মাঠে অবিশ্বাস্য কীর্তির জন্ম দেওয়া নতুন নয় তাঁর কাছে। কিন্তু কাল রাতে লিওনেল মেসি যা করলেন, সেটা অবিশ্বাস্যের মাত্রাকেও ছাড়িয়ে গেল। মাঝরাতে খেলাটি যাঁরা দেখছিলেন, অনেকেই হয়তো দ্বিধায় পড়ে গেলেন—যা দেখছি সত্যি তো! শান্ত ব্যবহার, মুখে সব সময়ই হাসি, প্রতিপক্ষকে সব সময়ই সম্মান দেখানোর জন্য প্রশংসিত মেসি সামান্য ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ঢুস মেরে বসলেন। শুধু তা-ই নয়, ভয়ংকর খেপে গিয়ে চেপে ধরলেন টুঁটি!
কাল রাতে হোয়ান গাম্পার ট্রফিতে ইতালির রোমার সঙ্গে প্রীতি ম্যাচে ঘটে গেল এই অপ্রীতিকর ঘটনা। ডিফেন্ডার এমাপো ইয়াঙ্গা এমবিয়ার টুঁটি চেপে ধরে ফুটবল বিশ্বকেই চমকে দিয়েছেন মেসি। প্রীতি ম্যাচ আর তাঁর নামের প্রতি সম্মান দেখিয়ে রেফারি কেবল হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ হলে লাল কার্ডের পাশাপাশি কমপক্ষে তিন ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতেন বার্সেলোনার আর্জেন্টিনা তারকা।
লম্বা ছুটির পর মৌসুমে এই প্রথম খেলতে নেমেছিলেন মেসি। আরেক তারকা নেইমারও কাল প্রথম মাঠে নেমেছিলেন। প্রাক-মৌসুমে চার ম্যাচে মাত্র একটিতে জয় পাওয়া বার্সা দলের দুই প্রাণভোমরাকে পেয়ে খেলছিলও অসাধারণ। মেসি-নেইমার যুগলবন্দীতে প্রথম গোলও পেয়ে যায় বার্সা ২৬ মিনিটের মাথায়। এর আগে একের পর এক আক্রমণও শাণায়। কোপা আমেরিকার হতাশা মুছে মেসি খেলছিলেন দুর্দান্ত। কিন্তু কিন্তু খেলার ৩৩ মিনিটের মাথায় সেই ঘটনা, মেসির ক্যারিয়ারেই যা কালো দাগ ফেলে দিল।
ফরাসি ডিফেন্ডার এমবিয়ার সঙ্গে ঝামেলা বাঁধিয়ে বসেন মেসি। শুরুটা করেছিলেন এমবিয়া। রোমার অর্ধে বল নিয়ে এগোচ্ছিলেন মেসি, তাঁকে পাহারা দিয়ে রাখার দায়িত্বে ছিলেন এমবিয়া। নেইমারকে পাস দিয়ে মেসি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় এমবিয়া যেভাবে মেসিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন, সেটা হয়তো পছন্দ হয়নি তাঁর। নেইমারের কাছ থেকে ফিরতি পাস পেয়ে বল নিয়ে কারিকুরি বক্সে ঢুকে পড়েন। সামনে কেবল গোলরক্ষক। এ সময়ই রেফারির অফসাইডের বাঁশি।
এমবিয়া হয়তো আগে থেকেই মেসিকে উসকে দেওয়া চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এসবে মেসির অপরাধের পক্ষে কোনোভাবেই সাফাই গাওয়া যায় না। মেসি ‘মেসি’ হয়ে উঠেছেন শুধু তাঁর প্রতিভা বা সামর্থ্যের কারণে নয়; আচরণের কারণে। মেসি সেই খেলোয়াড়, প্রতিপক্ষ তাঁকে কড়া ট্যাকেলে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করলেও উঠে দাঁড়িয়ে বল নিয়ে ছোটার চেষ্টা করেন। কখনো ডাইভ দেন না। এত দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একবারই লাল কার্ড দেখেছেন, সেটিও আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেকে। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে আর দাগ পড়তে দেননি।
প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের উসকানি নতুন নয়। মেসি এক-দুবার যে মেজাজ হারাননি, তাও নয়। কিন্তু কালকের মেসি সবার অচেনা। এই ঘটনার ভিডিও দেখলে মেসি নিজেও লজ্জা পাবেন। পেয়েছেন নিশ্চয়ই। এমবিয়ার কী এক কথাতে খেপে গিয়ে মাথায় মাথা ঠুকে ঢুস মারলেন। এর পর খুনির মেজাজে চেপে ধরলেন টুঁটি।
কোপায় ব্যর্থতা, এর পর গ্যাবন নিয়ে নানা সমালোচনা। সব মুখ বুজে সহ্য করে চলা মেসির ভেতরে ফুঁসতে থাকা আগ্নেয়গিরিটা যেন ভিসুবিয়াস হয়ে উঠল। এমন মেসিকে মাঠে দেখতে চাইবে না কেউ।