সম্পানায়- সাইমুর রহমান, স্বদেশ নিউজ ২৪.কম: তৃষ্ণার্ত দেহ থেকে জীবনটা চলে যায়। তবু বেঁচে থাকার আর্তি ছিল শিশু সামিউল আলম রাজনের। ঘাতকরা পানি খাওয়ায়নি। পরনের গেঞ্জিতে পানি দিয়ে চেঁটে খেতে বলে। আর চৌকিদার ময়না ২১ সেকেন্ডে একে একে ১৬টি চড় মারে রাজনকে।
শিশু সামিউল আলম রাজনকে বর্বর নির্যাতনের ঘটনার আরো একটি ভিডিওচিত্রে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এক মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওচিত্রে শিশু রাজনকে আরো নৃশংস কায়দায় মারা হয়। ভিডিওটি বর্তমানে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রকাশিত নতুন এই ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, নির্যাতনের দ্বিতীয় পর্যায়ে সামিউলকে গাড়ির গ্যারেজে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মারা হচ্ছিলো। হাতে থাকা রোল দিয়ে আঘাত করে কামরুল। আর তথ্য না দেওয়ার কথা বলে দফায় দফায় চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে ময়না। এক পর্যায়ে টালমাটাল হয়ে রাজন পানি থেকে চায়। কিন্তু ময়না গেঞ্জিতে পানি দিয়ে চেঁটে খেতে বলে।
ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, কামরুলের হাতে থাকা রোলের আঘাতের পর চিৎকার করে ওঠে রাজন। এরপর দুই হাতে অবিরত চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে চৌকিদার ময়না। তখন তারা শিশুটিকে প্রতিযোগিতা করে মারতে থাকে। ময়না সঙ্গীদের উদ্দেশে বলছিলে, ‘মারো, যে যেভাবে পারো মারো, কম্পিটিশন করিয়া মারো…!’
নতুন এই ভিডিওচিত্রে আরো দেখা যায়, এক মিনিট তিন সেকেন্ড থেকে ২৪ সেকেন্ড পর্যন্ত থেমে থেমে রাজনকে চড় দেয় ময়না। এরপর পানি খাওয়ার আকুতি জানালে দূর থেকে বলা হয়, ‘হা কর…!’। তার সামনে পানির বোতল কাঁত করে ধরে ময়না। লোভ দেখিয়ে পানি দেয় গেঞ্জিতে। এমন সময় মুখে দূর থেকে পানি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পানি মুখে না পড়ে পড়েছিল পরনের ময়লা গেঞ্জিতে। গেঞ্জি দিয়ে অনেকটা আঁচল পেতে পানি ভিক্ষা চেয়েছিলো রাজন।
এর আগে প্রথম ভিডিওচিত্রটিতেও ‘আমারে পানি খাওয়াও রেবা’-এমন আকুতি জানাতে দেখা গেছে রাজনকে। কিন্তু ঘাতকরা তাকে পানির বদলে ঘাম খেতে বলেছিল।
ইতোপূর্বে শিশু রাজনকে নির্যাতনের ঘটনায় ২৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ডের একটি ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়লে দেশে-বিদেশে তোলপাড় শুরু হয়। ঘাতকদের শাস্তির দাবিতে স্বোচ্ছার হয়ে ওঠেন সবাই।
গত ০৮ জুলাই রাজনকে পিটিয়ে হত্যার পর বেলা পৌনে ১টার দিকে একটি মাইক্রোবাস যোগে (ঢাকা মেট্টো-চ-৫৪-০৫১৬) শিশু রাজনের মরদেহ গুম করার চেষ্টা করা হয়। এদিন জনতা ধাওয়া করে মুহিত আলমকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে।
নিহত রাজন কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন সিলেট সদর উপজেলার কান্দিগাঁও ইউনিয়নের বাদেআলী গ্রামের মাইক্রোবাস চালক শেখ আজিজুর রহমানের ছেলে। রাজনকে হত্যার নির্মম নির্যাতনের ভিডিওচিত্র প্রকাশ হওয়ার পর সিলেটসহ দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।