বিহার নির্বাচন যখন দখল করে রেখেছে ভারতের পত্রিকাগুলোর শিরোনাম, তখন কেরালায় পাওয়া গেল ভিন্ন এক গল্প। গত সপ্তাহে কেরালায় অনুষ্ঠিত হলো পৌরসভা নির্বাচন। এ নির্বাচনে রাজেশ কুমার নামে এক ভোটার বিজেপি দলীয় প্রার্থী নিজের আপন মায়ের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। এর কারণও নিজের ফেসবুক পোস্টে ব্যখ্যা করেছেন রাজেশ। পেশায় পুলিশ কনস্টেবল রাজেশ নিজের ব্যখ্যায় বলেন, আমি গর্বিত যে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা আমাকে আমার দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন থামাতে পারেনি। প্রায় ১০ হাজার মানুষ তার ওই পোস্টে লাইক দিয়েছে। শেয়ার করেছে ৪৭০০ জন। তার ওই ফেসবুক পোস্টের অনূদিত সংস্করণ ছাপা হয়েছে এনডিটিভি’র ওয়েবসাইটে। সে পোস্টে রাজেশ লিখেছেন, আমার মা কেরালার থামারাক্কুলাম পঞ্চায়েতের ৬ নং ওয়ার্ডের একজন বিজেপি দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। তিনি নির্বাচনে হেরেছেন। তার বিপক্ষে তার সন্তানের দেয়া ভোটও এ জন্য কিছুটা দায়ী। আমি এ পোস্টটি অনেক কষ্টে লিখছি। ৫৬ ইঞ্চি ছাতির যেকোনো পুরুষের চেয়ে আমি অনেক বেশি জাতীয়তাবাদী। আমি আমার ১২৬ কোটি জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশটিকে নিয়ে চিন্তিত।
তিনি লিখেছেন, মোদির (গুজরাটের সাবেক মূখ্যমন্ত্রী ও ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) ১৫ বছরের শাসনের পর, প্রাথমিক শিক্ষা সূচকে সারাদেশের মধ্যে ২৮ তম স্থান অর্জন করে গুজরাট। গুজরাটিদের একটি বড় অংশ এখনও প্রকাশ্যে মলমূত্র ত্যাগ করে। গুজরাট রাজ্যে কোনো পরিচ্ছন্ন শহর নেই। মোহন ভগবত (আরএসএস প্রধান) উচ্চবর্ণের হিন্দুদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই হলো তলোয়ার। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের জন্য সংরক্ষিত কোটা শিগগিরই প্রত্যাহার করা হবে। পুরোনো দিনের দাসত্ব আবার ফিরে আসবে।’ একই সময়ে মোদি এখানকার নিম্নবর্ণের এঝাবাদের বলেন, ‘তলোয়ার রাখুন। আপনাদের জন্য কোটা অব্যাহত থাকবে।’ তারা ভেবেছে, মূর্খতাপূর্ণ আজগুবি হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখিয়ে ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নির্মূল করে উচ্চ ও নিম্ন বর্ণের হিন্দুদের একসাথ করতে পারবে তারা।
দেশের প্রতি একটি আহ্বান রেখে নিজের পোস্ট শেষ করেন রাজেশ। তিনি বলেন, আমাদের প্রজন্মকে এমন এক পরবর্তী প্রজন্মের জন্য লড়াই করতে হবে যেখানে পুরুষ, নারী ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বৈষম্য ছাড়া বসবাস করতে পারে। ভারতের মতো প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রকে ধর্মীয় উগ্রবাদের কাছ থেকে সুরক্ষিত করতে হলে, আমাদের অনেক আত্ম-বিসর্জন করতে হবে।
রাজেশ তাই নিজের মার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েই আত্ম-বিসর্জনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তিনি আসলে নিজের মায়ের বিরুদ্ধে ভোট দেননি। দিয়েছেন বিজেপির বিরুদ্ধে, ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে। ওই নির্বাচনে কম্যুনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার নেতৃত্বাধীন লেফট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট জয়লাভ করে।