পরিবারের সদস্য ও ভক্তরা ফুলেল শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় স্মরণ করলেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে। তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে আজ রোববার গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় নুহাশ পল্লীতে তাঁর কবরের পাশে স্ত্রী ও সন্তানসহ পরিবারের বেশির ভাগ সদস্য ছাড়াও জড়ো হয়েছেন অগণিত ভক্ত। কবর জিয়ারত ছাড়াও বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সবাই। এ ছাড়া, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন এবং ময়মনসিংহে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।
আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন দুই ছেলে নিষাদ ও নিনিতকে নিয়ে নুহাশ পল্লীতে গেলে ভক্তরা তাঁদের এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমান। পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফুল দিয়ে নিষাদ ও নিনিত বাবার কবরে শ্রদ্ধা জানান। শাওন স্বামীর ভক্তদের সঙ্গে কবর জিয়ারত করেন। এ সময় শাওনের সঙ্গে তাঁর বোন সেজুতি ও নাট্যকর্মী চয়নিকা চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। বেলা তিনটার দিকে হুমায়ূন আহমেদের ভাই অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ছোট ভাই কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, তিন বোন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহীদ ও রোকসানা আহমেদসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য হুমায়ূন আহমেদের কবর জিয়ারত করেন।
সকালে মেহের আফরোজ শাওন উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি হুমায়ূনকে কেবল মৃত্যু বা জন্মবার্ষিকীর দিনেই স্মরণ করি না, সারা বছরই তাঁকে স্মরণ করি। কোনো কর্মসূচি দিয়ে তাঁকে স্মরণ করি না। তবে হুমায়ূন আহমেদ জীবিত থাকাকালে তাঁর প্রিয় মানুষটি তাঁর বাবার মৃত্যুর দিনটি পারিবারিকভাবে যেভাবে পালন করতেন, আমিও আমার প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর দিনটি সেভাবেই পালন করার চেষ্টা করি। তিনি (হুমায়ূন আহমেদ) তাঁর বাবার মৃত্যুর দিনে পারিবারিকভাবে মিলাদ, কোরআন তিলাওয়াত ও কবর জিয়ারত করতেন। আমরাও তা করে থাকি।’
শাওন আরও বলেন, ‘এবার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনটি ঈদের দিন হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ১৩ জুলাই রোজার মধ্যে স্থানীয় এতিমখানার শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিলাদ মাহফিল, কোরআন তিলাওয়াত ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে আমরাও অংশ নিয়েছিলাম।’
স্বামীর ক্যানসার হাসপাতাল স্থাপনের ইচ্ছার বিষয়ে সাংবাদিকদের শাওন বলেন, ‘হুমায়ূনের এ স্বপ্নটা আমরাও পোষণ করি, লালন করি। কিন্তু বড় আকারে ওই হাসপাতাল স্থাপনের জন্য যেভাবে প্রিপারেশনটা দরকার, সেই প্রিপারেশনটা আমার একার নেই। এ জন্য অনেক মানুষকে একত্রিত করা দরকার।’
আজ সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে হুমায়ূন আহমেদের শত শত ভক্ত নুহাশ পল্লীতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। তাঁদের অনেকেই প্রিয় লেখকের কবরে ফুল দেন এবং নীরবে দাঁড়িয়ে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক আবু নাসের বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নুহাশ পল্লীতে আসেন। তিনি বলেন, ‘হুমায়ূন স্যারের রাশির সঙ্গে আমার স্ত্রীর রাশির মিল রয়েছে। হুমায়ূন স্যারের প্রতি আমাদের আলাদা একটা টান রয়েছে। তিনি বৃষ্টিকে খুব ভালোবাসতেন। তাই তাঁর ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আমরাও বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাঁর কবরের পাশে এসেছি।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ১৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। নেত্রকোনার কেন্দুয়া গ্রামে তিনি ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে হত্যার জন্য গুলি ছুড়লেও অলৌকিকভাবে তিনি বেঁচে যান। ২০১১ সালে তাঁর ক্যানসার ধরা পড়লে পরের বছরের মাঝামাঝি সময় তাঁর অন্ত্রে অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে অস্ত্রোপচারের স্থানে ইনফেকশন হলে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই তাঁর মৃত্যু হয়।