আমরা যখন দীর্ঘক্ষণ পা ভাঁজ করে বসি বা হাতের উপর চাপ দিয়ে কোন কাজ করি তখন অনেক সময় এমন হয় যে হাত বা পা নাড়াতে গেলে কোন অনুভূত পাওয়া যায় না বা ঝিমঝিম করে এবং সূক্ষ্ম ব্যাথা অনুভূত হয় – এই অবস্থাকেই অসাড়তা বা নাম্বনেস বলে। অনেকে বলেন হাত-পা ঝিনঝিন করছে। এটা খুবই সাধারণ সমস্যা। প্রতিটা মানুষই কোন না কোন সময়ে এই সমস্যাটির সম্মুখীন হয়ে থাকবেন।
অনেকক্ষণ যাবত একই ভাবে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকলে হাত বা পায়ের ওই স্থানের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ফলে ওই স্থানটি কিছু সময়ের জন্য অবশ হয়ে যায়। বিভিন্ন কারণে এই সমস্যাটি হয় যেমন- হাত বা পায়ে ক্রমাগত চাপ পড়লে, ঠাণ্ডা কিছু স্পর্শ করলে, স্নায়ুতে আঘাত পেলে, খুব বেশি ধূমপান বা মদ্যপান করলে বা অবসাদগ্রস্ত হলে, কাজ না করলে এবং ভিটামিন বি ১২ বা ম্যাগনেসিয়াম এর অভাব দেখা দিলে। এছাড়াও ডায়াবেটিস, মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ও থাইরয়েড গ্রন্থির নিঃসরণ কম হলেও এই সমস্যাটি হতে পারে । এই অসাড়তা যদি অল্প সময়ের জন্য হয় তাহলে চিন্তার বিষয় না, কিন্তু এটা যদি প্রায়ই হয় এবং অনেক সময় পর্যন্ত থাকে তাহলে ডাক্তারের সাথে কথা বলা প্রয়োজন।
এবার আসুন অস্বস্তিকর এই সমস্যাটি থেকে মুক্তি লাভের জন্য কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে নেই।
আপনার হাত বা পায়ের পাতায় যেখানে এই অসাড়তা হবে সেখানে গরম কিছু দিয়ে চাপ দিলে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হবে এবং ওই স্থানের পেশী ও স্নায়ু শিথিল হবে। এর জন্য একটি কাপড়ের টুকরো উষ্ণ গরম পানিতে চুবিয়ে পানি নিংড়ে নিয়ে ওই স্থানে চেপে ধরুন।এভাবে ৫ থেকে ৭ মিনিট রাখুন। যতক্ষণ পর্যন্ত অবশ ভাব না যায় ততক্ষণ এটা করতে থাকুন।
সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে যখনই হাত বা পায়ে অসাড়তা দেখা দিবে তখন ওই স্থানটিতে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি মাংসপেশির ও স্নায়ুর অসাড়তা দূর করবে। এর জন্য অলিভ অয়েল, সরিষার তেল বা নারকেল তেল গরম করে হাতের তালুতে নিয়ে অসাড় হয়ে যাওয়া স্থানটিতে বৃত্তাকারে মালিশ করতে থাকুন ৫ মিনিট যাবত । যতক্ষণ না স্বাভাবিক হচ্ছে ততক্ষণ ম্যাসাজ করতে থাকুন।
ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অক্সিজেন এর সরবরাহ স্বাভাবিক ভাবে হয়।তাই হাত – পায়ের অসাড়তা সহ আরো অনেক শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্ত থাকার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা দরকার।তাই প্রতিদিন ১৫ মিনিট সময় নিয়ে হাত ও পায়ের সাধারণ কিছু ব্যায়াম করুন। হাঁটা, সাতার কাটা, জগিং করা, সাইকেল চালানো এই ব্যায়াম গুলো করলে হাত-পায়ের অসাড়তা থেকে মুক্ত থাকবেন।
হাত পায়ের অসারতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য হোমিওপ্যাথি, এলোপ্যথি ও হার্বাল চিকিৎসা করা যায়, তবে হার্বাল চিকিৎসায় কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই এবং খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
এখন তাহলে জেনে নেই সেই সব ঘরোয়া ও ওষধি উপাদান গুলো ও তাদের ব্যবহার:
হলুদে কারকিউমিন আছে শরীরের রক্তের প্রবাহ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে যা ব্যাথা কমাতে সহায়তা করে। ১ কাপ দুধে ১ চামুচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে একটু গরম করে তার মধ্যে সামান্য মধু মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন, আপনার রক্ত চলাচল ভাল হবে। এছাড়া পানির সাথে হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে মালিশ করলে উপকার পাবেন।
দারুচিনিতে ম্যাগনেসিয়াম , পটাসিয়াম ও ভিটামিন বি থাকে। এর পুষ্টিকর উপাদান হাত ও পায়ের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী প্রতিদিন ২ থেকে ৪ গ্রাম দারুচিনি শরীরের রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে। গরম পানির মধ্যে ১ চামচ দারুচিনি মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন।
এছাড়াও হাতপায়ের অসাড়তার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ইয়োগা করুন,প্রতিদিন সকালে সূর্যের আলোতে কিছুক্ষণ হাঁটুন এবং পর্যায়ক্রমে ঠাণ্ডা ও গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।