বেনাপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোস্টের বৈধ পথে অবৈধভাবে স্বর্ণসহ দেশীয় নানা মূল্যবান সম্পদ পাচারে কতিপয় অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তারা জড়িতের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৩ জুন দুই ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রী ৪ কেজি ৬শ গ্রাম স্বর্ণসহ সে দেশের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে আটক হয়। তারা আটকের আগে বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস সুপারের অফিসে ভিআইপি মর্যাদায় খোশ আলাপে মশগুল ছিল। যদি এ ঘটনায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত কাস্টমসের সহকারী কমিশনার ফরহাদ আল হাসানকে বদলী করেছেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে চেকপোস্ট কাস্টমসের সহকারি কমিশনার বদলি হওয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। খোঁদ কাস্টমস কর্মকর্তাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন।
ইমিগ্রেশনে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারি বিস্ময়ের সূরে বলেন, ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে স্বর্ণসহ আটক হওয়া দুই পাসপোর্ট যাত্রী আটক হওয়া আগে ইমিগ্রেশনের কাস্টম সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারের সাথে খোঁশ গল্প করে বের হলেন। তিনি বহাল তবিয়তে থাকায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে খোদ কাস্টমস কর্মচারীদের মনে।
কিন্তু ঘটনার পর সহকারি কমিশনারকে বদলী হতে হলো। বদলী সহকারি কমিশনারের স্থলে বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) যোগ দিয়েছেন মাহাবুব হাসান। এর আগেও তিনি বেনাপোল চেকপোষ্ট কাস্টমসে দ্বায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এদিকে বেনাপোল বন্দর এলাকায় চায়ের স্টলসহ খন্ডখন্ড আলাপ চারিতায় কাস্টমস কর্মচারিরা সুপার উত্তম কুমারের বিষয়ে অবাক হয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চেকপোস্টে কর্মরত কয়েক কাস্টমস সিপাহী বলেন, এসি স্যার এখানে সব সময় থাকেন না। থাকেন সুপার সাহেব। তিনি সারাদিন সিপাই ও ইন্সপেক্টরদের সাথে থেকে পাসপোর্ট যাত্রীদের হয়রানী করেন। অহেতুক একটু বোকা ধরণের যাত্রীদের ব্যাগ-ব্যাগেজ আটকে দিয়ে ছোট ঘরে ঢোকাতে বলেন। পরে পাশে থাকা পুলিশে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে সর্বনি¤œ ৫’শ থেকে ১০হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করে ছাড়েন। এ সাথে মাঝে মধ্যে তার অফিস রুমে ভিআইপি কিছু মেহমান আসে। ওই সময় তিনি তাদের আপ্যায়নে মরিয়া হয়ে ওঠেন। সাথে করে নোম্যান্সল্যান্ডে গিয়ে নিজের মেহমান দাবি করে দু’দেশের গেটে দ্বায়িত্বরত কর্তাদের বলে ভারতে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু এদিন ৪৬পিছ স্বর্ণের বারসহ সুপার উত্তম স্যারের দুইজন মেহমান ওপাশে আটক হওয়ায় স্থানীয় গোয়েন্দা-কাস্টমসসহ সকল মহলের দৃষ্টি এখন সুপার স্যারের দিকে। তবে, সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দার নিজেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তার দোহায় দিয়ে বলে বেড়াচ্ছে, তিনি আমার আত্মীয়। আমাকে শাস্তি বা বদলি দেওয়ার ক্ষমতা বেনাপোল কাস্টমস হাউস রাখে না। এ সকল কাস্টমস সদস্যরা আরো বলেন, সুপার স্যাারের উপরে ক্ষমতা থাকার কারণে ৪ কেজি ৬’শ গ্রাম স্বর্ণসহ তার মেহমান আটক হলেও উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়ে বদলি করা হলো সহকারি কমিশনার স্যারকে আর বহাল তবিয়তেই রয়ে গেলেন তিনি।
