ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২৭ জন। এতে আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার ভোর ৫টার দিকে ময়মনসিংহ শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডে ব্যবসায়ী শামীম তালুকদারের নূরানী জর্দা কারখানায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ফ্যাক্টরির মালিক ও ছেলেসহ আটজনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। কারখানার মালিক ছাড়া বাকি সাতজন হলেন- শামীমের ছেলে হেদায়েত হোসেন তালুকদার, কারখানার ম্যানেজার ইকবাল হোসেন, শামীমের আত্মীয় আরমান হোসেন, আলমগীর হোসেন, কারখানার কর্মচারী শামসুল ইসলাম আবদুল হমিদ ও গাড়ি চালক পারভেজ।
জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক শামীমসহ সাত জনকে অাটক করেছে পুলিশ। পুলিশ সদর দপ্তর, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক ধণাঢ্য শামীম তালুকদার প্রতি বছরই যাকাত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবছরও যাকাত দেওয়ার নির্ধারিত ছিল শুক্রবার। আগে থেকেই প্রায় ছয়শ’ কার্ড বিতরণ করে জানানো হয়। শুক্রবার সেহরির পরপরই যাকাতের কাপড় বিতরণের উদ্দেশ্যে জর্দা ফ্যাক্টরির গেট খোলা হয়। এ সময় আগে থেকেই অপেক্ষায় থাকা কয়েক হাজার নারী পুরুষ এক সঙ্গে হুড়োহুড়ি করে গেটের ভেতর ঢুকতে চাইলে পদদলিত হন শতাধিক মানুষ।
এতে পদদলিত হয়ে ঘটনাস্থলেই ১০ জন মারা যান। হতাহতদেরকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে আরও ১৭ জন মারা যান।
ঘটনার পর নূরানী জর্দা ফ্যাক্টরির সামনে মানুষের ফেলে যাওয়া ছেড়া, জুতা, স্যান্ডেল পড়ে থাকতে দেখা যায়।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে, তারা হলেন- শহরের পাটগুদাম বিহারী ক্যাম্পের সিরাজুলের ছেলে সিদ্দিক (১২), নুরু ইসলামের স্ত্রী সখিনা (৪০) তার মেয়ে লামিয়া (০৫), মৃত বারেকের স্ত্রী সামু বেগম (৬০), মৃত জুম রাতির স্ত্রী হাজেরা খাতুন (৭০), মৃত্যুঞ্জয় স্কুল রোডের বসাক পট্রির গবিন্দ বসাকের স্ত্রী মেঘলা বসাক (৫৫), শহরের ধোপাখলা এলাকার নারায়ন চন্দ্র সরকারের স্ত্রী সুধা রানী সরকার (৫৫), মৃত বজেন্দ্রর স্ত্রী রিনা (৬০), মৃত সুলতান মিয়ার স্ত্রী জামেনা বেওয়া (৬৫), চরপাড়া এলাকার হায়দার আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম (৪৫), আকুয়া দক্ষিণ পাড়ার জালালের স্ত্রী নাজমা বেগম (৫০), ফজলু মিয়ার স্ত্রী মোমতাজ বেগম (৪০), সালামের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫৫), রবি হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৫২), কাঠগোলা বাজারের আব্দুল মজিদের স্ত্রী রেজিয়া আক্তার (৫৫), রতন মিয়ার মেয়ে রুবী আক্তার (১২), কাঁচারীঘাট এলাকার মাহাতাব উদ্দিনের স্ত্রী ফজিলা বেগম (৭৫), দরগাপাড়ার রাজা মিয়ার স্ত্রী নাজমা আক্তার (৬০), থানাঘাট এলাকার আব্দুস সালেকের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৫০), চর ঈশ্বরদিয়ার লাল মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৬০), তারাকান্দা থানার বালিডাঙ্গা গ্রামের মোসলেম মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম (৫০), কালিবাড়ি এলাকার শফিকুল ইসলামের স্ত্রী আঙ্গুরী বেগম (৩৫). ত্রিশালের বালিপাড়া গ্রামের আঞ্জু মিয়ার স্ত্রী সাহরন বেগম (৪০) ও জামালপুর জেলার হরিণাকান্দা গ্রামের আবুল হোসেনের কন্যা ইতি বেগম (১২)।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে পুলিশ সদর দপ্তর, জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঢাকা জেলার অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলামকে প্রধান করে পুলিশ সদর দপ্তরের তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, এপিবিএনের কমান্ডেন্ট মোস্তফা কামাল এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডি অ্যান্ড পিএস বিভাগের এএসপি আফজাল হোসেন। কমিটিকে আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল মানুনকে। এএসপি আবদুর রশিদ এবং ময়মনসিংহ জেলা পুলিশের পরিদর্শক ইমরান হোসেন এতে সদস্য হিসাবে আছেন। এ কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানান ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার (এসপি) মইনুল হক।
এছাড়া অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মল্লিকা খাতুনকে নিয়ে এক সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করেছে ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক মোস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকি জানান, এ কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।