আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ গাইবান্ধার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মিথ্যা ও ভুয়া মামলার হিড়িক পড়েছে। উপাদান নেই, সঠিক তথ্য উপাত্ত নেই- এমন বিভ্রান্তিকর মামলার ¯তূপ জমেছে। বিচার প্রার্থীরাও অহেতুক হয়রানির শিকার হচ্ছে। ন্যায় বিচার মিলছে না। প্রতারণার শিকার হচ্ছে বাদি-আসামি উভয় পক্ষই। এমন অভিযোগ অসংখ্য। তার মধ্যে একটি অকাট্য প্রমাণ শনাক্ত হয়েছে বিচারাধীনে থাকা এনএসনং-৩২০/১৪ মামলার বিবরণে। ওই মামলার মূল ভিকটিম বাদিনীর নাম মোছাঃ ফারজানা ববি (২৬)। সে গাইবান্ধা সদর থানার মুন্সীপাড়া ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মোঃ রাজা মিয়ার কন্যা। গত ১৬/১২/১১ইং তারিখে এই ভিকটিম কন্যার পিত্রালয়ে তার রেজিষ্ট্রিকৃত বিবাহ হয় সাঘাটা থানাধীন চকদাতেয়া মৌজাবাসী শাহ মোঃ বেলাল হোসাইনের পুত্র শাহ মোঃ সজিব হোসাইনের সাথে ৪ লাখ ৯ হাজার ৯৯’শ টাকার দেন মোহরানা ধার্যে। এর মধ্যে মাত্র ৭ হাজার টাকার নগদ গহনা পরিশোধ বাদে অবশিষ্ট মোহরানা বাকি থাকে। এই পরিমাণ মোহরানা আদায়ের উদ্দেশ্যে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়া বাদিনী তার স্বামীর তালাকপ্রাপ্ত হয়ে বিয়ের ৩ বছর পেরিয়ে গত ০৯/০৯/১৪ইং তারিখে সংশ্লিষ্ট থানায় নারী শিশু নির্যাতন দমন ২০০০ (সংশোধিত) ২০০৩ সালের ১১ (খ) ও ৩০ ধারা আইনের বর্ণনা দিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করে। কিন্তু যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের বর্ণনায় প্রয়োজনীয় উপাদান তথা ডাক্তারী চিকিৎসার কাগজপত্র না থাকায় তা থানা কর্তৃপক্ষ গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করায় বাদিনী বিজ্ঞ নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুন্যাল আদালতে গত ১০/০৯/১৪ইং তারিখে একই অভিযোগে একটি পৃথক পিটিশন নং-৮৩/১৪ মামলা দায়ের করেন বটে। কিন্তু একই কারণে তাও নামঞ্জুর হয়। ওই মামলার বিবরণে ১ম ও ২য় ঘটনা এবং উভয় ঘটনা স্থলই নিজ পিত্রালয় উল্লেখ থাকলেও নির্যাতনের কোন আলামত সনাক্ত না থাকায় এই নামঞ্জুরের আদেশ হয়। এখানে আরও মজার ঘটনাটি হলো: উক্ত নামঞ্জুর আদেশটি পাওয়ার পরবর্তীতে একইদিন তারিখেই কথিত ভিকটিম বাদিনী গাইবান্ধার আধুনিক সদর হাসপাতালে নিজস্ব উদ্যোগে ভর্তি হয়ে ১০/০৯/১৪ থেকে ১১/০৯/১৪ইং পর্যন্ত চিকিৎসাধীনে থাকার একটি ছাড়পত্র সংগ্রহ করেন (যার রেজিষ্ট্রেশন নং ২০৬১)। উক্ত ছাড়পত্রে ঐ/ঙ চযুংরপধষ অংংধঁষঃ লিখে দিয়েছে কর্তব্যরত ডাক্তার এস. আলম। যা বিতর্কিত ও প্রশ্ন বিদ্ধ হলেও জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে বিশেষ ব্যবস্থায় কবজা করে গত ১০/০৯/১৪ইং তারিখের একটি এফিডেভিট বিজ্ঞ আদালত মোকাম বরাবরে সংগ্রহ করেন। যা উভয় প্রাশসনিক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আদালতের পেসকারের যোগসাজশে গত ০৬/১১/১৪ইং ধার্য্য তারিখে পি নং-৮৩/১৪ মামলার নথিতে সামিল দেখিয়ে শুনাটি ছাড়াই বাদিনী পক্ষে সমাজসেবা অফিসার আবু সুফিয়ান বরাবরে তদন্তের দাযিত্বভার অর্পিত হওয়ার আদেশ দেন সংশ্লিষ্ট বিচারক। উক্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা এই আদেশ পেয়ে আসামী পক্ষকে নোটিশ ছাড়াই বাদিনী পক্ষে এক তরফা ও মনগড়া একটি প্রতিবেদন পেশ করেন গত ২৭/১০/১৪ইং তারিখে। যা প্রচলিত আইনের পরিপন্থি, অশুদ্ধ, ত্র“টিপূর্ণ ও বিতর্কীত বটে। এমন দাবি করেছেন আসামী পক্ষ।
আসামীপক্ষে আরও দাবি করা হয়েছে, বাদিনী পক্ষের মানীত স্বাক্ষীগণ পরস্পরের আত্মীয়-স্বজন। নিরপেক্ষ সাক্ষী কেউ নেই। বাদিনী বড় বোন রোকসানার নৈতিক চরিত্র এক ও অভিন্ন হওয়ায় বিয়ের অল্প দিনের ব্যবধানে উক্ত সাক্ষীও তালাক প্রাপ্ত হয়। অসামাজিক কাজে জড়িত থাকায় গত ২০/০৫/১৪ইং তারিখে বাদিনীকে আসামী সজিব তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছে। তালাকের কপি পৌর মেয়র বরাবরেও প্রেরিত হয়েছে। আসামী সজিব একজন সরকারি কর্মচারী এবং বর্তমানে স্থায়ী জমিনে আছে। তার অব্যাহতি আবেদনটিও বিজ্ঞ আদালতে নিস্পত্তির অপেক্ষায় বিবেচনাধীনে থাকার কথা জানিয়েছেন আসামীপক্ষ। সূত্রের মতে, এমন তথ্য উপাত্তবিহীন ভূয়া মামলার বিভ্রান্তিতে অসংখ্য বিচার প্রার্থী নাজেহাল ও হয়রানীর স্বীকার হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আদালত পাড়ায় নিয়োজিত সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র। এই চক্রটি বাদী ও আসামী উভয়পক্ষ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধাও। এতে ন্যায় বিচার মিলছে না। খতিয়ে দেখারও কেউ নেই।