নকটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) থেকে সুবল চন্দ্র দাস ঃ আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর মুসলমান ধর্মালম্বীদের অন্যতম পবিত্র ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। এই কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীর কামারশালাগুলোতে চলছে নির্ঘুম কর্মব্যস্ততা। পোড়া কয়লার গন্ধ, হাপরের হাঁসফাঁস আর হাতুড়ি পেটানোর টুংটাং শব্দে তৈরি হচ্ছে কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহৃত চকচকে ধারালো দা, বঁটি, ছুরি, চাপাতিসহ হরেকরকমের জিনিস। এর ফাঁকে ফাঁকে করছেন পুরাতন অস্ত্রে শাণ দেয়ার কাজ। তাই এ সময়ে দম ফেলার ফুরসৎ নেই কামারদের। ফলে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি চলছে কামারদের একটানা বিরামহীন ব্যস্ততা। উপজেলার কয়েকজন কামারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্রিং লোহা ও কাঁচা লোহা সাধারণত এ দুই ধরনের লোহা ব্যবহার করে এসব উপকরণ তৈরি করা হয়। সপ্রিং লোহা দিয়ে তৈরি উপকরণের মান ভালো, দামও বেশি। আর কাঁচা লোহার তৈরি উপকরণগুলোর দাম তুলনামূলকভাবে কম। লোহার মানভেদে প্রতি কেজি সপ্রিং লোহা ৩৫০-৪০০ টাকা, নরমাল ১৫০-২০০ টাকা, পশুর চামড়া ছাড়ানো ছুরি ৭০ থেকে ২০০, দা ২০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পশু জবাইয়ের ছুরি ৪০০ থেকে শুরু, বঁটি ২০০ থেকে ৪০০, চাপাতি ৫০০ থেকে ১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দা, ছুরি শান দেওয়ার সর্বনিম্ন দাম ৫০ টাকা। তবে কোরবানি মৌসুমে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দাম একটু বেশি বলে জানান তারা। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কটিয়াদী উপজেলার ০৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কটিয়াদী সদর, বেথইর আনন্দ বাজার, লোহাজুরী বাজার, আচমিতা বাজার, গচিহাটা বাজার, ধূলদিয়া বাজার, মসূয়া বাজার, বেতাল বাজার, বোয়ালিয়া বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় অর্ধশতাধিক কামারশালায় শতাধিক শ্রমিক (কামার) মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বর্তমানে এই সব কামারশালাগুলোতে প্রচুর ভিড় লক্ষণীয়। কোরবানিদাতারা কোরবানির পশু কাটাছেড়া করার জন্যে পরিবারের ব্যবহৃত ও অব্যবহৃত সবক’টি দা, ছুরি, চাপাতি, বঁটি শাণ দেয়ার জন্য নিয়ে আসছে কামারদের কাছে। তবে অনেকেই আসছেন নতুন ছুরি কিংবা দা কিনতে বা বানানোর অর্ডার দিয়ে যেতে। ক্রেতা সমাগম বেশি হওয়ায় বিক্রেতারও দাম হাকাচ্ছেন ইচ্ছা মাফিক। সারা বছর অনেকটা অলস সময় পার করা কামাররা ব্যস্ততার ভিড়ে এখন অতিরিক্ত দরদাম করে সময় নষ্ট করতেও আগ্রহী নন। এ সময় কাজের চাপ বেশি হওয়ায় অন্য সময়ের চেয়ে দোকানে মৌসুমি কর্মচারীর সংখ্যা বেড়েছে। দেখা মিলছে মৌসুমি কামারশালারও। অনেক মৌসুমি কামার নতুন দোকান বা খোলা জায়গা ভাড়া নিয়ে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে দা-ছুরি শাণ দেয়ার কাজে নেমে পড়েছেন। কেননা বছর জুড়ে এই কোরবানের মৌসুমেই তাদের জমজমাট ব্যবসা হয়। মুগদিয়া বাজারে কামারশালায় আসা বিল্লাল মিয়া জানান, কোরবানি এলেই অতিরিক্ত ছুরি, চাপাতির প্রয়োজন পড়ে। বছরের অন্যান্য সময় এগুলো অলস পড়ে থেকে জং ধরে ভোতা হয়ে যায়। তাই ছুরি, বঁিট শান দিতে নিয়ে এলাম। নতুন ছুরি ও চাপাতি কিনব। কিন্তু কামাররা চওড়া দাম নিচ্ছেন। টাকা বেশি নিলেও সময়মত সরবরাহ ও গুণগতমান নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেন তিনি। কামার সুকুমার জানান, কোরবানি এলেই দা, বঁটি, ছুরি চাপাতি ইত্যাদি সরঞ্জাম শান দেয়া ও বিক্রি করার ব্যস্ততা বেড়ে যায়। বছরের বাকি সময়টার বেশির ভাগই তাদের হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হয়। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। তাই এই ব্যস্ত সময়ে কাজের লোক পাওয়া খুবই দুরূহ। যারা কাজ করছেন তাদের মজুরিও বেশি। আর কাজের নানা উপকরণের যে হারে দাম বেড়েছে সে অনুপাতে আমরা দাম নিচ্ছি না।