ভারতের বাজার থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশে পেঁয়াজের দাম কয়েক মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী। সরবরাহ বাড়াতে বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও তার প্রভাব পড়েনি বাজারে। এক সপ্তাহ ধরে মিসর, পাকিস্তান, মিয়ানমার ও চীন থেকে আমদানি হলেও বাজারে এখনো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। বাজার তদারকি না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম কমছে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, ভারতে সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়ে দুই বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। শিলা বৃষ্টিসহ প্রতিকূল আবহাওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ভারতের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী রাজ্যগুলো থেকে সরবরাহ কমে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে পেঁয়াজের দামে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারত সরকার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দিলেও তাতে দাম কমছে না। এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশের বাজারে কয়েক মাস ধরে পণ্যটির সরবরাহ কমে গেছে। এর প্রভাবে ক্রমাগত বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম। গতকাল পাইকারি বাজারে সর্বোচ্চ ৫২ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে পেঁয়াজের দাম আরো বেড়ে যাবে, এমন আশঙ্কায় বিকল্প উৎস থেকে পণ্যটি আমদানি করতে এলসি খোলেন ব্যবসায়ীরা। প্রথম পর্যায়ে পাকিস্তান, মিসর, মিয়ানমার ও চীন থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলেও বাড়তি দামেই তা বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের মেসার্স বাচামিয়া বাণিজ্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. আইয়ুব বলেন, ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। সম্প্রতি কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দাম কিছুটা কমেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম আশানুরূপ কমেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের মহারাষ্ট্রের নাসিক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ এখন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০-৫২ টাকায়। অন্যদিকে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোর উৎপাদিত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা কেজিদরে। এছাড়া পাকিস্তান ও মিসর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৪২-৪৬ টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এছাড়া চীন থেকে বড় জাতের পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও ক্রেতা চাহিদা কম থাকায় এটির দাম কিছুটা কম। বাজারে পেঁয়াজের সংকট তৈরি হওয়ার পর চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম আশানুরূপ কমছে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, ভারতের বাজারে এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রায় ৭০ শতাংশ বেড়ে গেছে। এ কারণে সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানির খরচও বেড়েছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ মজুদ রাখতে এবং বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় বেশি দামেই পণ্যটি কিনতে হচ্ছে এ দেশীয় আমদানিকারকদের। এক্ষেত্রে চীন, মিয়ানমার ও পাকিস্তান থেকে কম দামের পেঁয়াজ আসতে থাকায় একপর্যায়ে দাম সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। তবে দেশে সরবরাহ সংকট থাকায় পেঁয়াজের দাম কমতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। খাতুনগঞ্জের বেশ ক’টি কাঁচামাল আড়তের কর্মকর্তারা জানান, এক মাস ধরে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ কমেছে। এর আগে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ ট্রাক পেঁয়াজ সরবরাহ হলেও বর্তমানে তা পাঁচ-সাত ট্রাকে নেমে এসেছে। চাহিদার চেয়ে বাজারে পেঁয়াজের কম সরবরাহ হওয়ায় দাম সেভাবে কমছে না। আমদানিকারকদের অনেকেই বিকল্প উৎস থেকে পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করলেও সরবরাহ তেমন বাড়েনি। তবে কোরবানির ঈদের আগে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ সরবরাহ হলে দামও সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে আশা করছেন তারা।