কামরুলসহ চারজনের ফাঁসি ও অন্যান্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়ার রায়ে সস্তুষ্ট শিশু রাজনের বাবা আজিজুর রহমান। তবে তিনি দ্রুত রায় কার্যকর দেখতে চান। রোববার দুপুরে ছেলে রাজন হত্যা মামলার রায়ে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন তিনি। রায়ে রাজনের বাবা সন্তোষ প্রকাশ করে সরকার, আইনজীবী, সাংবাদিক ও দেশবাসীকে সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে রায় কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সবার সহযোগিতাও কামনা করেছেন। আসামিদের পরিবারের হুমকি-ধামকিতে বেশ অনিরাপদও বোধ করছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। রায়ের আগেও রাজনের বাবা আজিজুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রধান আসামি কামরুল ইসলামের স্বজনরা বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছিল। রাজন হত্যা মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে শুকরিয়া আদায় করেন রাজনের বাবার আইনজীবী শওকত চৌধুরী। রাজন হত্যার প্রধান আসামি প্রবাসী কামরুল ইসলামসহ চারজনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। ১ জনকে যাবজ্জীবন, কামরুলের ৩ ভাইকে সাত বছরের এবং দুজনকে ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দাণ্ডিত করা হয়েছে। এছাড়া অপর ৩ জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। পূর্ব জাঙ্গাইল গ্রামের মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের ছেলে ভিডিওচিত্র ধারণকারী নূর আহমদ ওরফে নূর মিয়ার (২০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি কামরুলের মেজো ভাই মুহিদ আলমের (৩২), বড়ভাই আলী হায়দার ওরফে আলী (৩৪) ও ছোটভাই পলাতক শামীম আহমদের (২০) ৭ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। এছাড়া শেখপাড়া গ্রামের মৃত আলাউদ্দিন আহমদের ছেলে দুলাল আহমদ (৩০) ও সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার বাংলাবাজার ইউনিয়নের জাহাঙ্গীরগাঁওয়ের মোস্তফা আলীর ছেলে আয়াজ আলীকে (৪৫) ১ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। মামলার অপর তিন আসামি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের দক্ষিণ কুর্শি ইসলামপুর গ্রামের মৃত মজিদ উল্লাহর ছেলে মো. ফিরোজ আলী (৫০), কুমারগাঁওয়ের (মোল্লাবাড়ী) মৃত সেলিম উল্লাহর ছেলে মো. আজমত উল্লাহ (৪২) ও হায়দরপুর গ্রামের মৃত সাহাব উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন রুহেলকে (২৫) বেকসুর খালাস দিয়েছে আদালত। হত্যাকাণ্ডের ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় সিলেট মহানগর দায়রা জজ আদালতে আলোচিত এই মামলার রায় ঘোষণা করা হল। আদালত সূত্র জানিয়েছে, রাজন হত্যা মামলার রায়ের মোট ৭৬ পৃষ্ঠা রয়েছে। তন্মধ্যে ৫৪নং পৃষ্ঠা থেকে পড়া শুরু করে পরবর্তী ২২ পৃষ্ঠা পড়ে শুনানো হয়েছে। রায়ের মোট ২ হাজার ৮১০ লাইন ছিল। এর আগে বেলা ১১টা ১৮ মিনিটে আদালতে হাজির করা হয় মামলার আসামি কামরুলসহ অন্যদের। এরপর ১১টা ২৪ মিনিটে তাদেরকে কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। সকাল ৯টা থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন এসে ভিড় করতে দেখা গেছে। মানুষের চাপ সামলাতে জজকোর্টের মূলফটক বাদে সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। নেওয়া হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। সকাল ৯টা ২৮ মিনিটে রাজনের শওকত চৌধুরী আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। সকাল ১০টা ২২মিনিটে রাজনের মা, বাবা ও তার ছোট ভাই আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। রায় পড়ার সময় রাজনের গ্রাম কুমারগাঁওয়ের অধিকাংশ মানুষ আদলত প্রাঙ্গণে আসেন। রায়ের পর তারা সকলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। গত ৮ জুলাই সিলেটের কুমারগাঁওয়ে সামিউল আলম রাজনকে চোর সাজিয়ে নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। এরপর ১৬ আগস্ট রাজন হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেট মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক সুরঞ্জিত তালুকদার ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন। আদালত ২৪ আগস্ট, সোমবার চার্জশিট আমলে নেন। পরে ২২ সেপ্টেম্বর ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে রাজন হত্যা মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত।