দুই স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া মেটাতে প্রথম স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী জুয়েল বিশ্বাসকে বুধবার ধানমণ্ডি থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ।
এসময় মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দুই স্ত্রীর মধ্যে কলহ মেটাতে প্রথম স্ত্রী নাসিমাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে জুয়েল।’
তিনি বলেন, জুয়েলের স্বীকারোক্তি থেকে জানা গেছে, সে ঢাকা শহরে ভাসমান হিসেবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করতেন। গত ছয় বছর আগে রংমিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সেখানকার গৃহপরিচারিকা নিহত নাসিমা বেগমের সাথে (২৫) প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করেন। তখন কাবিননামায় জুয়েল তার আসল নাম-পরিচয় ও ঠিকানা গোপন করে ইমন নাম ব্যবহার করে। এই বিয়ের কথা জুয়েল তার পরিবারের নিকট গোপন রাখেন এবং কখনই নাসিমাকে নিজ বাড়িতে নেননি জুয়েল। জুয়েল-নাসিমার সংসারে ৪-৫ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘তিন বছর পর জুয়েল তার নিজ এলাকায় প্রথম বিয়ের কথা গোপন রেখে সুমি নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। এই সংসারেও দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। এক পর্যায়ে দুই স্ত্রী মধ্যে যোগাযোগ হলে তারা বিবাদে জড়িয়ে পড়েন।’
মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, প্রথম স্ত্রী নাসিমা যেহেতু জুয়েলের সত্যিকারের পরিচয় জানতেন না এবং নাসিমার আর্থিক অবস্থাও ভাল না, তাই বিবাদ মেটাতে প্রথম স্ত্রীকে খুন করার সিদ্ধান্ত নেয় জুয়েল। খুনের উদ্দেশ্যে জুয়েল ছয় মাস আগে নাসিমাকে নিয়ে যাত্রাবাড়ীতে একটি বাসা ভাড়া নেয়। কিন্তু সেবার জুয়েল ব্যর্থ হয়। পরে ২৬ জুন কামরাঙ্গীচর থানাধীন পশ্চিম রসুলপুরস্থ একটি বাড়ির তিন তলার একটি বাসা বাড়া নেয়। ২৮ জুন দিবাগত রাত দেড়টার দিকে জুয়েল-নাসিমার সন্তান ঘুমিয়ে পড়লে খেলার ছলে স্ত্রী নাসিমার দুই হাত ওড়না দিয়ে বেঁধে গলা টিপে হত্যা করে স্বামী জুয়েল। রাত পোহালে জুয়েল ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি জানান, ঘটনার দু’দিন পর ৩০ জুন তিন তলার একটি তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে পচা-দুর্গন্ধ পেয়ে বাড়িওয়ালা পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে নাসিমার মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায়। ঘরে থাকা জুয়েলের ছবি ও মোবাইল নম্বরকে আলামত হিসেবে নিয়ে পুলিশ তদন্তে নামে। এক মাসের অনুসন্ধানের পর বুধবার জুয়েলকে তার ভাইয়ের ধানমণ্ডির বাসা থেকে আটক করে পুলিশ।
নাসিমা হত্যার ঘটনায় কামরাঙ্গীচর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছেন বলেও জানান তিনি।