আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ সুন্দরগঞ্জের একটি দরিদ্র অসহায় শিশুকে পিস্তলের গুলি ছুঁড়ে আহত করার ঘটনায় সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের সংসদ সদস্য পদ বাতিল, অবিলম্বে তাকে গ্রেফতারের দাবির পাশাপাশি এখন পক্ষেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সোচ্চার হতে শুরু করেছে। তবে এমপি লিটন ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের লিটন বিরোধী ও পক্ষের দুটি গ্র“পের মধ্যে চলমান আন্দোলন অনেকটা দায়সাড়াগ্রস্তের। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে লিটন কর্তৃক শিশুকে পিস্তলের গুলি করে আহত করার বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এব্যাপারে যথেষ্ট তৎপরতা নাই বরং সুন্দরগঞ্জের সামগ্রিক অবস্থা থমথমে। এদিকে এমপি লিটনের পক্ষ সমর্থন করে সুন্দরগঞ্জ আওয়ামী লীগ বুধবার রাতে এক জরুরী সভায় জামায়াত-শিবির চক্রের অপতৎপরতা প্রতিরোধসহ গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
এদিকে এমপি লিটনসহ আরও ১০ জনকে আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় হামলা, লুটপাট ও ভাংচুরের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। জানা গেছে, গত ২ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫ ঘটিকার সময় সাংসদ লিটন চুতর্থ শ্রেণীর ছাত্র শাহাদত হোসেন সৌরভকে গুলি ছুড়ে আহত করে। পরে তিনি সকাল ৮টার দিকে সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামে যান। সেখানে মৃত মোহাম্মদ আলী মন্ডলের ছেলে ভটভটি চালক হাফিজার মন্ডলের বসতবাড়িতে দলবল নিয়ে আকষ্মিকভাবে হামলা চালান। তারা বসতবাড়ি ভাংচুরসহ জিনিষপত্র লুটপাটের মত ঘটনা ঘটায়। এতে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে হাফিজার মন্ডল বাদী হয়ে গত ৬ অক্টোবর সাংসদ লিটনসহ ১০ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ গোপনে তদন্ত চালিয়ে মঙ্গলবার গভীর রাতে এটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু করে। পরে বুধবার রাতে মামলার বিষয়টি পুলিশ সুত্রে প্রকাশ করা হয়।
এব্যাপারে মামলার বাদি হাফিজার রহমান জানান, তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গত রোববার আমার বাড়িতে ভাঙচুর চালায় এমপি লিটন ও তার লোকজন। ঘটনার সময় এমপি লিটন নিজেই উপস্থিত থেকে সেখানে দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েন। এরপর এমপি লিটনের লোকজন আমার বাড়ির ঘরের টিন ও মালামাল এমপির মালিকানাধীন হিমাগারে নিয়ে যায়। এরপর ঘটনাটি মোবাইল ফোনে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানানো হয়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরেজমিনে তদন্ত শেষে ওইদিন সন্ধ্যায় এমপির হিমাগার থেকে টিন ও বিভিন্ন মালামাল উদ্ধার করে হাফিজার রহমানকে ফেরত দেন। স্থানীয় লোকজন জানান, এমপি লিটনের আক্রোশের শিকার হয়ে হাফিজার রহমানের পরিবারটি এখন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এব্যাপারে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই মিল্টন জানান, তিনি এমপির লিটনের হিমাগার থেকে হাফিজার রহমানের বাড়ির টিন ও আসবাবপত্র উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলেন। এর বেশি আর কিছু তিনি জানেন না।
মামলা নিয়ে এই রাখঢাক করার বিষয়টি সম্পর্কে জানা গেছে, অভিযোগটি থানায় দায়ের হওয়ার পর এমপি লিটনের লোকজন তার পক্ষ থেকে থানায় যাতে মামলাটি না হয় সেব্যাপারে জোর তৎপরতা চালানো হয়। কিন্তু এমপি লিটনের ব্যাপারে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকার তথা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ় অবস্থানের কারণে পুলিশ শেষ পর্যন্ত তদন্ত করে মামলাটি গ্রহণ করে এবং সাংবাদিকদেরকে অবহিত করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এমপি লিটনের অবিলম্বে গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, এমপির পদ থেকে অপসারণ এবং দ্রুত বিচার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে বিচারের দাবিতে একটি রঙ্গীন ও দামি কাগজে ছাপানো সুন্দরগঞ্জ এলাকাবাসির পক্ষে একটি পোস্টার গোটা সুন্দরগঞ্জ পৌর এলাকার সর্বত্র লাগানো হয়। এদিকে এমপি লিটনের লোকজন এবং কতিপয় আওয়ামী লীগ সমর্থক দলবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যে কিছু পোস্টার ছিঁড়েও ফেলেছে। এছাড়া এমপি লিটনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক জরুরী সভা বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মঞ্জুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক সাকোয়াত হোসেন স্বপন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, উপজেলা আ’লীগ নেতা ডা. আলম, সাইফুল ইসলাম প্রিন্স, বিশ্বজিত বর্মণ, এম.এ হাবিব সরকার, গোলজার হোসেন, যুবলীগের আহবায়ক রেজাউল আলম রেজা প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া সংসদ সদস্যের বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দলছুট কিছু টাউট বাটপার নেতা জামায়াত ও বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়নে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করছে। আওয়ামী লীগের একাংশের চিহ্নিত কতিপয় জামায়াত-বিএনপি ঘেষা রাজনীতিক নেতা বার বার ঘুরে ঘুরে নানা রকম কর্মসূচী দিয়ে সাংবাদিকদের এক পেষে, মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে নানাভাবে সংবাদ প্রকাশে উদ্বুদ্ধ করেছে। এর পাশাপাশি সুন্দরগঞ্জের জামায়াত-শিবিরের ঐক্যবদ্ধ অপতৎপরতা আবার যাতে সুন্দরগঞ্জকে অশান্ত করে না তুলতে পারে সেজন্য উপজেলার সকল আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সভায় আহবান জানানো হয়।