দেশের সাদা সোনা হিসাবে পরিচিতি চিংড়ির সাথে পাল্লা দিয়ে রফতানির তালিকায় ধীরে ধীরে জায়গা করে নিচ্ছে খুলনার উপকূলীয় এলাকার প্রায় অবহেলিত এক জলজ প্রাণী কাঁকড়া। লাভজনক হওয়ায় দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা, মংলা ও রামপাল উপজেলার মানুষ কাঁকড়া চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সুন্দরবনের আশপাশ এলাকার কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে এই কাঁকড়া। বর্তমানে যেখানে বড় সাইজের চিংড়ির সর্বোচ্চ মূল্য কেজিপ্রতি ৫শ’ টাকা থেকে ৮শ’ টাকা, সেখানে একই সাইজের প্রতিকেজি কাঁকড়া বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ টাকা থেকে ১৮শ’ টাকা। ধর্মীয় কারণে দেশের বাজারে তেমন চাহিদা না থাকলেও বিদেশে কাঁকড়ার চাহিদা এখন আকাশছোঁয়া। ফলে কাঁকড়া এখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। খুলনার উপকূলীয় এলাকা দাকোপ উপজেলায় লবণ পানির চিংড়ি ঘের এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। লবণ পানির চিংড়ি ঘেরের পরিবর্তে গত কয়েক বছর থেকে তৈরি হয়েছে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ ঘের (ফ্যাটেনিং ঘের)। এই ঘেরগুলোতে নদীর লবণ পানির সাথে উঠে আসে কাঁকড়ার পোনা। ফলে চিংড়ির মতো বেশি দামে পোনা কিনতে হয় না। সুন্দরবনের বিশাল এলাকা থেকে সংগ্রহ করা বড় কাঁকড়ার সরাসরি রফতানি করা হয়। আর ছোট কাঁকড়াগুলোকে ঘেরে ছেড়ে দিয়ে ১৫-১৬ দিনেই মোটাতাজাকরণ করে রফতানিযোগ্য করে তোলা হয়। বিদেশে জীবিত কাঁকড়াই রফতানি করা হয়। জেলেরা প্রথমে কাঁকড়া ধরে তার কাঁটাযুক্ত পা দুইটি বেঁধে দেন। তারপর নিয়ে আসেন আড়তে। সেখানে সাইজ বাছাই করার পর উপকূলীয় এলাকার কাঁকড়া বিমানে বিদেশে রফতানি করা হয়। এছাড়া মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশ মিলিয়ে মোট ১৮টি দেশে এই কাঁকড়া রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ থেকে প্রথম ১৯৭৭ সালে মাত্র ২ হাজার ডলারের কাঁকড়া রফতানি হয়েছিল। তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে ২০০৮-০৯ অর্থ বছরে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ৯৭৩ টনে। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪ হাজার ৪১৬ টনে। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ৮ হাজার ৫২০ টন। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ অর্থবছরে যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৭৭৬ টনে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, সুন্দরবনের ওপর কাঁকড়া সরবরাহ নির্ভর না করে পোনা উৎ্পাদন এবং হিমায়িত করে কাঁকড়া রফতানি করলে আরো বেশি লাভবান হওয়া যাবে। কারণ বর্তমান রফতানি প্রক্রিয়ায় ২০ শতাংশ কাঁকড়ারই মৃত্যু হয়। এই কাঁকড়াই এক সময় দেশের রফতানি পণ্যের এক নম্বর তালিকায় উঠে আসতে পারে।