝাপড়া ও যুক্তিনির্ভর লেনদেনের পথে থাকতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে একটু শক্ত হতেই হবে। কারণ নদীতে জল যখন বইছে না, তখন সময় কিন্তু বহু চলে গেছে। আপাতদৃষ্টিতে আমরা আমাদের প্রাপ্তিতে বা অর্জনে বিজয়ীর মহানন্দে দিন কাটাচ্ছি। কিন্তু যদি তিস্তার পানি জাতিসংঘের বিধান অনুযায়ী না পাওয়া যায়, তবে কি উত্তরবঙ্গের দুই কোটি মানুষের যাপিতজীবনকে আরো যন্ত্রণাময় করে তোলা হবে না? তিস্তা না হওয়ার পেছনে মমতার জেদ এবং দলীয় স্বার্থ। সেটাকে মনে হচ্ছে বিজেপিও পশ্চিমবঙ্গে নিজেদের দলের বিস্তার ঘটানোর লক্ষ্যে মমতাকে কোনোভাবেই ঘাঁটাতে চাইছে না।
আমরা জানি উভয়বঙ্গের উত্তরাঞ্চলেরই এটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। ইতোপূর্বেও এ নিয়ে ফয়সালা হয়েছিল। সেখানে জলপ্রবাহের পরিমাণ নির্ধারিত হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পাচ্ছে না। ফলে এই দেশের উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে। এমন আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমরা তো অকারণে অযৌক্তিক আবদার করছি না। উভয় অংশের মানুষকেই বাঁচতে হবে বাঁচাতে হবে। তার জন্য আলোচনা করে অংশীদারিত্ব ঠিক করতে হবে। মনে রাখবেন, মানুষের মরণাশঙ্কা জেনেও আমরা যদি মমতার আবদারের কাছে নতি স্বীকার করি আর ‘মোদি কৌশলে’ স্বস্তি পেয়ে যাই, তবে তা কিন্তু দেশের ও দেশবাসীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতাই করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2020 SwadeshNews24
Site Customized By NewsTech.Com