দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য ও অভিযোগকে হাস্যকর বলে আখ্যায়িত করেছে বিএনপি। দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতা ঢাকতে বিএনপি নেতাদের নিয়ে এই অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, যোগাযোগমন্ত্রী তারা সবাই বলেছেনÑ লন্ডনে বসে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিদেশী খুনের ষড়যন্ত্র করছেন বা করেছেন। তিনি বলেন, বহু বছর আগে মধ্যযুগে একটা বাংলা কবিতা ছিল- বানরে সংগীত গায়, শিলা ভাসে জলে, দেখিয়াও না হয় প্রত্যয়। আমাদের দেশের ক্ষমতাসীনরা আছেন, তারা অবিশ্বাস্য ও হাস্যকর সব কথা বলেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত নাজির উদ্দিন জেহাদের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শহীদ জেহাদ স্মৃতি পরিষদের আলোচনা সভায় নজরুল ইসলাম খান এসব কথা বলেন। বিএনপি স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, লন্ডনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। আজকের যুগে আমরা জানার আগে সরকার জানে তার কবে চোখের অপারেশন হয়েছে, আরেকটা কবে হলো। কখন পায়ের জন্য তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হয়েছিল- সবই জানে। এসব জানার পরও সরকার বাজে কথা বলছে। অপপ্রচারের উদ্দেশ্য একটাই- যে কোন প্রকারে বিএনপিকে হেয় করা। সারা দেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার এবং মামলার সমালোচনা করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন এমন কোন ইউনিয়ন নেই, যেখানে বিএনপি নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার হয়নি। এমন কোন গ্রাম নেই, যেখানে কোন না কোন মানুষ ও বিরোধী দল করার কারণে মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক জীবন যাপন করছেন না। এটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ হতে পারে না। আমরা স্বৈরাচারের কথা বলি। কিন্তু তখনও মানুষের আজকের মতো এরকম অনিশ্চিত জীবন ছিল না। দুই বিদেশী হত্যার প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র এ নেতা বলেন, এটা জাতি হিসেবে লজ্জার। এটা দেশ হিসেবে আমাদের ক্ষতির কারণ। কথায় কথায় জঙ্গিবাদ, কথায় কথায় প্রতিপক্ষকে জঙ্গি বা জঙ্গির সমর্থক বা উস্কানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা এটা করতে করতে বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে প্রশ্নবোধক করে রাখা হয়েছে। ফলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিদেশী হত্যাকা-ের মধ্যদিয়ে ক্ষুণœ ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশী নাগরিকসহ দেশের সকল মানুষের নিরাপত্তার নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। বিদেশীরা না আসলে দেশের কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। দেশে বাণিজ্যে ঘাটতি ও অর্থনীতির ক্ষতি হবে। দেশে অশান্ত পরিবেশ ও শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হবে। তবে ওই অশান্ত পরিবেশের মাধ্যমে আমরা কোন সুবিধা নিতে চাই না। আমরা রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের রাজনৈতিক দাবি আদায় করতে চাই। দেশের স্বার্থ নষ্ট করে নয়। এজন্য আমরা বলতে চাই, দেশের শান্তি শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা হোক। নাজির উদ্দিন জেহাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জেহাদের রক্ত দিয়ে তৈরি হয়েছিল সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য। তার রক্তের বিনিময়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার আত্মার প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা। তবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে না পারলে জেহাদের অবদান বিলীন হয়ে যাবে। তাই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্র উদ্ধার করতে হবে। কারণ এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকদের বাদ দিয়ে একটি তামাশার নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় বসে আছে সরকার। এটা নির্বাচন ছিল না, ছিল আসন ভাগাভাগি। এখন যা চলছে তা গণতন্ত্র নয়। সরকার গণবিরোধী হয়ে উঠেছে। সরকারের একজন এমপি মদ্যপান করে শিশুর ওপর গুলি করেছে। এ সব লোকদের গ্রেপ্তার করা জরুরি। জেহাদ স্মৃতি পরিষদের সহ-সভাপতি নব্বইয়ের সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নব্বইয়ে ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জাগপার সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুর রহমান আসাদ, ডিএলের সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, রফিক শিকদার, জেহাদ স্মৃতি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও শহীদ জেহাদের বড় বোন চামেলী মাহমুদ বক্তব্য দেন।