তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ দখলে নিল বাংলাদেশ। রবিবারের ম্যাচে ৯ ওভার হাতে রেখেই ভারতীয়দের দেওয়া টার্গেট টপকে যায় মাশরাফিরা। সঙ্গে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে কোনো সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়েছে টাইগাররা।
ভারতের ইনিংসের ৪৩.৫ ওভারে বৃষ্টি নেমেছিল মিরপুরে। ম্যাচ তাই সামায়িক বন্ধ ছিল; ১০ ওভারের কোটা পূরণ করতে মুস্তাফিজের তখন বাকি ছিল ১ বল। বৃষ্টির পর মাঠে ফিরে সেই বলটি ডেলিভারি করলেন বাংলাদেশের তরুণ পেসার। আর সেই বলে উড়ে গেল ভারতীয় ব্যাটসম্যান রবীন্দ্র জাদেজার স্ট্যাম্প। ম্যাচে নবম উইকেট হারিয়েছে ভারত; আর মুস্তাফিজ নিজের ৬ষ্ঠ উইকেট ঝুলিতে ভরেছেন। ম্যাচের এটা ছিল ৪৪তম ওভার। পরের ওভারটি করতে এলেন পেসার রুবেল হোসেন। ওভারের শেষ বলে লিটন কুমার দাসের গ্লাভসবন্দী হন ভুবনেশ্বর কুমার। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে তাই মাত্র ২০০ রানে প্যাকআপ হয়ে গিয়েছে অতিথি ভারতীয়রা। মহেন্দ্র সিং ধোনির দল অলআউট হয়েছে ৪৫ ওভারে।
রবিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও ভারত। প্রথম ওয়ানডেতে জয় পাওয়ায় এটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সিরিজ জয়ের মিশন। অন্যদিকে ভারতীয়দের জন্য এটি সিরিজ বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। তবে বাংলাদেশি বোলারদের বিশেষ করে মুস্তাফিজের নৈপুণ্যে দলীয় রান ২০০ স্পর্শ করার আগেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসেছে অতিথিরা।
ইনিংসের ৪০ আর নিজের ৮ম ওভারের পর পর ২ বলে ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি ও অক্ষর প্যাটেলকে আউট করেছেন মুস্তাফিজ। এরপর ৪১তম ওভারের শেষ বলে রবীচন্দ্রন অশ্বিনকে আউট করে টানা দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার। ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেকেই পর পর দুই ম্যাচে এমন কৃতীত্ব দেখানো দ্বিতীয় বোলার তিনি। ৪৩.৫ ওভার শেষে ভারতের সংগ্রহ যখন ৮ উইকেট হারিয়ে ১৯৬ রান, তখন বৃষ্টি নামায় ম্যাচ সাময়িক বন্ধ থেকেছে। এরপর ইনিংসের সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ ওভারের। তবে ৪৫ ওভারেই ভারত ২০০ রানে অলআউট হওয়ায় জয়ের জন্য বাংলাদেশের টার্গেট দাঁড়িয়েছে ২০০ রান।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। রানের খাতা খোলার আগেই পেসার মুস্তাফিজের বলে পয়েন্টে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা। এরপর ১২ ওভার পর্যন্ত ভারতকে বিপদমুক্তই রেখেছিলেন শেখর ধাওয়ান ও বিরাট কোহলি। তবে ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলেই কোহিলকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন নাসির হোসেন। অতঃপর ২১তম ওভারে ফের বাংলাদেশকে আনন্দ ভাসিয়েছেন নাসির। এবার ৫৩ রান সংগ্রহ করা ভারতীয় ওপেনার শেখর ধাওয়ানকে লিটন কুমারের গ্লাভসবন্দী করিয়েছেন তিনি। পরের ওভারেই ফের উইকেট পেয়েছে বাংলাদেশ। এবারে বাংলাদেশের সাফল্যের নায়ক পেসার রুবেল হোসেন। রানের খাতা খোলার আগেই আমবতি রাউডুকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন রুবেল; দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়েছেন নাসির।
দলীয় ১১০ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছিল ভারত। তবে ধোনি ও রায়না জুটি গড়ে দলকে নিরাপদ অবস্থানে নেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে সফল হতে দেননি বাংলাদেশের ‘পেস বিস্ময়’ মুস্তাফিজ। রায়নাকে উইকেটরক্ষক লিটন কুমারের ক্যাচ বানিয়ে ৫৩ রানের জুটি ভেঙেছেন তিনি; আরেকবার সাফল্যের আনন্দে মেতেছে বাংলাদেশ। এরপর ৪০তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে ধোনি ও প্যাটেলের উইকেট নিয়ে ভারতের বিপদের ষোলকলা পূর্ণ করেছেন মুস্তাফিজ।
বাংলাদেশ দলে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রথম ম্যাচে জয়ী একাদশই রেখেছে বাংলাদেশ। তবে সফরকারীদের স্কোয়াডে ৩টি পরিবর্তন এসেছে। বাদ গেছেন আজিঙ্ক্য রাহানে, উমেশ যাদব ও মোহিত শর্মা। তাদের জায়গায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন অক্ষর প্যাটেল, আম্বাতি রাইডু ও ধাওয়ান কুলকারনি।
সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দারুণ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। সফরকারী ভারতকে ৭৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে টাইগাররা। নিজের অভিষেক ম্যাচে অসাধারণ বোলিং করেছেন মুস্তাফিজ। একাই ৫ উইকেট নিয়ে তিনি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং মেরুদণ্ড।
এর আগে সফরকারীদের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে ড্র করেছে বাংলাদেশ। ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে হয়েছিল ম্যাচটি।
বাংলাদেশ দল : মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, সাব্বির রহমান, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
ভারত দল : মহেন্দ্র সিং ধোনি (অধিনায়ক), শেখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, আম্বাতি রাইডু, সুরেশ রায়না, জাদেজা, অশ্বিন, অক্ষর প্যাটেল, ভুবনেশ্বর কুমার ও ধাওয়ান কুলকারনি।