জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করার নামে দলীয় নেতাকর্মীদের চাঁদা তোলার প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকার সম্পাদক গোলাম মোর্তোজা। তিনি বলেছেন, ‘যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে জোর করে সেই বাস নিয়ে, পিকনিক আমেজে টুঙ্গিপাড়ায়ও যাওয়ার দরকার নেই। এর মাধ্যমে শোকের মাস-দিনকে উৎসবে পরিণত করা হয়েছে’।
বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব বলেন।
১৫ আগস্ট জন্মদিন পালনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুকে ‘সবচেয়ে বড়ভাবে অশ্রদ্ধা-অসম্মানের’ রেওয়াজ শুরু করেছেন বলেও মন্তব্য করেন এই সাংবাদিক।
গোলাম মোর্তোজার ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো:
১. আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার যত রকমের চেষ্টা সম্ভব, তার সবই সেই সময় করা হয়েছে। চেষ্টাকারীরা ধারণা করেছিল, তারা সফল হয়েছে। এভাবে যে সফল হওয়া যায় না, ইতিহাস তার প্রমাণ। বঙ্গবন্ধু আরও জোরালোভাবে ফিরে এসেছেন জনগণের মাঝে। সেই বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা স্মরণ করার নামে চাঁদাবাজি করবে, শোকের নামে পিকনিকের পরিবেশ তৈরি করবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনোভাবেই কাম্য নয়, শোকের দিনে কেক কেটে জন্ম উৎসব পালন।
আগস্ট বাঙালির জীবনে শোকের মাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একজন সাহসী-সংগ্রামী, জনগণের কাছে দায়বদ্ধ মানুষ ছিলেন। এই মানুষটিকে কেন্দ্র করে একটি জাতি একটি দেশ অর্জন করেছে। সেই মানুষটিকে, তার পরিবারের শিশু-নারীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছরের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের শাসনকাল নিয়ে নিশ্চয়ই তর্ক-বিতর্ক, আলোচনা-সমালোচনা করার সুযোগ আছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা-অসম্মান করার অধিকার নেই, কারও থাকা উচিত নয়।
খুনিদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে মোশতাক-জিয়া-এরশাদ অশ্রদ্ধা, অসম্মান করেছেন বঙ্গবন্ধুকে। চরম বিভাজিত রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধুকে সবচেয়ে বড়ভাবে অশ্রদ্ধা-অসম্মান করানোর রেওয়াজ শুরু করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে দিয়ে। সাকাচৌদের মতো দানবরা ছিল নেপথ্যের বুদ্ধিদাতা। ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করানো হয় খালেদা জিয়াকে দিয়ে। ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কেক কেটে বিএনপি উল্লাস প্রকাশ করে। যখন এই ধারা শুরু হয়েছিল, তখন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকরা মনে কষ্ট পেয়েছেন। জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেননি।
কিন্তু দেশের সাধারণ জনমানুষ, তাদের একটা অংশ হয়ত বিএনপিকে ভোট দেয়, তারাও বিরক্ত-ক্ষিপ্ত হয়, শোকের দিনের জন্মদিন পালনের নামে উল্লাস করায়।
বিএনপি নেতৃবৃন্দকে জনগণের মনের ভাষা বুঝতে হবে। নিজেদের আচরণে গুণগত পরিবর্তন আনা জরুরি। বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বানানোর তত্ত্ব আবিস্কারকদের চেতনা জগতে পরিবর্তন আসা দরকার। ‘জিয়াউর রহমানকে অসম্মান করে বলে, আমরাও অসম্মান করি ‘-এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।
২. শোকের মাস, শোকের দিন পালন হবে স্মরণ করে, সম্মান-শ্রদ্ধা করে, ধর্মীয় ও সামাজিক সাংস্কৃতিক রীতিনীতি, আদর্শ অনুসরণ করে। গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, শোকের মাস-দিনকে উৎসবে পরিণত করা হয়েছে। যে যার অবস্থান থেকে যেভাবে পারে চাঁদাবাজি করছে। বাসভর্তি করে টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন, বাসের ভেতরের পরিবেশ পিকনিকের, উৎসব-উল্লাসের। শোকের কোনো পরিবেশ সেখানে নেই।
৩. বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করার জন্যে চাঁদা তোলার প্রয়োজন নেই। যাত্রীদের ভোগান্তিতে ফেলে জোর করে সেই বাস নিয়ে, পিকনিক আমেজে টুঙ্গিপাড়ায়ও যাওয়ার দরকার নেই।
আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার যত রকমের চেষ্টা সম্ভব, তার সবই সেই সময় করা হয়েছে। চেষ্টাকারীরা ধারণা করেছিল, তারা সফল হয়েছে। এভাবে যে সফল হওয়া যায় না, ইতিহাস তার প্রমাণ। বঙ্গবন্ধু আরও জোরালোভাবে ফিরে এসেছেন জনগণের মাঝে। সেই বঙ্গবন্ধুর অনুসারীরা স্মরণ করার নামে চাঁদাবাজি করবে, শোকের নামে পিকনিকের পরিবেশ তৈরি করবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কোনোভাবেই কাম্য নয়, শোকের দিনে কেক কেটে জন্ম উৎসব পালন।