ছোটবেলাটা এক একজনের এক এক রকম কাটে। কারো কৈশোর খুব ভাল আবার কারো বা খুব খারাপ। কারো ভাল স্বৃতি থাকে কারোবা কষ্টকর। তবে যার যেমনই কাটুক, তা কিন্তু আর ফিরে আসে না। তাই বড় হয়ে অনেকেই মনে করে ছোটবেলাটাই বুঝি ভাল ছিল। যদিও প্রতিটি বয়স মানুষকে নতুনভাবে উন্মোচিত করে জীবনবোধ শেখায়। এবার আমরা মিডিয়ার প্রবীণ তারকাদের মুখে শুনবো তাদের ছোটবেলার পূজার কিছু স্বৃতি। কে কেমন ছিলেন, বা কার কেমন কেটেছে ছোটবলোর পূজার উৎসবগুলো তা নিয়েই এবারের আয়োজন। প্রবীণদের মুখে সেইসব স্বৃতিকথা শুনেছেন প্রিয়.কমের মাহমুদ উল্লাহ।
প্রবীর মিত্র
আমি পুরান ঢাকার ছেলে। আমরা বন্ধুরা মিলে এলাকা থেকে চাঁদা তুলে সবার জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা করতাম। যেদিন বিসর্জন দেয়া হতো, সেদিন বিসর্জনের পর সব কিছু কেমন খালি খালি লাগতো। মনে হতো সব শেষ। কোথাও কিছু নেই। তখন খুব খারাপ লাগতো।
পীযুষ বন্দোপাধ্যায়
দূর্গাপূজা একটি অসম্প্রদায়িক উৎসব। আমাদের বাড়ি হচ্ছে ফরিদপুর। তখন আমাদের এলাকায় দেখতাম হিন্দু মুসলিমরা সবাই মিলে এক সাথে আনন্দ করতো। পূজা উপলক্ষে মেলা হতো, নৌকা বাইচ হতো এলাকায়। পুরো ফরিদপুর শহরটাই উৎসবে মেতে উঠতো। বৃদ্ধ নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে। ছোটকালের এইসব স্বৃতি খুব মিস করি। পূজার আগে শরৎকাল আসলেই পূজার একটা আমেজ চলে আসতো। সবার জন্য নতুন জামা জুতা কেনা হতো। বিসর্জনের দিন সবাইকে প্রণাম করতাম। প্রণাম করলে মেলার জন্য পয়সা পেতাম। বিজয়া দশমীর দিন, বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে যে আর্শিবাদ নিয়ে আসতাম সেগুলো সত্যিই অনেক মিস করি।
রামেন্দু মজুমদার
ছোটবেলাটা আমার লক্ষিপুর কেটেছে। তখন পূজার সময়টা অনেক উপভোগ করতাম। সবার কাছ থেকে নতুন জামাকাপড় পেতাম। ৭দিন সে জামা কাপড়গুলো পড়তাম। আমাদের গ্রামে পূজা হতো না, হতো পাশের গ্রামে। সেটা ছিল একটু ভেতরে। নৌকা করে সেই গ্রামে যেতাম। দুই নৌকায় অনেকে মিলে যাওয়া হতো। আমাদের কাছে গ্রামোফোন ছিল তা নিজের নৌকায় বাজানোর জন্য মাঝিরা কাড়াকাড়ি করতো। একবার পূজার সময় যাত্রাপালায় পাট গাইতে চাইলাম। তো আমাকে শুধু আমার অংশের স্ক্রিপ্ট দেয়া হলো। আমি সেই স্ক্রিপ্ট ভালমতো আত্বস্থ করে গেলাম। স্টেজে সেইমতো করে আমি প্রশ্ন করি, উত্তর দেয় আরেক জন। আসলে আমি জেনে যাইনি। আমার পাটটি কার সঙ্গে করতে হবে। এরকম মজার কিছু স্বৃতি আছে পূজা নিয়ে।
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়
পূজাটা আমার কাছে একটি সামাজিক উৎসব। এটা মূলত কৃষিজীবিদের জন্যই উৎসব। শরৎকালে যখন মাজদা পোকা, আমন ধান আক্রমন করতো, অথবা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সমস্যা যেমন ঝড়, বৃষ্টি হতো। তখন এই ধরনের অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শক্তি যোগানোর জন্য বা উদ্ধার পাওয়ার জন্য কৃষকরা মা দূর্গার আরাধনা করতো। এটাই দূর্গা পূজার ঐতিহাসিক পটভূমি। পরে এটি সার্বজনিন উৎসবে পরিণত হয়। দূর্গা পূজায় ছোটবেলাটা আমি আসলে খাবারের আকর্ষণের জন্য ভাল লাগতো। ষষ্ঠি থেকে দশমী পর্যন্ত প্রত্যেকদিন বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকতো। সেগুলো খেতাম। বিসর্জনের দিয়ে এসে কলা পাতার উল্টো দিকে দূগার নাম ১০১ লিখতে হতো পরিবার প্রধানদের কথায়। তা লিখে জলে ভাসিয়ে দিতাম। এগুলো লিখতে হতো মূলত দূর্গার নাম যেন না ভুলে যাই তার জন্য। রাতে সবাই মিলে সিদ্ধি মানে ভাং এর সরবত খেতাম। ছেলে বুড়ো সবাই খোতো। পরিবার প্রধানদেরও খেতে হতো। হয়তো তারা অল্প খেতো। কলকাতা মামার বাড়িতে ছিলাম ছোটবেলায়। তখন বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে আশির্বাদ নিতে হতো। তারা বিভন্ন ফল খেতে দিতো। পাশের গ্রামে যেতাম। শান্তিজল ছেটানো হতো সব মিলিয়ে অন্য রকম সময় ছিল। সত্যিই অনেক ভাল লাগতো। যাত্রাপালায় যাত্রা করতাম। সেই যাত্রা করার জন্য দুই মাস রিহার্সেল দিতাম। ছোটবেলায় এরকম সময়ই পার হতো। এগুলো খুব মনে পড়ে।