রাজধানী শহরের আধুনিকায়ন আর যানজট সমস্যা সমাধানে সচিবালয় স্থানান্তরের কথা শোনা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরেই। গুলিস্থান এলাকায় অবস্থিত বর্তমান সচিবালয় সরিয়ে আগারগাঁওয়ে বাণিজ্য মেলার জায়গায় স্থাপনের উদ্যোগের কথা নতুনভাবে আলোচনায় এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে। এতে জাতীয় সংসদ ভবনের স্থপতি লুই আই কানের মূল নকশা বাস্তবায়নের কথাও শোনা যাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা বাস্তবায়নের কথাও আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। একইসঙ্গে লুই আই কানের নকশা ধরে সচিবালয় স্থানান্তরের বিষয়টিও মন্ত্রিসভার আলোচনায় স্থান পেয়েছে। ওই নকশার কপি বর্তমানে সংরক্ষিত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া ইউনির্ভাসিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে। আর তা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে প্রায় চার লাখ ডলার ছাড় করতে তাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। শিগগিরই মূল নকশা ফিরিয়ে এনে লুই কানের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা অপরিবর্তিত রাখতে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন করেছেন পরিবেশবাদীরা। লুই আই কানের নকশা ঠিক রাখার কথা সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হয় ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে। ঢাকার বহুল আলোচিত মেট্রোরেল প্রকল্পের রুট সংসদ ভবনের প্রাচীরের পাশ ঘেষে হওয়ায় তখন তার বিরোধীতা করেন পরিবেশবাদীরা। কিন্তু বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে ওই রুট পরিবর্তন করা থেকে বিরত থাকে সরকার। আর এখন তা বাস্তবায়নে মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। লুই আই কানের প্রাথমিক নকশা অনুযায়ী, ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা ছিলো। যার সামনে ও পেছনে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ থাকবে। চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানেও লেক থাকবে। লেকের পর থাকবে বিস্তীর্ণ সবুজ অঙ্গন। অবশিষ্ট জায়গায় গড়ে তোলা হবে সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়। সংসদ ভবনের মূল নকশা পরিবর্তন ঘটা শুরু হয় বেশ কয়েকদশক আগে। মূল নকশার বাইরে এরইমধ্যে সংসদ ভবনের জায়গায় স্থাপিত হয়েছে পেট্রোল পাম্প, মাজার, স্পীকার এবং ডেপুটি স্পীকারের বাসভবন এবং জাতীয় কবরস্থান নামে পাকা সমাধিসৌধ। মূল নকশার ২০৮ একর জায়গার মধ্যে বাণিজ্যমেলার খালি অংশ ছাড়াও তার পাশে ১০ একর জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। মূল নকশা ধরে সচিবালয় স্থানান্তর করতে হলে এখন এসব স্থাপনা সরানো হবে নাকি বিদ্যমান অবস্থায় তা সংস্কার করা হবে তার সিদ্ধান্ত এখনও নেয়নি সরকার।