রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বামপন্থি সংগঠনগুলোর আন্দোলনের মধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণের এক বক্তব্যে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। রোববার সচিবালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে পরিবেশবান্ধব, তাই সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না। আর এর জবাবে ফেসবুকে কড়া সমালোচনা করে স্টাটাস দেন অর্থনীতিবিদ আনু মোহাম্মদ।
সচিবালয়ের ওই বৈঠক শেষে জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেছিলেন, ‘যখনই বাংলাদেশ চাইবে তখনই ভারত থেকে চাহিদামতো বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।’
আর এর প্রতিক্রিয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ লেখেন, ভারতীয় পরিবেশ আইন অনুযায়ী এই প্রকল্প বেআইনি। তিনি অভিযোগ করেন, ‘গায়ের জোরে বাংলাদেশের জন্য, সারাবিশ্বের জন্য, সর্বনাশা এই কাজে নেমেছেন।’
তিনি প্রস্তাব রাখেন, এই প্রকল্প যেহেতু ভারতীয় ঋণ আর বিশেষজ্ঞদের তত্বাবধানে নির্মিত হবে তাই সেটি নিজেদের দেশে স্থাপনের।’ সেটি হলে বেশি দামেও ভারতে থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেয়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি।
আনু মোহাম্মদের স্টাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সুন্দরবনের কোন ক্ষতি হবে না। তাঁরা আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনেই সব করছেন। তাহলে জনাব, আপনাদের দেশের আইনের কথা কি মনে করবেন একটু? আপনাদের পরিবেশ আইনেই তো এই প্রকল্প বেআইনী। আপনারা ভারতের আইনভঙ্গ করে গায়ের জোরে বাংলাদেশের জন্য, সারাবিশ্বের জন্য, সর্বনাশা এই কাজে নেমেছেন।
আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ আনলে তো আপনাদের দাঁড়াবারই উপায় থাকবে না। এই প্রকল্প ধরে ঐ এলাকায় আপনাদের আরও নানা পরিকল্পনার কথা এখন বাংলাদেশের মানুষ জানতে শুরু করেছে। আমরা ভারতের সাথে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু একের পর এক বাংলাদেশের বিপর্যয় ঘটিয়ে আপনারাই বারবার, সীমান্তের মতো, বন্ধুত্বের পথে কাঁটাতারের বেড়া দিচ্ছেন।
আপনার পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী তো খুব জোর গলায় বললেন, আমাদের যতো বিদ্যুৎ দরকার ততো বিদ্যুৎ আপনারা ভারত থেকে দেবেন। তাহলে আর সুন্দরবনের ওপর এই জবরদস্তি কেনো? সুন্দরবন রক্ষার জন্য আপনাদের এই বিনাশী প্রকল্পের অনেকগুলো বিকল্পের কথা আমরা আমাদের সরকারকে বহুবার বলেছি।
তার একটি আপনাকে সরাসরি বলি: এই প্রকল্প যেহেতু আপনাদের কোম্পানির, যেহেতু আপনাদের ‘সুপারক্রিটিকাল টেকনোলজি’ এখানে ব্যবহার হবে, যেহেতু আপনাদের বিশেষজ্ঞদেরই ভূমিকা এখানে, যেহেতু ব্যবস্থাপনাও আপনাদের, যেহেতু আপনাদের ব্যাংকের থেকেই ঋণ, যেহেতু সব সিদ্ধান্তও আপনাদের তাহলে ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনে’ এই প্রকল্প আপনাদের দেশেই বাস্তবায়ন করেন, আমরা আপনাদের থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেবো। লাভ দিয়েই কিনবো, চিন্তা করবেন না। কী বলেন?
রোববার রাতে দেয়া এই স্টাটাসটি এখন পর্যন্ত দেড়শতাধিকবার শেয়ার হয়েছে। আর এতে মন্তব্য করেছেন অন্তত ১১ জন ফেসবুক ব্যবহাকারি। যাদের অনেকেই এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন।
মিজানুর রহমান নামে একজন লিখেছেন, ‘পঙ্কজ শরন সাহেব! সাহস থাকেতো চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন।’