গত ১৩ জুন বিকাল সাড়ে ৫ টার সময় ওই যাত্রীরা বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস হয়ে ভারতে প্রবেশ করার সাথেই আটক হওয়ায় পর্যায়ক্রমে সকল স্থানীয় দৈনিক, জাতীয় ও অনলাইন পত্রিকাগুলো স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট বেনাপোল এবং সহযোগিতা করার তালিকায় অভিযোগের তীর চেকপোস্ট কাস্টমস সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারের দিকে রেখে সংবাদ প্রকাশ করেন। তাতে তিনি ক্রোধে ফেটে পড়েন ও ইমিগ্রেশনে সাংবাদিক প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করেন। স্থানীয় স্বনামধন্য এক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় বেনাপোলে কর্তব্যরত ওই সাংবাদিককে ফেনসিডিল দিয়ে চালান দেওয়ার হুমকি দেয় ওই কাস্টম কর্মকর্তা। অপমান করা হয় আরো কয়েক সাংবাদিকদের। ফলে, সম্মান হারানোর ভয়ে কোন সংবাদকর্মী চেকপোস্ট কাস্টমস এলাকায় প্রবেশ করছেন না।
এদিকে, তার কাছ থেকে বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা নেওয়া বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক নামের সিএন্ডএফ কর্মচারিরা সুপার উত্তম আস্থাভাজন রয়েছেন। সুপার উত্তমের ফাঁদে পড়ে স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের মাঝেও চলছে রশিটানাটানি।
তবে সুকৌশলী সুপার উত্তম চুক্তিতে রফাদফা করে বেশ কয়েকটি পত্রিকায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদটি উল্টো দিকে ঘুরাতে সক্ষম হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েক সাংবাদিক।
ঘটনার পরে ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দাড়িয়ে ওই কাস্টমস সুপার বলেন, এখন থেকে আমার অফিস আর খুলব না। এখানে কোন ভিআইপি বসবে না আর সাংবাদিক দিয়ে সাংবাদিক ধরা হবে। আমি সাংবাদিকদের দেখে নেবো। এবার থেকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন এলাকায় কোন সাংবাদিকদের পেলে ফেন্সিডিল দিয়ে চালান দেবো।
এদিকে কয়েক সিএন্ডএফ এজেন্টের কর্মচারি ও পত্রিকার সংবাদকর্মীরা নিজেদের সুবিধার তাগিদে প্রকাশিত সংবাদ পরদিন উল্টো পক্ষে প্রকাশিত করায় বেনাপোল প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান সবুজ বলেন, গত বৃহস্পতিবার ওই পত্রিকায় যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে এটা খুবই দুঃখ জনক। এ বিষয়ে আমি ওই প্রতিনিধিকে ধিক্কার জানিয়েছি।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দর প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক বলেন, ১৩ই জুন স্বর্ণসহ পাঁচারকারি আটকের ঘটনায় যে পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দারকে দায়ী করে এবং তার বিভিন্ন কূকীর্তি বর্ণনা করে সংবাদ প্রকাশ করলো তার ঠিক একদিন পর সুযোগ বুঝে ওই পত্রিকারই স্থানীয় প্রতিনিধি ও সিএন্ডএফ কর্মচারী সকল ইলেকট্রোনিঙ এবং প্রিন্ট মিডয়ার সাংবাদিকদের স্বর্ণ পাঁচারকারি আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলো তা সাংবাদিক সমাজে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অপরদিকে, বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমসের সহকারি কমিশনারের বদলি ও যোগদানসহ সুপারের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন দেওয়া হয় সুপার উত্তম কুমার সমাদ্দার তার বিরুদ্ধে আনীত অফিযোগ সঠিক নয় জানিয়ে লাইনটি কেটে দেন।
অন্যদিকে, স্বর্ণ পাচারসহ কাস্টমসের দূর্বল নিরাপত্তা ও অকার্যকর স্কানিং মেশিং নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরও তা কার্যকরের তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। যে কারণে কতিপয় অসাধু কাস্টমস কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় বেনপোল আর্ন্তজাতিক চেকপোস্টের বৈধপথে অবৈধভাবে স্বর্ণসহ দেশীয় নানা মুল্যবান সম্পদ দেদারসে পাচার হয়ে যাচ্ছে।