আরিফ উদ্দিন, গাইবান্ধা থেকেঃ সকল জল্পনা-কল্পনা ও সংশয়ের ধারাবাহিকতায় ব্যয়বহুল ব্যাপক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষে মঙ্গলবার ঐতিহ্যবাহী পলাশবাড়ী পিয়ারী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মিজানুর রহমানের ‘মা’ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় ডেপুটি স্পিকার এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়া এমপি’র চাচী ‘পিয়ারী’ বেগমের নামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন। বিশাল সুপারমার্কেটসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মধ্যে অন্যতম সম্পদশালী প্রায় ২০ কোটি টাকা মূল্যের জমিসহ অন্যতম প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান সদরের মূল প্রাণকেন্দ্র চৌমাথা মোড় ঘেষে। এডহক কমিটির দু’দফা বর্ধিত মেয়াদ শেষে প্রায় আড়াই বছর পর নির্বাচন হতে যাচ্ছে।
তৎসময় পলাশবাড়ীতে সাব-রেজিষ্ট্রার হিসেবে কর্মরত গাইবান্ধার সাঘাটা এলাকার ঘঁটিয়া গ্রামের বাসিন্দা পরবর্তীতে গাইবান্ধা শহরের সাদুল্লাপুর রোডে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী মতলুবর রহমান তার প্রিয় সহধর্মীনি পিয়ারী বেগমের নামে ৭১ বছর আগে গত ১৯৪৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৬৮ সালে প্রথম এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেদিনের সেই ক্ষুদ্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আজ এলাকার নারী শিক্ষায় অন্যতম অগ্রদূত বলে এলাকাবাসীর নিকট ব্যাপক পরিচিত। সদরের উপজেলা পরিষদ গেট থেকে থানা ভবনের প্রাচীর পর্যন্ত বিশাল আয়তনের ১ একর ৫২ শতক জমির উপর বিদ্যালয়টির অবস্থান।
ছোট্ট পরিসরে খেলার মাঠ ও ভোকেশনাল শাখাসহ দ্বিতল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অফিস রুম ছাড়াই শ্রেণী কক্ষ রয়েছে ২৩টি। ভোকেশনাল ও সাধারণ বিভাগসহ পৃথক ১৩টি শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২’শ জন। ভোকেশনাল শাখায় ৪টি পৃথক ট্রেডে ১০ এবং সাধারণ শাখায় ১৭ সহ শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা ২৭ জন। বর্তমান এমএ বারীসহ এ পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ৭ জন। বিদ্যালয়টিতে এখনো প্রায় ৮ জন শিক্ষক-কর্মচারীর পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া বিদ্যালয়টি মালিকাধীন দ্বিতল সুপার মার্কেটে বরাদ্দকৃত দোকান রয়েছে ৫৮টি। নির্বাচনের ফলাফল সামনে রেখে ম্যানেজিং কমিটির ৪টি পদের বিপরীতে ৮ জনসহ ১৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শিক্ষক, সাংবাদিক, শ্রমিকনেতা ও রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন তারা হলেন যথাক্রমে, আব্দুর রশিদ ভট্টু, আমিরুল ইসলাম, আহসান হাবিব, একলাছুর রহমান, মজিদ মিয়া, রেজানুর রহমান ডিপটি, শাহজাহান প্রধান, সুরুজ হক লিটন। লিফলেট, স্ট্রিকার, পোস্টারে-পোস্টারে, ছেয়ে গেছে গোটা এলাকা। সাব-রেজিষ্টার মতলুবর রহমান ছিলেন অতি নম্র-ভদ্র-দয়ালু-দানশীল সাদা মনের মানুষ। জীবদ্দশায় স্ত্রী পিয়ারা বেগম তাগাদা করতেন পলাশবাড়ীতে একটি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। পিয়ারী বেগম মারা যাবার পর মানুষিক ভাবে মর্মাহত নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সহায়তায় তিনি বিদ্যালয়টির গোড়া পত্তন করেন। বিদ্যালয়টি শুধু জেলা-উপজেলায় নয় গোটা দেশেই বেশ পরিচিত। তবে বিগত ৭১ বছরে যতটা না উন্নয়ন হয়েছে শিক্ষক নিয়োগসহ নানা ভাবে তার চেয়ে বেশি হয়েছে দূর্ণীতি-অনিয়ম-স্বেচ্চারিতা। এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্যানেল স্পিকার গাইবান্ধা-জয়পুরহাট সংরক্ষিত মহিলা আসন-০৪ এর এমপি এ্যাড. উম্মে কুলছুম স্মৃতি, জাতীয় পার্টি (এ) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার শিল্পী ও জেলা তথ্য অফিসার লাকী বেগম। এ ছাড়াও স্বনামধন্য দেশের অভিজাত বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, প্রকৌশলী ও চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণী পেশার অনেকেই এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা আজ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ে কর্মরত রয়েছেন।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও নির্বাচনের প্রিজাইডিং অফিসার মো. সিহাব উদ্দিন স্বাক্ষরিত তফসিল মোতাবেক সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী অভিভাবক ছাড়া মোট ১১৬৫জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। বিদ্যালয়টি নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় গত ২০১৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর পরবর্তীতে ২০১৪ সালে ১০ মার্চ পর্যন্ত এডহক কমিটির দায়িত্ব পালন করেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার। শেষে ডেপুটি স্পিকার তার ভাগ্নে জেলা জিপি এ্যাড. হাফিজুর রহমান ফারুককে বিদ্যালয়টির এডহক কমিটির সভাপতি মনোনয়নে ডিও লেটার দেন। অপরদিকে, স্থানীয় এমপি ডা. ইউনুস আলী সরকার উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা এনামুল হক মকবুলের নামে পৃথক ডিও লেটার ইস্যু করেন। পরবর্তীতে ডেপুটি স্পিকারের সম্মানার্থে এনামুল হক মকবুলের ডিও লেটার প্রত্যাহার করা হয়। মাননীয় স্পিকারের স্বাক্ষরিত পরপর দু’দফায় প্রদত্ত ডিও লেটার অনুযায়ী এ্যাড. হাফিজুর রহমান ফারুক ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত মেয়াদ রয়েছে বলে জানা যায়। প্রার্থীদের দলীয় ছাড়াও সামাজিক ভাবে রয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। জয়-পরাজয় থাকবেই। তবুও নির্বাচনের ফলাফল স্ব-স্ব অবস্থান থেকে প্রার্থীদের মর্যাদার লড়াইসহ আত্মসম্মানের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। ভোট ভোটারের অধিক সংখ্যক ভোটারই অধিক সচেতন। বাণিজ্যিক ভাবে অধিক আয়লব্ধ বিদ্যালয়টি এলাকার সকলেরই নিকট আলাদা গুরুত্ব বহন করে। প্রার্থীরা জানায়, দলীয় বিভেদ ও মতপার্থক্য থাকতেই পারে। বিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নে সবকিছু ভুলে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকব। এডহক কমিটির সভাপতি এ্যাড. হাফিজুর রহমান ফারুক, প্রধান শিক্ষক এমএ বারী ও প্রিজাইডিং অফিসার মো. সিহাব উদ্দিনসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষসহ সার্বিক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। জয় লাভের বিষয়ে সব প্রার্থীই শতভাগ আশাবাদি। প্রার্থী, সচেতন ভোটারসহ উৎসুকদের দৃষ্টি এখন শেষ ফলাফলের দিকে।