১০ হিজরির জিলকদ মাসে রাসুল [সা] সবাইকে জানিয়ে দিলেন- এবার তিনি হজ্জে যাচ্ছেন। সাহাবিরা রাসুলের [সা] সঙ্গে হজ্জে যাওয়ার আশায় প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দেন। তিনি মদিনা থেকে ২৫ জিলকদ রোজ শনিবার জোহরের পরে যাত্রা করেন। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ কাফেলায় শামিল হয় যে, দেখলে মনে হবে, এ যেনো এক মানব সমুদ্র। যাত্রার পূর্বে তিনি সকলের উদ্দেশে এহরামের ওয়াজিব ও সুন্নাতসমূহের বর্ণনা দেন। এরপর তিনি তালবিয়া পাঠ করতে করতে রওয়ানা হন।
এরপর তিনি আরজ নামক স্থানে পৌঁছে ছাউনি ফেলেন। এ সময় তার ও হজরত আবু বকরের রা. একই বাহন ছিলো। এরপর তিনি সামনে এগিয়ে আবওয়া হয়ে যান জিতুওয়া নামক স্থানে পৌঁছেন। সেদিন ছিলো যিলহজ মাসের ৪ তারিখ শনিবার, রাত সেখানে কাটান। ফজরের নামাজ তিনি সেখানেই আদায় করেন। ঐদিনই তিনি গোসলও করেন এবং মক্কার দিকে রওয়ানা হন। তিনি দিনের বেলা উচ্চ ভূমি দিয়ে মক্কায় ঢোকেন। সেখান দিয়ে তিনি হারাম শরিফে ঢোকেন। তিনি সবার আগে কাবা শরিফের দিকে ফিরলেন। হাজরে আসওয়াদ সামনাসামনি হতেই তিনি কোনোরূপ বাধা ছাড়াই তাতে চুমু দিলেন। এরপর তাওয়াফের উদ্দেশে ডান দিকে ফিরলেন। এ সময় বায়তুল্লাহ তার বাম দিকে ছিলো। এই তাওয়াফের প্রথম তিন চক্রে তিনি রম্ল করেন।
তিনি দ্রুত গতিতে চলছিলেন। ছোট ছোট কদম ফেলে চলছিলেন। চাদর এক কাঁধের ওপর ফেলে রেখেছিলেন, দ্বিতীয় কাঁধ ছিলো খালি। তিনি যখন হাজরে আসওয়াদ অতিক্রম করছিলেন তখন সেদিকে ইশারা করে আপন ছড়ির সাহায্যে ইসতিলাম করছিলেন। তাওয়াফ শেষ হতেই তিনি মাকামে ইবরাহীমের পেছনে গেলেন এবং এরপর তিনি এখানে দুরাকাত নামাজ আদায় করলেন। নামাজ শেষে তিনি আবার হাজরে আসওয়াদের কাছে গেলেন এবং এতে চুমু খেলেন। এরপর সাফা পর্বতের দিকে গিয়ে তাতে ততদূর পর্যন্ত আরোহণ করলেন যেখান থেকে বায়তুল্লাহ তার চোখে পড়ছিলো।
মক্কায় তিনি ৪/৫ দিন শনি, রবি, সোম, মঙ্গল ও বুধবার- এই কয়দিন থাকেন। বৃহস্পতিবার বেলা উঠতেই তিনি সকল মুসলমানকে নিয়ে মিনায় চলে যান। জোহর ও আসর নামাজ তিনি এখানেই আদায় করেন এবং এখানেই রাত কাটান। পরদিন সূর্য উঠতেই তিনি আরাফাতের দিকে গিয়ে সেখানে অবতরণ করলেন। বেলা ঢলে পড়তেই তিনি উটনী কাসওয়া-কে প্রস্তুত করার হুকুম দিলেন। এরপর সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে আরাফাত প্রান্তরের মাঝখানে মনযিল করেন এবং ভাষণ প্রদান করেন। এরপর বেলালকে [রা] আজান দেবার হুকুম দিলেন এবং আজান শেষে জোহরের নামাজ দুই রাকাআত এবং ঠিক সেভাবে আসরেরও দুই রাকাআতই পড়লেন। নামাজ শেষ হতেই বাহনের পিঠে উঠলেন এবং সেই উকূফের জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালেন যেখানে তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে দোয়া করেছিলেন। এখানে এসে তিনি তার উটের ওপর বসলেন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত দোয়া ও মোনাজাতে মশগুল থাকলেন।
সূর্যাস্তের পর তিনি আরাফাত থেকে রওয়ানা হলেন। গোটা রাস্তা তিনি তালবিয়া পাঠ করেছিলেন যতক্ষণ না তিনি মুযদালিফা গিয়ে পৌঁছেন এবং আজান দিতে বলেন। উট বসানো ও সামান নামানোর আগে মাগরিবের নামাজ আদায় করলেন। এরপর তিনি আরাম করবোার জন্য শুয়ে পড়লেন এবং ফজর পর্যন্ত ঘুমালেন। প্রথম ওয়াকতে তিনি ফজর আদায় করলেন। কেবলামুখী হয়ে পুবের আকাশ ফর্সা হয়ে যাওয়া পর্যন্ত দোয়া ও যিকর-এ মশগুল হন। এরপর তিনি মুযদালিফা থেকে রওয়ানা হন। তিনি ইবনে আব্বাসকে [রা] নির্দেশ দিলেন- জামরায়ে আকাবায় পাথর ছোঁড়ার জন্য সাতটি পাথর কুড়িয়ে নিতে। এভাবে তিনি মিনায় পৌঁছলেন। সেখান থেকে জামরাতুল-আকাবায় তশরিফ নেন, সূর্য ওঠার পর শয়তানের উদ্দেশে পাথর ছোঁড়েন এবং তালবিয়া পাঠ বন্ধ করেন।
এরপর মিনায় ফিরে আসেন। উপস্থিত লোকদেরকে তার থেকে হজ, কোরবানির মাসলা-মাসায়েল ও নিয়ম-কানুন জেনে নিতে বলেন। মিনায় কোরবানির জায়গায় তেষট্টিটি উট স্বহস্তে কোরবানি করেন। কোরবানি সম্পূর্ণ হতেই ক্ষৌরকার ডেকে পাঠান, মস্তক মু-ন করেন এবং মু-িত কেশ মোবারক কাছের লোকদের মধ্যে বণ্টন করে দেন। এরপর তিনি মক্কায় রওয়ানা হন। তাওয়াফ-ই যিয়ারাতও আদায় করেন। এরপর তিনি যমযম কূপের নিকট গমন করেন এবং দাঁড়িয়ে পানি পান করেন। এরপর ঐদিনই মিনায় ফিরে আসেন এবং সেখানেই রাত কাটান। পরদিন সূর্যাস্তের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন এবং সময় হতেই জামরা-ই উলা থেকে পাথর ছোঁড়া শুরু করেন।
আইয়ামে তাশরিকের তিন দিনই পাথর ছোঁড়েন। এরপর তিনি মক্কা যাত্রা করেন, শেষ রাতে বিদায়ী তাওয়াফ করেন, লোকজনকে তৈরি হওয়ার নির্দেশ দেন এবং মদিনার উদ্দেশে রওয়ানা হন। (নবিয়ে রহমত)