আনোয়ার হোসেন রানা,ধামরাই প্রতিনিধিঃ
সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাত তলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে ২৫ দিন বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে সোমবার পুলিশ শিশুটির বাবা ফজলুল হক ও ফজলকে ও শিশুটির মায়ের ফুফু সম্পর্কে নানী জবেদা খাতুনকে আটক করেছে। ফুটফুটে ওই শিশুটির নাম আবদুল্লাহ্। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাত্র পঁচিশ দিন বয়সী এ শিশুটিই শিকার হলো পৃথিবীর বর্বরতা ও নৃশংসতার। জন্মের পর সুস্থ্য হয়ে মায়ের কোলে বাড়ি ফেরার কথা যার, তাকে কিনা জন্ম নেওয়ার কয়েক দিন পরই লাশ হয়ে ফিরে যেতে হলো নাফিরার দেশে। শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ।
এ হত্যাকান্ডের জন্য ঘাতক বেছে নিয়েছে একটি হাসপাতালকে। কি অপরাধছিল নিষ্পাপ শিশুটির যে তাকে সাত তলা থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হলো ? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এ ঘটনায় স্তম্ভিত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হতবাক পুলিশ প্রশাসন। আদরের প্রিয় সন্তানের এমন নিষ্ঠুর আর অমানবিক পরিণতি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মা নুরুন্নাহার। বুকফাটা আর্তনাদে মাতম করবেন সেই সুযোগও নেই তার। শোক প্রকাশের ভাষা তো জন্ম থেকেই পাননি বাকপ্রতিবন্ধী মা। আত্মীয়রা যখন শোকে মূহ্যমান তখন প্রিয় সন্তান হারানোর শোকে নিথর পাথর বাকপ্রতিবন্ধী নুরুন্নাহার। তার শোকের অশ্রুই দেখা গেলো প্রতিবেশিদের মাঝে। শিশুটির বাবা ফজলুল হক পেশায় গাড়ি চালক। থাকেন সাভার পৌরসভার জামসিং মহল্লায়। সাভারের একটি ক্লিনিকে সন্তান ভূমিষ্ট হবার পর রক্তে জীবাণুর সংক্রমণ ও মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু আবদুল্লাহকে গত ৬ জুলাই উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসেন এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সেখানে শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. শাহীন আক্তারের তত্ত্বাবধানে মাত্র চারদিন বয়সী শিশুটিকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালের নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। আর নবজাতকের মাকে রাখা হয় ৭১৬ নম্বর কেবিনে। সুস্থ্য হওয়ার পর হাসপাতালের ছাড়পত্রের সঙ্গে শিশুটিকে পাঠানো হয় তার মায়ের কাছে। রবিবার দিনগত রাতে একই কেবিনে অবস্থান করছিলেন মা নুরুন্নাহার (২৫), তার ফুফু জবেদা খাতুন (৫০) ও স্বামী ফজলুল হক। রাত দুটোয় মায়ের বুকের দুধ পান করার পর শিশুটিকে নিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন।
ফজুলল হক জানান, ভোর আনুমানিক চারটার দিকে আমার ফুফু শাশুড়ি আমাদের ডেকে তোলেন। তিনি জানান, বাবুকে (আবদুল্লাহ) পাওয়া যাচ্ছে না। গেটে যোগাযোগ করে তারা জানতে পারে, শিশুটিকে নিয়ে কেউ বের হয়নি।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এর কিছুক্ষণ পর খবর পাই, আমার শিশুটির নিথর দেহ পড়ে আছে হাসপাতালের নিচে। সেখান থেকে ওয়ার্ড বয়রা শিশুটিকে তুলে নিয়ে আসার পর দায়িত্বরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের আনসার সদস্য বাবুল হোসেন জানান, এ হাসপাতালের ইতিহাসে কখনো শিশু চুরির ঘটনা ঘটেনি। অভিযোগটি পাবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সবাইকে সর্তক হতে বলি। শুরু করি খোঁজাখুঁজি। পরে কেবিনে গিয়ে দেখি, জানালা বরাবর শিশুটিকে জড়িয়ে রাখা কাপরগুলো পড়ে আছে। পরে সেই বরাবর নিচে গিয়েই ওর নিথর দেহ পাওয়া যায়।
হাসপাতালের নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, যেখানে শিশুটির নিথর দেহ পাওয়া যায়, ঠিক সেখানেই শিশুটির খোঁজ করছিলেন জবেদা খাতুন। তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় আমাদের সন্দেহ হয়। পরে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকেও প্রাথমিকভাবে জবেদা খাতুনকে অভিযুক্ত করা হলে, আমরা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দিই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জবেদা খাতুন বলেন, আমি নাতির সঙ্গে ছিলাম। নাতির খোঁজ করতে গিয়েই আমাকে সন্দেহ করে আটক করা হলো। সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শিশুটির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সাভার মডেল থানা উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আসাদুজ্জামান জানান, শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার শিশুটির বাবা ও সম্পর্কে এক নানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
সাভার মডেল থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান জানান, আটককৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাতেই থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।
হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. এনামুর রহমান এমপি জানান, এমন নির্মম ঘটনায় আমরা হতবাক। প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দ্রুত শিশুটি’র খুনিদের সনাক্ত করতে।