রাজধানীর গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে সরকারের পরিচালিত অভিযানে কমে গেছে বাস চলাচল। মিরপুরে বাস চালককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাজা ও জরিমানার জেরে অবরোধ পালন করেছে বাস শ্রমিকরা। ফলে মহাদুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীবাসী। সমস্যা সমাধানে সরকার ও মালিকপক্ষকে দ্রুত আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সোমবার গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি আবুল কালাম প্রিয়.কমকে বলেন, ‘সরকারের ভাড়া বাড়ানোর প্রথমদিকে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিতেছিল। বাড়তি ভাড়া আদায় বন্ধে বিআরটিএ, পুলিশ ও আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। এখন বাড়তি ভাড়া নেওয়া আগের তুলনায় কমে এসেছে। তিনি বলেন, ‘অভিযানের সময় চালক ও গাড়ির কাগজপত্র চেক করা হচ্ছে। ফলে ফিটনেস ছাড়া যেসব গাড়ি চলাচল করত সেগুলো এখন রাস্তায় বের করা হচ্ছে না। তাই নতুন করে বাস সংকট তৈরি হয়েছে। বিআরটিসি থেকে পর্যাপ্ত বাসের ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া সকাল ও সন্ধ্যায় একই সময়ে অফিস চালু ও ছুটি হওয়ায় চাপটা বেশি পড়ে। এসব সমস্যা সমাধানে মালিকদের ৭/৮টি টিম কাজ করছে এবং আগামী দু’এক দিনের মধ্যে এই সংকট কমে যাবে।’ বাংলাদেশ যাত্রী অধিকার কল্যাণ পরিষদের সভাপতি তুষার রহমান বলেন, ‘সরকার ভাড়া বাড়িয়েছে মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করতে। শুধু অভিযান চালিয়ে ফলপ্রসূ সমাধান আসবে না। বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে প্রতি কিলোমিটারে মাইল ফলক ও প্রতিটি বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট লাগানোর ব্যবস্থা করা উচিত।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরকার প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়িয়েছে ১০ পয়সা। অথচ যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গেটলক, সিটিং সার্ভিস নামে বিআরটিএ অনুমোদিত কোনো সার্ভিস নাই। অথচ এসব অজুহাতে দিনের পর দিন জনগণকে শোষণ করছে মালিকপক্ষ। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ায় অবরোধ করে ঢাকাকে অচল করে দিয়েছে। জনগণের সাংগঠনিকভাবে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত।’ নগর পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহউদ্দিন বলেন, ‘আইনি বিষয়গুলো দেখার পাশাপাশি জন দুর্ভোগের বিষয়গুলো সরকারকে দেখতে হবে। এ সংকট সমাধানে বিআরটিএ, ডিটিসিএ ও মালিকপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে একত্রে বসে আলোচনার মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। এছাড়া জনভোগান্তি কমা সম্ভব না।’ গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর সিএনজিচালিত বাস, মিনিবাস ও অটোরিকশার ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীসহ ঢাকার পার্শ্ববর্তী পাঁচ জেলায় চলাচলকারী বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে ১০ পয়সা হারে এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশার ভাড়া প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয় গত ১০ সেপ্টেম্বর। তবে দূরপাল্লার রুটের বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়নি। ঘোষণা অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাসের ভাড়া ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা ও মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ টাকা ৬০ পয়সা। ঢাকার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ভাড়া ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৬০ পয়সা করা হয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকে বাস ও মিনিবাসের নতুন এ ভাড়া কার্যকর হয়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে প্রথম ২ কিলোমিটারের ভাড়া ২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০ টাকা এবং পরবর্তী প্রতি কিলোমিটার ৭ টাকা ৬৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া বিরতিকালের জন্য ভাড়ার হার প্রতি মিনিটে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। আর মালিকদের জমার হার ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৯০০ টাকা করা হয়েছে। আগামী ১ নভেম্বর সিএনজিচালিত অটোরিকশর নতুন ভাড়া কার্যকর হবে। জানা গেছে, গ্যাসের দাম বাড়ানোর পর থেকেই গণপরিবহনের ভাড়া বাড়াতে চাপ দিয়ে আসছে মালিক সংগঠনগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহনের সার্বিক ব্যয় বিশ্লেষণ করে প্রতি কিলোমিটার বাসে ১২ পয়সা হারে বৃদ্ধি করে ১ টাকা ৭২ পয়সা ও মিনিবাসে ১ টাকা ৬২ পয়সা নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় বিআরটিএ। নতুন ভাড়া ঘোষণার আগে বিআরটিএ ও পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাবিত বাসের ভাড়ার ২ পয়সা কমানোর সিদ্ধাস্ত হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ অক্টোবরের আগে বিআরটিসি রুটভিত্তিক ভাড়ার নতুন চার্ট প্রস্তুত করবে। ওই চার্ট বাসে সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। তবে সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ৭ টাকা ও মিনিবাসে ৫ টাকা আগের মতোই বহাল থাকবে।