আনোয়ার হোসেন রানা,ধামরাই প্রতিনিধিঃ গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য হুক্কা এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য হুক্কাএই হুক্কা এখন আর চোখে পরেনা। বাংলার অন্য সব গ্রামের মতই রাজধানীর অদুরে ধামরাই অঞ্চলে এককালে হুক্কা ছিল ঘরে ঘরে। কদরও ছিল সর্বত্রই। কিন্তু আজ সহসা চোখে পড়ে না। বর্তমান প্রজন্মের কাছে হুক্কা এখন শুধুই ইতিহাস। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পরিচয়ের জন্য হুক্কা সংরক্ষণ এখন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পরেছে। সেকালের হুক্কা বাংলার পল্লী অঞ্চলে সংস্কৃতির প্রাচীন নিদর্শন । একসময় বেশ মনোহর রুপায়ন ছিল এই হুক্কার। ক্ষেত মজুর থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত হুক্কার প্রচলন ছিল। বাহারি রকমের হুক্কা তৈরি হতো নানিকেলের মালাই বা খুঁটি দিয়ে। তার সাথে সাবধানে সংযুক্ত করা হতো কারুকাজের করা কাঠের নল আর তার উপরে মাটির ছিলিম বা কলকি বসিয়ে তামাক সাজানো হতো। এছাড়াও নারিকেলের মালাই ভর্তি থাকতো পানি। সেকালে নিকোটিনের হাত থেকে রেহাই পেতে এ পানি ব্যবহার করা হতো। মহিলা -পুরুষ নির্বিশেষে সবাই হুক্কা টানতো। শীতের সকালে মোড়ল বাড়ির কাচারি পর্যন্ত হুক্কা ছিল দম্ভভরে। হুক্কা টানার সময় একে অপরকে টানতে দেয়। এভাবে বন্ধুত্বের গাঢ়তা প্রকাশ পেত। জমিদার বাড়ির এবং সচ্ছল পরিবারগুলোতে হুক্কা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক। মনোমুগ্ধকর সেসব হুক্কাই থাকতো লম্বা পাইপ,আরদালীরা সেই লম্বা পাইপের মাথায় থাকা হুক্কার তামাক দিতো নলটি মুখে দিয়ে আয়েশ করে হুক্কা টানতো জোতদার শ্রেণির মানুষ। হুক্কা উপকারিতা ছিল অনেক। মানবদেহের পেটে ও পীড়া,শরীরের আঘাত সহ নানাবিধ রোগে হুক্কার পানি ছিল মহাওষুধ। এছাড়াও গরু ক্ষুরা রোগে, চোখ দিয়ে পানি পড়া ,লেহে পোকা ধরাসহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করা হতো হুক্কার পানিদিয়ে। কিন্তু সেই হুক্কা আজ আর নেই। আধুনিক যুগের ছেলে মেয়েরা হুক্কা দেখেনি তাদের সাথে গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য হুক্কার পরিচিতি ঘটানোর জন্য সংরক্ষণ এখনি প্রয়োজন বলে মন্তব্য- সচেতন মহলের। অন্যথায় গ্রাম বাংলার এই হুক্কা শব্দটাই মুছে যাবে নতুন প্রজন্মের কাছথেকে।