কালিমাখা মুখ নিয়েই সংবাদ সম্মেলন করছেন সুধেন্দ্র কুলকার্নি ও খুরশিদ মাহমুদ।
পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ মাহমুদ কাসুরির বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে শিবসেনার হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন আয়োজক সুধেন্দ্র কুলকার্নি। কট্টর এ হিন্দুত্ববাদী দলটির কর্মীরা প্রকাশে সুধেন্দ্রর মুুখে কালি ঢেলে দেয়। পরে মুখে কালি নিয়েই তিনি তার অফিসে খুরশিদ মাহমুদ কাসুরিকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।
শুধু এ একটি ঘটনাই নয়। গত কয়েকদিনে ভারতে যেসব সাম্প্রদায়িক আর অসহিষ্ণুতার ঘটনা ঘটেছে, তার প্রতীক হয়ে উঠেছে উপরের ছবিটি। সুধেন্দ্রর কলিমাখা মুখের মতই উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদীরা অসম্প্রদায়িক ভারতের মুখে কালি মেখে দিয়েছেন।
এ ঘটনার পর টুইটারের ট্রেন্ডিং লিষ্টে সুধেন্দ্রর নাম একেবারে প্রথমে চলে আসে। টুইটারে ৩৬ হাজার বার তার নাম ব্যাবহার করা হয়েছে।
গত সপ্তাহখানেক ধরে ভারতে অসহিষ্ণুতা চরমে উঠেছে। বাড়ির ফ্রিজে গরুরু মাংস অছে এ গুজবে আখলাক নামের এক মুসলিমকে হত্যার মধ্য দিয়ে ঘটনার শুরু। আর সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছে মুম্বাইয়ে সুধেন্দ্রর মুখে কালি মেখে দেয়া।
আখলাককে হত্যার পর ভারতের বহু হিন্দু মুসলমান এর প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠে। প্রায় শ’খানেক লেখক এর প্রতিবাদে তাদের সম্মাননা ফিরিয়ে দেয়। প্রতিবাদ আসে অনেক প্রভাবশালী হিন্দুর তরফ থেকেও।
পাকিস্তানের গজল শিল্পীর ভারতের আসা বন্ধ করে দেয় উগ্র হিন্দুবাদীরা। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তার পূর্বনির্ধারিত গানের আসর বাতিল করতে হয় আয়োজকদের।
এসবের প্রতিবাদ করায় এক লেখককেও খুন হতে হয়েছে। মূলত এরপরই ভারতের সর্বস্তরের মুক্তমনা লেখকরা ক্ষেপে ওঠেন। তারা তাদের পদক ফিরিয়ে দেয়া শুরু করলেন। লেখকদের অভিযোগ, ভারত সরকারের মদদে উগ্র হিন্দুপন্থীরা যা করছে, তা ভারতের সার্বজনীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধূলিস্মাৎ করে দিচ্ছে।
ভারতে এসব বর্ণবাদী ও অসহিষ্ণু আচরনে মুখ খুলেছেন লেখক সালমান রুশদিও। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তীব্র কটাক্ষ করে টুইট করেছেন তিনি। টুইটারে ঘটমান এসব ঘটনাকে ইঙ্গিত করে রুশদি লিখেছেন, ’এটাই মোদির সাম্রাজ্য’। রুশদির এ টুইট হাজার হাজারবার রিটুইট হয়েছে।
অনলাইনে কিংবা অফলাইনে, গত কয়েকদিন ভারতের সবচেয়ে অলোচনা আর বিতর্কের বিষয়বস্তু ছিলো এসবই। বিশেষ করে একের পর এক ভারতের বিখ্যাত সব লেখকরা যখন তাদের সম্মাননা পদক ফিরিয়ে দিচ্ছিলেন, তখন সরকারের উপর চাপ বাড়ছিলো। এসব ঘটনায় চুপ থাকায় নরেন্দ্র মোদির সমালোচানও শুরু হয় জোরেশোরে। তীব্র সমালোচনা মুখে মোদি অবশ্য পরে মুখ খুলেছেন। কিন্তু এসবের পেছনে তার সরকারের কোন হাত নেই এবং তার বিরুদ্ধে এসব বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
ভারতের মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সারা ভারত থেকেই এ ধরনের খবর নিয়মিতই আসছিলো। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে অসহিষ্ণুতার যে তীব্রতা দেখা গেছে, তাতে একটি প্রশ্ন আবোরো সবার সামনে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। আর তা হচ্ছে, ভারত কি সত্যিই সার্বজনীন দেশ কিংবা সব ধর্মাবলম্বীদের দেশ নাকি অসহিষ্ণু ও সহিংসতার দেশ? বিশেষ করে মুসলিম জনগোষ্ঠির উপর উগ্র হিন্দুত্ববাদীর যে দৃষ্টিভঙ্গি, তাতে এ প্রশ্ন ওঠাকে স্বাভাবিকই মানছেন অনেকে।