মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে অনেক সমস্যার সঙ্গে চারটি সমস্যা তাড়া করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। আদালত, আইএস, কংগ্রেস ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন—এই চার নিয়ে অনেকটাই বিড়ম্বনায় তিনি। গত সোমবার জার্মানিতে অনুষ্ঠিত জি-৭ সম্মেলনে দেওয়া প্রেসিডেন্ট ওবামার বক্তব্যে এসব সমস্যা নিয়ে তাঁর হতাশাই ফুটে উঠেছে।
বিশ্বের শক্তিধরদের শীর্ষ সম্মেলনে ওবামা বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে জেগে উঠা জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকে দমন করার সঠিক কোনো কর্মকৌশল এখনো গ্রহণ করা হয়নি। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধ ঘোষণাকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছেও তাঁর এ বক্তব্য নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টার পাশাপাশি উচ্চ আদালতকেও মোকাবিলা করতে হচ্ছে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। বহুল আলোচিত অভিবাসন সংস্কার নিয়ে তাঁর নির্বাহী আদেশের বাস্তবায়ন এখন আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে অভিবাসন সংস্কার করতে পারেন কি না, তা নিয়ে পূর্ণাঙ্গ শুনানি হবে আদালতে। এর মধ্যে নির্বাহী আদেশের বাস্তবায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছে টেক্সাসের উচ্চ আদালত। স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদালতে গেলেও কোনো ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়নি। শুনানির দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত আসবে, এ নিয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।
প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর ক্ষমতার অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে অভিবাসন সংস্কার নিয়ে আদৌ কিছু করতে পারবেন কি না, এ নিয়ে এখন সন্দিহান অভিবাসী গ্রুপগুলো। অবশ্য ওবামা এখনো বলছেন, কংগ্রেস যেন তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমন্বিত অভিবাসন সংস্কার আইন প্রণয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তবে রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের অগ্রাধিকার তালিকায় অভিবাসন সংস্কার আইন প্রণয়নের বিষয়টি অনুপস্থিত।
শুধু অভিবাসন সংস্কার নয়, প্রেসিডেন্ট ওবামার সমন্বিত স্বাস্থ্যবিমা আইনের বাস্তবায়নের নানা দিকও এখন আদালতে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। ওবামা কেয়ার নামে পরিচিত সর্বজনীন স্বাস্থ্য বিমার বিরুদ্ধে রিপাবলিকানদের প্রচারণা এখনো তুঙ্গে।
দ্বিতীয় দফা নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতিশ্রুতি ছিল ইরাক থেকে দ্রুত মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার। তড়িঘড়ি করে ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্তে রিপাবলিকানদের আপত্তি ছিল গোড়া থেকেই। এখন সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যে আইএসের মতো জঙ্গি গোষ্ঠীর দ্রুত উত্থান রোধে ব্যর্থ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। পুরো পশ্চিমা বিশ্বে আইএস এখন রীতিমত এক আতঙ্কের নাম। এ জঙ্গি গোষ্ঠীকে দমন করার কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের এখনো নেই—প্রেসিডেন্ট ওবামার এমন বক্তব্যে আবার সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে নিয়েও বিড়ম্বনার শেষ নেই প্রেসিডেন্ট ওবামার। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ভূমিকাকে মাথা গরম আচরণ বলে উল্লেখ করেছেন ওবামা। রাশিয়ার ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে তাঁর ওপর। এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, পুতিনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তিনি মাথা গরম করে রাশিয়াকে বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে চান কি না। অন্য দেশের সার্বভৌমত্বকে লঙ্ঘন করার ওপর রাশিয়ার বিশালত্ব নির্ভর করে না—এ বিষয়টি রুশ প্রেসিডেন্টকে অনুধাবন করতে হবে।