অজয় কুন্ডু, মাদারীপুর:
দেশের সব জাতীয় মহাসড়ক কমপক্ষে ২৪ ফুট প্রশস্ত হলেও ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত। তার উপর দুপাশে মাটি নেই। দুপাশের মাটি সরে গেছে বরিশালের গৌরনদী ও মাদারীপুরের রাজৈর ও সদর উপজেলায়। এছাড়া বর্তমানে ফরিদপুর ও মাদারীপুর অংশের বিভিন্ন স্থানে এমন খানখন্দ ও গর্ত সৃষ্টি হয়েছে যে যানবাহন চলাচলে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। গোপনীয় একাধিক সূত্রের অভিযোগ, সড়ক অধিদপ্তর থেকে বিভাগীয়ভাবে ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের দিয়ে মেরামতের নামে কোটি কোটি টাকা গোপনে আত্মসাৎ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার কাজ না হওয়ায় মহাসড়ক দিনে দিনে আরো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এই মহাসড়কটি কবে নাগাদ ঠিক করা সম্ভব হবে তা এখনও নিশ্চিত করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে জানা গেছে, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভূরঘাটা বাসস্টান্ড সংলগ্ন এই স্থানে রাস্তার পাশের মাটি না থাকায় দুটি গাড়ি পরস্পরকে অতিক্রম করার সময় গত এক মাসে বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনা ঘটে। মাত্র ১৮ ফুট প্রশস্ত ও দুপাশে মাটি না থাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষে এবং খাদে পড়ে একই ধরনের কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে মাদারীপুরের কালকিনি ও রাজৈর, বরিশালের গৌরনদী, গোপালগঞ্জের মুকুসুদপুর এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও সদর উপজেলায়। এতে গত এক মাসে অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে বুধবার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের জামতলা নামক স্থানে দুটি লোকাল বাসের মখোমুখি সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়।
ভূরঘাটা এলাকার ইউনুস সরদার বলেন, এই মহাসড়কের ভূরঘাটা থেকে বরিশালের বার্থী পর্যন্ত সড়কের পাশে চওড়া কম। দুর্ঘটনা বেড়েছে চলছে, অনেক লোকের প্রাণহানি হয়েছে। সড়কের দুপাশের মাটি নেই। সরকার এ ব্যাপারে লক্ষ্য রাখলে আমরা কৃতজ্ঞ থাকতাম।
গৌরনদীর ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে উপজেলা পরিষদ পর্যন্ত মহাসড়কে চলার মত জায়গা নেই। দুটি গাড়ি চলাচলের সময় স্থানীয় লোকজনকে রাস্তার পাশে জমিতে নেমে যেতে হয়। মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। এত পরিমাণ দুর্ঘটনায় হয়। এছাড়া ভূরঘাটা থেকে গৌরনদী পর্যন্ত রাস্তার পাশে ঝোঁপ-জঙ্গলে ভরপূর। যা পরিস্কার করারও কোন ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। রাস্তার পিচ থেকে মাটি প্রায় দেড় থেকে দুই ফুটও উচু। এ কারণে চাকা পাকা রাস্তা থেকে নিচে নেমে যাওয়ায় ভূরঘাটা বাসস্ট্যান্ডের কাছে গত ২ মাসে ৫ বার বাস এ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। কালকিনির গোপালপুরের আকতার হোসেন বলেন, জাতীয় মহাসড়কগুলো সাধারণত ২৪ ফুট। আমাদের এই ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুর থেকে বরিশাল পর্যন্ত মাত্র ১৮ ফুট। তারওপর মাটি নেই দুপাশে, তাই বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা যোগাযোগ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
গাড়ির চালক মনোয়ার বেপারী বলেন, গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। কোথাও পাকা রাস্তা থেকে মাটি এত নিচে যে দুর্ঘটনা থেকে বাসটি রক্ষা করতে আমার কষ্ট হয়। অনেকেই সামলাতে না পেরে দুর্ঘটনা ঘটেছে।
সরেজমিনে আরো জানা গেছে, এই মহাসড়কের উপরিভাগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মাদারীপুরের টেকেরহাট বন্দর থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকা। এখানে মহাসড়কের মাঝে হাজারো গর্ত। গাড়ি চলতে গিয়ে প্রচন্ড ঝাঁকুনি ও গাড়ি কাত-চিত হয়ে পড়ে থাকছে। দ্রুত মহাসড়ক মেরামত ও প্রশস্তকরণের দাবী চালক ও যাত্রীসহ সকলের।
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বরিশালের ভূরঘাটা পর্যন্ত দীর্ঘ অংশের দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল। তিনি তার নির্বাহ এলাকায় সড়ক ও জনপদের ফরিপুরের ভাঙ্গা সার্কেল অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে।
দীর্ঘদিন ধরে মাদারীপুর সড়ক বিভাগ থেকে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে ওয়ার্কচার্জ কর্মচারীদের দিয়ে নামে-মাত্র সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করায় সড়ক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের নামে লাখ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হলেও কাজ হয় যতসামান্য। এক্ষেত্রে কোন রাস্তা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং কতটুকু মেরামত করা হয়েছে তার কোন তথ্য-প্রমাণ বা ছবি রাখা হয় না। ফলে এই ক্ষেত্রের কোন জবাবদিহিতা বা স্বচ্ছতা নেই। এই সুযোগ কাজে লাগায় কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবাই। বর্তমানে শুধুমাত্র সড়ক উপরিভাগই নয়, ভেতরের অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
এ বিষেয় জানতে চাইলে মাদারীপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ঈদের আগেই সড়ক মেরামত করতে রিকনস্ট্রাকশন অর্থাৎ নতুন করে সড়কের নির্মাণ কাজ করতে হবে। আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। এক্ষেত্রে অনুমোদন পেলেই টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ করা সম্ভব হবে।
তিনি আরো বলেন, বিভাগীয়ভাবে এই মহাসড়কের বিভিন্ন মেরামত করা হয়েছে এবং যান চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাব ও বেশি বৃষ্টিপাতের কারণে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার অংশের উপরিভাগই নয় ভেতরের অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই অংশটি নতুন করে তৈরি করতে হবে।
তবে বিভাগীয়ভাবে সংস্কার কাজে গত অর্থ বছরে এ পর্যন্ত কত টাকা খরচ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে তা বলতে পারবো না। এই তথ্য আমার কাছে নেই।
উল্লেখ্য, ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে ফরিদপুর হয়ে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী পর্যন্ত মহাসড়কটি চার লেন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রাথমিক জরিপ কাজ সম্পন্ন করেছে সরকার। তবে তা কবে বাস্তবায়িত হবে তা এখনও অনিশ্চিত।