ঈদ কেনাকাটার শেষ মুহূর্তে টানা বৃষ্টিতে অনেকটা জলমগ্ন রাজধানী। বৃষ্টির পানি জমে রাজধানীর বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ঈদের আগ মুহূর্তে ভোগান্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বুধবার ভোররাত থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ঢাকায় ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। মওসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে বর্ষার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আগামী দু’একদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। ঈদের দিনও হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। তাই অনেকে পরিবার নিয়ে বের হয়েছিলেন কেনাকাটা করতে। কিন্তু দিনভর বৃষ্টিতে ভোগান্তি হয়েছে তাদের। অনেক বিপণি বিতান ও সামনের রাস্তায় বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। গতকাল দুপুরে নিউমার্কেট এলাকায় সরজমিন দেখা যায়, বৃষ্টির পানিতে নিউমার্কেটের নিচতলার অধিকাংশ দোকানপাট পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি জমেছে। নিউমার্কেট ও আশেপাশের এলাকায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। রাজধানীর অন্যতম এ মার্কেটে জলাবদ্ধতায় মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগ চরমে ঊঠে। এ মার্কেটের বহু দোকানিকে বৃষ্টি থেকে তাদের জিনিসপত্র রক্ষার চেষ্টা করতে দেখা গেছে। আবার কিছু কিছু ক্রেতাকে বৃষ্টিতে ভিজেও তাদের ঈদের কেনাকাটা করতে দেখা যায়। এছাড়া, নিউমার্কেট এলাকার আশেপাশের ফুটপাথের হকারদের দোকানপাটও বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। সায়েন্স ল্যাব থেকে নিউমার্কেট হয়ে বলাকা পর্যন্ত এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা ও যাত্রীরা। জলাবদ্ধতার কারণে মিরপুর রোডে দেখা দিয়েছে যানজটও। মৌচাক এলাকার মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিং কমপ্লেক্স, মালিবাগের হোসাফ টাওয়ার কমপ্লেক্স, শান্তিনগর এলাকার টুইন টাওয়ার কনকর্ড শপিং কমপ্লেক্স ও ট্রপিক্যাল রাজিয়া শপিং কমপ্লেক্সের সামনে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে ক্রেতারা পড়েন ভোগান্তিতে। সেই সঙ্গে ওই সব এলাকায় দেখা দেয় যানজটও। রাজধানীর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরে নোংরা হাঁটুপানি। বসার টুল দোকানে তুলে রেখেছেন অনেক দোকানদার। ক্রেতা যারা আসছেন হাঁটুপানিতে নেমেই করছেন কেনাকাটা। তাদের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এমনই একজন রুম্পা খান। এসেছেন উত্তরা থেকে। তিনি জানান, ২৭ রোজার পর ভিড় কমবে এই আসাতেই কেনাকাটা করেননি এতদিন। গতকাল সকাল ১২টার দিকে এসেছেন এই মার্কেটে। হাঁটুপানিতে নেমেই সারছেন কেনাকাটা। এই মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানান, মৌচাক মার্কেটে জলাবদ্ধতা নতুন কিছু না। বৃষ্টি হলেই এই মার্কেট ডোবে। দোকান গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। ক্রেতারা আসতে চায় না। সমস্যাটার কেউ সমাধানও করে না। লস হয় ব্যবসায়ীদের।
একই রকম জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে পাশের গাউছিয়া মার্কেটের কিছু অংশেও। দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায় এই মার্কেটের উত্তরদিকে রাস্তার পাশের দোকানদাররা দোকান খুলতে পারেননি। ময়লা পানি মাড়িয়ে রাস্তা চলাচল করতে হয়েছে মানুষকে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গ্রীনরোড ও পান্থপথ এলাকায় ছিল কোমরসমান পানি। পানির ওপর দিয়ে রিকশা চললেও পানির উচ্চতার কারণে রিকশার পাটাতনে পানি চলে আসে। এ সময় কিছুক্ষণ ওই সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। পরে দ্বিগুণ, তিনগুণ বেশি ভাড়ায় রিকশায় চড়ে মানুষ। রিকশা স্বল্পতায় অনেককে কোমরপানিতে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এদিকে আষাঢ়ের শেষ বৃষ্টিতে ভোগান্তির সৃষ্টি হলেও বৈরী আবহাওয়াও বাধা তৈরি করতে পারেনি নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা স্বজনদের। প্রতিকূল আবহাওয়া উপেক্ষা করে বুধবার বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়ির দিকে গেছেন হাজার হাজার মানুষ। রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে একের পর এক বাস ছেড়ে গেছে গ্রামমুখী যাত্রীদের নিয়ে। এছাড়া, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশনেও সারাদিনভর ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়।