তাইওয়ানের কম্পিউটার নির্মাতা হিসেবেই পরিচিত আসুস। কিন্তু আসুসের লক্ষ্য এখন আর শুধু কম্পিউটারের আটকে নেই। এখন স্মার্টফোন তৈরিতেই বেশি আগ্রহ আসুসের। এ ছাড়াও একই পণ্য যাতে বিভিন্ন রূপে ব্যবহার করা যায়, এ রকম ‘কনভার্টিবল’ পণ্য তৈরিতেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি ভারত সফরে এসেছেন আসুসটেকের চেয়ারম্যান জনি শি। কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির বদলে যাওয়া লক্ষ্য নিয়ে আইএএনএসকে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
জনি শি বলেন, ‘বিশ্ব এখন ক্লাউড ফার্স্ট, মোবাইল ফার্স্ট প্ল্যাটফর্মের দিকে ঝুঁকে পড়ায় পিসির বাজার এখন ধীরে ধীরে পড়তির দিকে। আসুস তাই আধুনিক প্রযুক্তি তরঙ্গে সঙ্গে মিশে যেতে চায়। আমাদের গবেষণা ও উন্নয়ন বিভাগ এখন তাই কনভার্টিবল পণ্যের দিকে যাচ্ছে, যেগুলো অধিক উৎপাদনশীল ও চলতি পথেই ব্যবহার উপযোগী।’
ভারতে অনুষ্ঠেয় আসুস জেন ফেস্টিভ্যালে অংশ নেন আসুসটেকের চেয়ারম্যান। এই অনুষ্ঠানে তিনটি নতুন স্মার্টফোন ও কয়েকটি মডেলের ট্যাবলেট উন্মুক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে আইএএনএসকে জনি শি বলেন, মানুষের এখনকার ট্রেন্ড হচ্ছে, একই যন্ত্রে একাধিক কাজ করা যায়—এমন যন্ত্রের ব্যবহার, যা তাদের কাজকে আরও সহজতর করতে পারে। তবে পিসির অভিজ্ঞতার তুলনায় মোবাইল কম্পিউটিং পিছিয়ে আছে।
শিন বলেন, বিশ্ব এখন ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) বা সব যন্ত্রেই ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে মানিয়ে নিচ্ছে। আসুসও তাই গ্রাহকের হাতের নাগালে যন্ত্র সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র বহন করে নেওয়ার ঝামেলা থেকে গ্রাহককে মুক্তি দিতে কাজ করছে আসুস।
আসুসের চেয়ারম্যান বলেন, আসুস বর্তমানে যা মুনাফা করে, তার সাড়ে চার শতাংশ গবেষণার কাজে লাগায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আসুস এক হাজার ৪৫৯০ কোটি মার্কিন ডলার মুনাফা করেছে। প্রতি বছর প্রায় ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তিনি।
বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশের পাশাপাশি মাদারবোর্ড, পিসি, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন তৈরি করছে আসুস। প্রতিষ্ঠানটির মুনাফার ৫০ শতাংশ আসে পিসি ও নোটবুক থেকে। স্মার্টফোন থেকে আসে ২০ শতাংশ মুনাফা। ২০১৭ সাল নাগাদ স্মার্টফোন থেকে ৫০ শতাংশের বেশি মুনাফা করার পরিকল্পনা করছে তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে বাজারে আসুসের জেনফোন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। স্মার্টফোনে ইনটেলের চিপ ব্যবহার করে আসুস।
ফোনে ইনটেলের চিপ ব্যবহার প্রসঙ্গে জনি শি বলেন, ইনটেলের চিপ হচ্ছে বাজারে অন্যান্য প্রসেসরের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। এ ছাড়াও এই প্রসেসর সহজে গরম হয় না। অন্যান্য স্মার্টফোন নির্মাতারা কোয়ালকম বা মিডিয়াটেকের তৈরি প্রসেসর ব্যবহার করে। কারণ তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যেতে ভয় পায়। আসলে মোবাইল প্রসেসরের বাজারে আসতে ইনটেল দেরি করে ফেলেছে। এখন বাজার ধরার চেষ্টা করছে ইনটেল।
বর্তমানে পিসির বাজারে চতুর্থ স্থান দখল করে রেখেছে আসুস। প্রথম স্থানে রয়েছে চীনের লেনোভো।
আসুস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাইক্রোসফটের সঙ্গে চুক্তি করছে তারা। মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেমনির্ভর নতুন পণ্য বাজারে আনবে আসুস।
আসুসের চেয়ারম্যান মাইক্রোসফটের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে বলেন, ট্যাব ও ফ্যাবলেটের ক্ষেত্রে অ্যান্ড্রয়েড তেমন কোনো সুবিধা তৈরি করেনি, কিন্তু মাইক্রোসফট অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মাইক্রোসফটের সফটওয়্যারনির্ভর পণ্যগুলো গ্রাহকদের পছন্দ তালিকায় নতুন মাত্রা যুক্ত করবে।