একটি করে ম্যাচ ধরে এগুনোর লক্ষ্য নিয়ে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সিরিজ জেতা সারা। এবার বাংলাদেশের সামনে ম্যাচই আছে আর একটি। বাংলাওয়াশের দিকে চোখ রেখে নিয়মরক্ষার এই শেষ ম্যাচও বাংলাদেশ খেলতে নামছে যেন কোনো ওয়ানডে জেতা হয়নি ধরে নিয়ে! ভারতের তো এই সফরে সত্যি সত্যিই জেতা হয়নি কোন ম্যাচ। তৃতীয় ওয়ানডে থেকে অন্তত একটু সান্ত্বনা নিয়ে দেশে ফিরতে চায় মহেন্দ্র সিং ধোনির দল।বুধবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বেলা তিনটায় নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া সিরিজের শেষ ওয়ানডেটিতে তাই উত্তেজনার পারদ নামছে না। উত্তেজনায় কেবল পানি ঢেলে দিতে পারে বৃষ্টি। প্রথম ওয়ানডেতে বৃষ্টির বাধায় এক ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকে। আর দ্বিতীয় ওয়ানডেতে প্রায় দুই ঘণ্টা খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪৭ ওভারে। আগের দুই ম্যাচের চেয়ে এই ম্যাচে বৃষ্টির প্রভাব বেশি থাকার কথা পূর্বাভাস অনুযায়ী। আর তাতে প্রথমবারের মতো সিরিজের কোনো ম্যাচের রিজার্ভ ডেতে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে।
তবে বৃষ্টি বাগড়া না দিলে শেষ দুটি ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ও পাকিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারানো মাশরাফির দলকে থামানো কঠিনই হবে অতিথিদের জন্য।
মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অলরাউন্ডার নাসির হোসেন এসে জানালেন, নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে তৃতীয় ওয়ানডেতে জেতা অসম্ভব হবে না। ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে টানা তৃতীয় বাংলাওয়াশের কৃতিত্বে ভাসবে বাংলাদেশ। আর এ লক্ষ্যে স্বাগতিকরা নাকি খেলবে আগের কোনো ম্যাচ জেতা হয়নি ধরে নিয়ে!
সিরিজ নিশ্চিত হলেও কোনো ছাড় নয় বলে আগেই ভারতকে হুঙ্কার দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা এখনও নিজেদের খেলা নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। উন্নতির এখনও অনেক জায়গা আছে মাশরাফিদের, প্রতি ম্যাচে একটু করে হলেও এগুতে চায় চন্দিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। ভারতের জন্য এটা বড় সতর্কবার্তা হবে।
বাংলাদেশের টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা রানের মধ্যে অছেন। তাই সাত নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা নাসির খুব একটা ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না। শেষ পাঁচ ওয়ানডে মিলিয়ে মোটে ২৮ বল খেলেন ‘দ্য ফিনিশার’।
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান ও নাসিরে গড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে উড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে।
আর অন্তত একটি জয় নিয়ে ভারত ফিরতে চাইলে মুস্তাফিজুর রহমানের জবাব খুঁজে পেতে হবে তাদের।মুস্তাফিজের স্লোয়ার, কাটার দুই ম্যাচেই ভারতের সবচেয়ে বড় বাধা ছিল। কোনো ম্যাচেই সেই বাধা এড়াতে পারেনি তারা। কেবল মুস্তাফিজ নন, মাশরাফি, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদদেরও অতিথিদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে।
আকাশ মেঘলা থাকলে বা কম ওভারের ম্যাচ হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে হয়তো চার পেসার নিয়েই খেলবে বাংলাদেশ। তবে ম্যাচের আগের দিন স্বাগতিক দলে আচমকা জুবায়ের হোসেনের উপস্থিতি এই লেগস্পিনারকে খেলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। স্পিন নির্ভর আক্রমণ সাজাতে চাইলে একাদশে ফিরতে পারে বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিও।
একাদশে থাকা দুই স্পিন অলরাউন্ডার সাকিব ও নাসিরের কাছ থেকে যথেষ্ট সহায়তা পাচ্ছেন পেসাররা। দলে যথেষ্ট বোলিং বিকল্প থাকায় বিশ্বের অন্যতম সেরা স্পিনার সাকিবকে ইচ্ছেমত সময়ে বোলিংয়ে আনার সুযোগ পাচ্ছেন মাশরাফি।
দুই ম্যাচেই নিজের ব্যাটসম্যানদের সমালোচনা করেছেন অধিনায়ক ধোনি। ম্যাচ জিততে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সেরাটা চান তিনি। দ্বিতীয় ম্যাচে দলের বিপদ দেখে নিজেকে চার নম্বরে উঠিয়ে এনেছিলেন ধোনি। কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারেননি অধিনায়কও।
প্রথম ম্যাচে ৭৯ রানে এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ উইকেটে হারের পরও বোলারদের পক্ষেই আছেন ধোনি। তবে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ছাড়া ভারতের আর কোনো বোলার প্রথম দুই ম্যাচে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। এই অফস্পিনার বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারেন তৃতীয় ম্যাচেও। রবিন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল ও সুরেশ রায়নারও সহায়তা পেতে পারেন তিনি।
বাংলাদেশ সফরে একটি জয় চাই-ই ভারতের। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে অশ্বিন জানান, জয় দিয়ে মৌসুম শেষ করতে চান তারা।
তবে শেষ ওয়ানডের জন্য উন্মুখ স্বাগতিকরা দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের আগে ছন্দ পতন চায় না। জয় দিয়েই পরের সিরিজের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চায় স্বাগতিকরা।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ভারত ছাড়া বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউ জিল্যান্ড, পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এই চার দলের বিপক্ষেই সিরিজের সব ম্যাচেও জেতার কৃতিত্ব আছে বাংলাদেশের, তাহলে ভারত কেন নয়? শের-ই-বাংলায় আরেকটা বাংলাওয়াশ কেন নয়?REPORT:Jamilur Rahman